প্যালেপ্রোটারোজোয়িক যুগ
(Paleoproterozoic
era)
(২৫০
থেকে ১৬০ কোটি পূর্বাব্দ)
Greek: παλαιός, palaios, "old
পৃথিবীর
ক্রমবিবর্তনের কাল বিভাজন
-এর একটি ধাপ। এটি
ক্যাম্ব্রীয়ান-পূর্ব মহাকাল-এর তৃতীয় কাল
প্রোটেরোজোইক-এর
প্রথম যুগ। এর ব্যাপ্তী
২৫০
থেকে ১৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
বিজ্ঞানীরা
এই যুগকে মোট চারটি অধিযুগে বিভাজিত করা হয়।
এই যুগের কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জী
নিম্নোক্ত
চারটি অধিযুগে আলোচনা করা হয়েছে।
এই অধিযুগগুলো হলো—
১. সিডেরিয়ান অধিযুগ (Siderian period): ২৫০-২৩০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
২. হৃয়াসিয়ান অধিযুগ (Rhyacian period): ২৩০-২০০.৫ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
৩. ওরোসিরিয়ান অধিযুগ (Orosirian period): ২০০.৫-১৮০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
৪.স্টাথেরিয়ান অধিযুগ (Statherian period): ১৮০-১৬০ কোটি-খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
এরপর শুরু হয় প্রোটেরোজোইক কাল-এর দ্বিতীয় যুগ। এর নাম মেসোপ্রোটারোজোয়িক (Mesoproterozoic)। এর ব্যাপ্তী ছিল ১৬০ থেকে ১০০ কোটি পূর্বাব্দ পর্যন্ত। প্যালেপ্রোটারোজোয়িক যুগকে বিজ্ঞানীরা মোট চারটি অধিযুগে বিভাজিত করা হয়। এই চারটি অধিযুগ হলো-
১. সিডেরিয়ান অধিযুগ (Siderian period): ২৫০-২৩০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
২. হৃয়াসিয়ান অধিযুগ (Rhyacian period): ২৩০-২০০.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
৩. ওরোসিরিয়ান অধিযুগ (Orosirian period): ২০০.৫-১৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
৪.স্টাথেরিয়ান অধিযুগ (Statherian period): ১৮০-১৬০ কোটি-খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
সিডেরিয়ান অধিযুগ
(Siderian
period):
২৫০-২৩০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
এই অধিযুগের শুরুর দিকে সাগরতলে প্রচুর পরিমাণ লৌহ অধঃক্ষেপ জমা পড়েছিল। এই কারণে
এই কালের প্রথম সময়সীমাকে বলা হয়
সিডেরিয়ান অধিযুগ।
উল্লেখ্য,
গ্রিক
sideros
শব্দের অর্থ হলো—
লৌহ। এই বিচারে বাংলায় একে বলা যায় 'লৌহ অধিযুগ'।
এই অধিযুগে একমাত্র মহামহাদেশ কেনোরল্যান্ড সুস্থির দশায়
ছিল। এছাড়া কিছু নতুন ক্র্যাটন এবং
ঢাল-ভূখণ্ডের উদ্ভব হয়েছিল। জীবজগতে আবির্ভাব হয়েছিল সায়ানোব্যাক্টেরিয়া এবং
এদেরচ জৈবিক ক্রিয়ার সূত্রে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। এর ফলে পৃথিবীর
তাপমাত্রা বহুলাংশে কমে গিয়েছিল।
এই যুগের কালানুক্রমিক ঘটনাবলি
ধীরে ধীরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল শীতল হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই সূত্রে পৃথিবী জুড়ে শৈতপ্রবাহ শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর বিশাল জলভাণ্ডারগুলো জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল। একই সাথে ব্যাপক তুষারপাতের মতো ঘটনা ঘটেছিল। ফলে পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো বরফযুগের আবির্ভাব ঘটে। এই বরফযুগকে বলা হয়—হুরোনিয়ান বরফযুগ। উল্লেখ্য উত্তর আমেরিকার হুরোন হ্রদ থেকে সংগৃহীত নমুনা থেকে এই বরফযুগের সন্ধান করা সম্ভব হয়েছিল। এই কারণে এই বরফযুগের নামকরণ করা হয়েছিল হুরোনিয়ান বরফ যুগ। এই বরফযুগটি এই মহা-মহাদেশকে বিভাজিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। এই বরফযুগটি হৃয়াসিয়ান অধিযুগের ২১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এই বরফশীতল পরিবেশের ভিতরে বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার গাওলের ক্র্যাটন তৈরি হয়েছিল।
