২৩০-২২০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই অধিযুগের শুরুতে হুরোনিয়ান বরফযুগের কারণে পৃথিবীতে শৈত-প্রবাহ প্রবল হয়ে উঠেছিল।
আবহাওয়া ছিল শীতল ও শুষ্ক। হুরোনিয়ান বরফযুগের
প্রভাবে এই যুগের এই বরফযুগের প্রভাবে ভূত্বকের উপরিভাগ সঙ্কুচিত হয়ে ফাটলের
সৃষ্টি করেছিল। এই সূত্রে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছিল। প্রথম দিকে
একটি দুটি অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটলেও পরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশাল বিশাল লাভার স্রোত বরফের স্তরগুলোকে গলিয়ে
ফেলা শুরু করে। একই সাথে আবার বাতাসে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
-সহ নানা ধরনের গ্যাস জমতে থাকে।
সব মিলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত
বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে ২২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বরফযুগটি শেষ দশায় চলে আসে।
২২০-২১০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
এই সময়ের ভিতরে
হুরোনিয়ান বরফযুগের
পরিসমাপ্তি ঘটে। ২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশের
ভাঙন শুরু হয়। এই সময়ে
লাউরেনশিয়া
নেনা মহাদেশ-এর সাথে যুক্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য এই সময়
নেনা'র সাথে যুক্ত ছিল
বাল্টিক ঢাল-ভূখণ্ড ও উত্তর এন্টার্ক্টিকা।
২০০.০৫ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ: ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাত, ভূকম্পন ইত্যাদির কারণে ভূস্তরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে নানা ধরনের ক্র্যাটন ও মহাকাশীয় ঢাল মিলিত হয়ে কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশের সূচনা হয়। এই সময় উর মহা-মহাদেশ কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে।
২০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ: পশ্চিম আফ্রিকান ক্র্যাটন এবং দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বাঞ্চল নিয়ে তৈরি হয়েছিল আটলান্টিকা মহাদেশ।
জীবজগৎ
ও তার ক্রমবিবর্তন
২২০-২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
হুরোনিয়ান বরফযুগের
পরিসমাপ্তিতে সাগরে পানি বেশ উষ্ণ হয়ে উঠেছিল এবং অনুকূল পরিবেশে তৈরি হয়
সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ -যুক্ত
জীব।
পশ্চিম-আফ্রিকার গ্যাবনে কিছু সু-প্রাণকেন্দ্রীয় কোষ -যুক্ত
উদ্ভিদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, ২০০.১
কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা গ্যাবন-সংলগ্ন
জলাভূমিতে বাস করতো। এই জীবাশ্মগুলো ফ্রান্সেভিল্লিয়ান গ্রুপ
জীবাশ্ম (Francevillian
Group Fossil)
বলা হয়। প্রায় ১ সেন্টিমিটার আকারের সুসংঘটিত কোষ বিন্যাসে এদের দেহ গঠিত।
দলবদ্ধভাবে এদের আকার ছিল প্রায় ১২ সেন্টিমিটার। এদের শরীর ছিল চ্যাপটা
থালার মতো। এদের প্রান্তদেশ ছিল অনেকটা পেঁয়াজের খোসার মতো। এদের দেহ
কেন্দ্রাভিমুখী আঁশ দ্বারা যুক্ত ছিল। এরা অক্সিজেনযুক্ত পানির স্তরে বসবাস
করতো।
এছাড়া সু-প্রাণকেন্দ্রিক
কোষযুক্ত আদি শৈবাল,
গ্রাইপেনিয়া
এই সময়ের ভিতর সাগরের জলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে এই অধিযুগে
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে
অক্সিজেনের
পরিমাণ বৃদ্ধিতে এরা সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।
উল্লিখিত নমুনা সমূহের বিচারে বলা যায়,
২০০ কোটি ১০ লক্ষ
বৎসর আগে জীবজগতে বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে,
বিবর্তনের প্রাথমিক স্তরে
নিউক্লিয়াস-যুক্ত
কোষের
সূত্রে জীবজগতের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এদের কোষে ছিল
মাইটোকন্ড্রিয়া,
গোল্গি
বস্তু। এই বিচারে ধারণা করা হয়,
২৫০-২০০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে
মাইটোকন্ড্রিয়া
এবং
গোল্গি
বস্তু
যুক্ত হয়েছিল।
একক জীব কণিকা হিসেবে সমন্বয়ে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। এই ধরনের জীব-কণিকাগুলোর
কিছু কিছু প্রজাতি পারস্পরিক স্বার্থে একটি সাথে সহাবস্থানে থাকতো। এদের একটি জীবকণিকা
অক্সিজেন থেকে
চিনি
জাতীয় জৈবিক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারতো এবং এই
চিনি অপর জীবকণিকাকে প্রদান করতো। অপর জীবকণিকা এই চিনি গ্রহণ করে, তা থেকে শক্তি উৎপাদন করতো এবং তা উভয় জীবকণিকা ভাগাভাগি করে নিত।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleoproterozoic
http://essayweb.net/geology/timeline/paleoproterozoic.shtml
http://www.britannica.com/EBchecked/topic/175886/Paleoproterozoic-Era