হৃয়াসিয়ান অধিযুগে (Rhyacian
period):
২৩০-২০০.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
প্যালেপ্রোটারোজোয়িক যুগ-এর
দ্বিতীয় অধিযুগ।
গ্রিক
Ρυαξ (rhyax)
শব্দের অর্থ হলো—
লাভা স্রোত।
এই অধিযুগে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে, পৃথিবীর
উপরিভাগ লাভাস্রোতে নিমজ্জিত হয়েছিল। এই কারণে এই যুগের নামকরণ হয়েছে
Rhyacian period
(লাভস্রোতের অধিযুগ)। ২৪০ কোটি বৎসর আগে
সিডেরিয়ান অধিযুগে-
হুরোনিয়ান বরফযুগ
শুরু
হয়েছিল। এই অধিযুগের শুরুতে তা অব্যাহত ছিল। এই অধিযুগের
২২০ কোটি বৎসর আগে বরফযুগটি শেষ দশায় চলে আসে এবং ২১০ কোটি বৎসর আগে বরফযুগটি শেষ
হয়ে যায়।
২১০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কেনোরল্যান্ড ভাঙন শুরু হয়। তখন লাউরেনশিয়া ক্র্যাটন
নেনা ক্ষুদ্র মহা-মহাদেশের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য এই সময় নেনার সাথে যুক্ত
ছিল বাল্টিক ও উত্তর এন্টার্ক্টিকা।
এই যুগের কালানুক্রমিক ঘটনাবলি
ওরোসিরিয়ান অধিযুগ (Orosirian
period):
২০০.৫-১৮০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
হৃয়াসিয়ান অধিযুগের
শেষে পৃথিবী এসে পৌঁছায়
ওরোসিরিয়ান অধিযুগ (Orosirian period)-এ।
এর সময়সীমা ২০০.৫ -১৮০
কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ ।
গ্রিক
oroseira
এর অর্থ হলো—পার্বত্য
অঞ্চল। এই অর্থানুসারে এই অধিযুগের নামকরণ করা হয়েছে।
এই
অধিযুগের শুরুতে
একটি বড়
আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। এর ফলে পৃথিবীর গায়ে বিরাট
ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকায়
এর চিহ্ন পাওয়া যায়। এই ক্ষতটির
নাম ভ্রেডেফোর্ট (Vredefort)
খাত।
গ্রহাণুর আঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে বায়ুমণ্ডল অস্বাভাবিক রকমের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ২১০ কোটি খ্রিষ্টাব্দে হুরোনিয়ান বরফযুগ -এর সমাপ্তির পর শীতলতা যাও ছিল, এই গ্রহাণুর আঘতজনীত কারণে তা মিলিয়ে গিয়েছিল। একই সাথে সেকালের কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ -এর পুনর্বিন্যাসকে ত্বরান্বিত করেছিল। ১৮০ কোটি বৎসরের দিকে এই মহা-মহাদেশটি পুনর্বিন্যাসিত হয়ে নতুন রূপ লাভ করে। এই মহাদেশের নামকরণ করা হয়েছে— কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ (Columbia supercontinent)।
এই যুগের কালানুক্রমিক ঘটনাবলি
স্টাথেরিয়ান অধিযুগ (Statherian
period):
১৮০-১৬০ কোটি-খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ।
গ্রিক
statheros
অর্থ হলো
—
সুদৃঢ়।
মূলত
পূর্বর্তী
ওরোসিরিয়ান অধিযুগের
শেষে এসে পৃথিবীর ভূত্বক অপেক্ষাকৃত সুদৃঢ় দশায় পৌঁছেছিল।
তাই এই অধিযুগের এরূপ
নামকরণ করা হয়েছিল
স্টাথেরিয়ান
অধিযুগ।
এর বাংলা নাম হতে পারে 'সুদৃঢ় অধিযুগ'। এই অধিযুগের সময়সীমা ধরা হয় ১৮০- ১৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই
অধিযুগের শুরুর আগেই কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ
ভাঙনের পথে ছিল। এই অধিযুগে
এসে তা সম্পন্ন হয়।
এই
অধিযুগের
শুরুতে একটি
বড় আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। এর ফলে পৃথিবীর গায়ে বিরাট
ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান
দক্ষিণ আফ্রিকায় এর চিহ্ন পাওয়া যায়। এই গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্ট খাদটির নাম
ভ্রেডেফোর্ট (Vredefort)।
এই গ্রহাণুর আঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপকভাবে।
সেই সাথে বায়ুমণ্ডল অস্বাভাবিক রকমের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এর ফলে
হুরোনিয়ান
বরফ যুগ-এর
শীতলতা যাও ছিল, তাও মিলিয়ে গিয়েছিল। এই সময়
কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ
-এর
পুনর্বিন্যাসিত হয়ে নতুন রূপ লাভ করেছিল।
১৮০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে কেনোরল্যান্ড মহা-মহাদেশ পুনর্বিন্যাসিত হয়ে নতুন রূপ লাভ করে। এই
মহাদেশের নামকরণ করা হয়েছে—
কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ (Columbia
supercontinent)।
ভূতত্ত্ববিদ
J.J.W. Rogers
এবং
M. Santosh
এর মতে, এর অস্তিত্ব ছিল ১৮০
কোটি থেকে ১৫০ কোটি বৎসরের ভিতরে। ধারণা করা হয়,
এই মহাদেশটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ছিল ১২,৯০০ কিলোমিটার (৮০০০ মাইল) এবং পাশাপাশি
ছিল ৪৮০০ কিলোমিটার (৩০০০ মিটার)। এই সময় ভারতে পূর্ব-উপকূল উত্তর আমেরিকার
পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যুক্ত ছিল। আর অন্যদিকে
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা যুক্ত
ছিল। দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল ব্রাজিলকে ঘিরে আবর্তিত অবস্থায় ছিল।
এই সময় উল্কাপাতের কারণে কানাডার ওন্টারিও খাদের সৃষ্টি হয়েছিল।
১৭০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিক লাউরেনশিয়া এবং বাল্টিকা যুক্ত হয়। পরে এর সাথে যুক্ত হয়েছিল সাইবেরিয়া।
কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশের সৃষ্টিদশার ভিতর দিয়ে পালেপ্রোটারোজোয়িক যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর শুরু হয় প্রোটেরোজোয়িক কালের অন্তর্গত মেসোপ্রোটোজোয়িক যুগ। এই যুগের প্রথম অধিযুগ- ক্যালিম্মিয়ান (Calymmian period)। এর সময়সীমা ১৬০-১৪০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। গ্রিক calymma শব্দের অর্থ হলো —আবরণ। এই অধিযুগে নানা ধরনের অধঃক্ষেপ এবং আগ্নেয় উপাদান দ্বারা পৃথিবীর ভূত্বক আবৃত হয়ে গিয়েছিল বলে, এই যুগের নামকরণ করা হয়েছিল (Calymmian period) আবরিত অধিযুগ।
১৬০-১৫৫
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই
অধিযুগের শুরুতে কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ প্রায়
অক্ষত ছিল। তখন
এই মহাদেশটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ছিল ১২,৯০০ কিলোমিটার (৮০০০
মাইল) এবং পাশাপাশি ছিল ৪৮০০ কিলোমিটার (৩০০০ মিটার)। এই সময় ভারতে পূর্ব-উপকূল
উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যুক্ত ছিল।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার
সাথে কানাডা যুক্ত ছিল। দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল
ব্রাজিলকে ঘিরে আবর্তিত অবস্থায় ছিল।
১৫৫-১৫০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশের সূক্ষ্মবিভাজন দেখা
দেয় এবং ১৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই বিভাজন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
১৫০-১৪০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশের
বিভাজান আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এছাড়া এ অধিযুগে
নানা
ধরনের অধঃক্ষেপ এবং আগ্নেয় উপাদান দ্বারা পৃথিবীর ভূত্বক আবৃত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু
হয়েছিল।
ক্যালিম্মিয়ান অধিযুগের পরে
শুরু হয়
এক্টাসিয়ান অধিযুগ
(Ectasian
period)।
এর সমায়সীমা ১৪০
থেকে ১২০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
গ্রিক
ectasis
শব্দের অর্থ হলো
—প্রসারণ।
এই অর্থে এর বাংলা হতে পারে- 'প্রসারণ অধিযুগ'।
মূলত
আগের
ক্যালিম্মিয়ান অধিযুগ-এ
নানা ধরনের অধঃক্ষেপ এবং আগ্নেয়
উপাদান দ্বারা পৃথিবীর ভূত্বক আবৃত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই অধিযুগে সে
প্রক্রিয়াটি অব্যাহত হয়েছিল। আগের অধিযুগের প্রক্রিয়াগত প্রসারণের কারণে এর
নামকরণ করা হয়েছে এক্টাসিয়ান
অধিযুগ।
এই অধিযুগের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল
কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ
বিভাজন প্রক্রিয়া।
সুমেরু অঞ্চলের ক্রেটন,
বাল্টিকা এবং পূর্ব এ্যান্টার্কটিকা মিলে তৈরি হয়েছিল নেনা
(Nena)
নামের এই মহা-মহাদেশ। তবে জগতে
এই অধিযুগে প্রথম যৌন-আচরণযুক্ত
প্রজনন শুরু হয়েছিল।
এক্টাসিয়ান অধিযুগের পরে শুরু হয়
স্টেনিয়ান অধিযুগ (Stenian
period)।
এর সময়সীমা
১২০-১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
গ্রিক
stenos
শব্দের অর্থ হলো
—সংক্ষিপ্ত
বা সরু।
এর
বাংলা
হতে
পারে
'সংক্ষিপ্ত
অধিযুগ'।
এই অধিযুগের স্থায়ীত্বকাল বেশ অল্প সময় ছিল বলে,
এর নামকরণ করা হয়েছিল
বা সংক্ষিপ্ত অধিযুগ।
এই
অধিযুগে
নানা ধরনের অধঃক্ষেপ ও আগ্নেয় উপাদান দিয়ে তৈরি
হয়েছিল নানা ধরনের শিলা । পরে এই শিলা ও অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে ভূস্তর তৈরি
হয়েছিল।
১২০-১১০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই
সময়ে নেনা, উর এবং আরও কিছু স্থলভাগ যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় রোডিনা
মহা-মহাদেশ সৃষ্টি হয়। এই সময় সাইবেরিয়া রোডিনার অংশ
হিসেবে ছিল। এই
সময় সর্ব উত্তরে ছিল ভারত এবং অস্ট্রেলিয় পাত এবং ভারতীয় পাতের গা ঘেঁষে ছিল
মাদাগাস্কার। এর নিচে ছিল পূর্ব এন্টার্ক্টিকা। এই চারটি ভূখণ্ড মিলে
প্রাক্-গোণ্ড্ওয়ানা তৈরি হয়েছিল। এরপর বিষুবরেখা বরাবর ছিল কালাহারি, লাউরেনশিয়া
(কানাডিয়ান ঢাল-ভূখণ্ড)। বিষুব রেখার উত্তরে ছিল সাইবেরিয়া অঞ্চল। আর দক্ষিণে ছিল
কঙ্গো, আমাজোনিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা এবং
বাল্টিকা।
১১০-১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ের ভিতরে
রোডিনা মহামহাদেশের ভাঙন
শুরু হয়েছিল।
এর মধ্য
দিয়ে নতুন মহাদেশের সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছিল।
এই
প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে
প্রোটেরোজোয়িক কালের দ্বিতীয় যুগের সমাপ্তি
ঘটে। এরপর শুরু হয় প্রোটেজোয়িক কালের শেষ যুগ-
নিওপ্রোটারোজোয়িক।
১০০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
এই যুগের সূচনা হয়েছিল। আর শেষ
হয়েছিল ৫৪ কোটি ২০ লক্ষ
খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে।
গ্রিক 'Neo' = নব্য এবং
Proterozoic =
আদি পূর্বের জীব। এই অর্থে
Neoproterozoic শব্দের অর্থ দাঁড়ায়
'নব্য আদিমজীব'।
নিওপ্রোটারোজোয়িক
যুগের তিনটি অধিযুগের মধ্যে- এর প্রথম অধিযুগ হলো টোনিয়ান (Tonian
period)। গ্রিক
Tonian
নামটি গ্রিক Tonas
শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হলো- বিস্তার। এই যুগের স্থলভূমির বিস্তার ঘটেছিল,
এই ধারণা থেকে এই অধিযুগের নামকরণ করা হয়েছিল টোনিয়ান। এর বাংলা অর্থ হতে পারে-
'বিস্তার অধিযুগ'।
এই অধিযুগের সূচনা
হয়েছিল ১০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। আর শেষ হয়েছিল ৭২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।
৮৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের শীতল পরিবেশে এই রোডিনা মহা-মহাদেশের সুস্থির দশায় ছিল। এর পর থেকে ধীরে ধীরে মহা-মহাদেশটির ভাঙন শুরু হয়।
৭৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ে রোডিনা মহা-মহাদেশের ভাঙন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। এই সময়ে ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের প্রথম অান্ত-বরফযুগ স্টুর্টিয়ান (Sturtian glaciation) শুরু হয়।
নিওপ্রোটারোজোয়িক
যুগের দ্বিতীয় অধিযুগ হলো-
ক্রাইয়োজেনিয়ান অধিযুগ
(Cryogenian period)।
এর সময়সীমা
৭২-৬৩.৫কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
গ্রিক শব্দ 'Cryo'
(শীতল) এবং 'Genesis'
(জন্ম)-এর সমন্বয়ে
Cryogenian
নামটি গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই অধিযুগের
শুরু হয়েছিল ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগ দিয়ে।
এই সময়ে পৃথিবী একটি বরফের গোলকে পরিণত হয়েছিল। পৃথিবীর এই দশাকে বিবেচনা করে এরূপ
নামকরণ করা হয়েছে।
৭০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ে ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের প্রথম আন্ত-বরফযুগ স্টুর্টিয়ান (Sturtian glaciation) শেষ হয়ে যায়।
৬৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই সময়ে ক্রায়োজেনিয়ান বরফযুগের দ্বিতীয় আন্ত-বরফযুগ মারিনোয়ান (Marinoan glaciation) শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন মারিনোয়ান আন্ত-বরফযুগ (Marinoan glaciation)।
৬৩ কোটি ৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: ধারাবাহিক বরফযুগের কারণে পুরো পৃথিবী একটি বরফের গোলকে পরিণত হয়েছিল। এই অধিযুগের শেষে ক্রাইয়োজেনিয়ান অধিযুগের সমাপ্তি ঘটে। এবং পৃথিবীতে আবার উষ্ণ আবহাওয়ায় ফিরে আসে।
নিওপ্রোটারোজোয়িক
যুগের তৃতীয় ও শেষ অধিযুগ হলো-
এডিয়াকারান অধিযুগ
(Cryogenian period)।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে রুশ বিজ্ঞানী বরিশ সোকোলোভ এই অধিযুগের
নামকরণ করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টব্দের শুরুর
দিকে রুশ বিজ্ঞানী বরিশ সোকোলোভ এই অধিযুগের নামকরণ করেন।
Ediacaran
নামটি 'Ediacaran Biota'
(জীবাশ্ম নমুনা) থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল। এর সময়সীমা ছিল
Ediacaran
নামটি
'Ediacaran Biota'
থেকে এসেছে।
৬৩.৫-৫৪.১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
৬৩.৫-৬৩.২ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই অধিযুগে রোডিনা মহা-মহাদেশ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়েছিল। এই মহা-মহাদেশটি প্রাথমকিভাবে তিনটি ভাগে বিভাজিত হয়েছিল। এই ভাগ তিনটি
হলো — প্রোটো লাউরাসিয়া
(Proto-Laurasia), প্রোটো-গণ্ডোওয়ানা
(Proto-Gondwana) এবং
ক্ষুদ্রাকার কঙ্গো ক্রেটন। প্রোটো লাউরাসিয়া দক্ষিণ মেরুর দিকে ঘুরে যায়।
পক্ষান্তরে এর উল্টোদিকে ঘুরে প্রোটো-গণ্ডোওয়ানা।
৫৪.১ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নিওপ্রোটারোজোয়িক যুগের সমাপ্তি হয়। একই সাথে প্রাক্-ক্যাম্বিয়ান মহাকালেরও পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর শুরু হয় ক্যাম্ব্রিয়ান মহাকাল।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleoproterozoic
http://essayweb.net/geology/timeline/paleoproterozoic.shtml
http://www.britannica.com/EBchecked/topic/175886/Paleoproterozoic-Era