ক্যালিম্মিয়ান অধিযুগ
(Calymmian
period)
১৬০-১৪০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
মেসোপ্রোটারোজোয়িক যুগ-এর
প্রথম অধিযুগ যুগ।
গ্রিক
calymma
শব্দের অর্থ হলো
—আবরণ।
এই অধিযুগে নানা ধরনের অধঃক্ষেপ এবং আগ্নেয় উপাদান দ্বারা পৃথিবীর ভূত্বক
আবৃত হয়ে গিয়েছিল বলে, এই যুগের নামকরণ করা হয়েছিল (Calymmian
period) আবরিত
অধিযুগ।
এই অধিযুগে প্রচুর অধঃক্ষেপের দ্বারা ভূত্বকের পুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বৃষ্টিরপাতের ফলে ভূভাগের উপরের
পতিত অধঃক্ষেপের একটি বড় অংশ সাগরতলে জমা হয়েছিল। ফলে সাগরতলের উচ্চতা বৃদ্ধি
পেয়েছিল। সব মিলিয়ে
প্রাচীন মহাদেশীয় পাতগুলোর
সম্প্রসারণ ঘটেছিল। এছাড়া মহাদেশীয় পাতের ভূভাগের প্রান্তীয় অঞ্চলে অগভীর
জলমগ্ন ভূমির সৃষ্টি হয়েছিল।
এসূত্রে বহু সমুদ্রসৈকতের সৃষ্টি হয়েছিল এই সময়ে। মহাদেশীয় বিভাজন এবং সংযোজনের ফলে
বহু দ্বীপ তৈরি হয়েছিল আগের অধিযুগগুলোতে। এসব দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জের একটি বড় অংশ
পতিত অধঃক্ষেপের দ্বারা ভরাট হয়ে, মূলভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে
মহাদেশীয় ভূভাগের বিস্তার ঘটেছিল। এই সব প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে কলাম্বিয়া
মহামহাদেশের আয়তন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রূপ পেয়েছিল।
-
১৬০-১৫৫
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: এই অধিযুগের শুরুতে
কলাম্বিয়া মহা-মহাদেশ প্রায় অক্ষত ছিল।
তখন এই
মহাদেশটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ছিল ১২,৯০০ কিলোমিটার (৮০০০ মাইল) এবং পাশাপাশি
ছিল ৪৮০০ কিলোমিটার (৩০০০ মিটার)। এই সময় ভারতে পূর্ব-উপকূল উত্তর আমেরিকার
পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যুক্ত ছিল। বাল্টিকা অঞ্চলের
দক্ষিণাঞ্চল সাইবেরিয়ার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সাথে যুক্ত হয়েছিল।
অন্যদিকে
অস্ট্রেলিয়ার সাথে কানাডা
যুক্ত ছিল।
দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল ব্রাজিলকে ঘিরে আবর্তিত অবস্থায় ছিল।
-
১৫৫-১৫০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
কলাম্বিয়া
মহা-মহাদেশ সূক্ষ্মবিভাজন দেখা দেয়। এবং ১৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে এই বিভাজন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া এ
অধিযুগে নানা ধরনের অধঃক্ষেপ এবং আগ্নেয় উপাদান দ্বারা পৃথিবীর
ভূত্বক আবৃত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
জীবজগতের ক্রমবিবর্তনের ধারা
এই যুগের শুরুর দিকে এককোষী
জীবকণিকার বিকাশ ঘটেছিল সাগর জলে। একই সাথে
নিউক্লয়াসযুক্ত জটিল কোষযুক্ত
জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল এই সময়ে। এদের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিল বহু ইউক্যারিয়েটিক এককোষী
প্রজাতি। এই সময়ে
সাগরজলে ভাসমান
ইউক্যারিয়োটা স্বক্ষেত্রের
জীবকুলের জন্য চলাচল, পরিবেশগত সঙ্কেত গ্রহণ এবং
খাদ্যকে আকর্ষণ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই সূত্রে এদের দেহে ক্ষণপদ তৈরির ক্ষমতা
সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে ক্ষণপদের সংখ্যার উপর
ভিত্তি করে প্রাণিকুলকে ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগ দুটি হলো-
-
বাইকোন্টা:
এদের ক্ষণপদ ছিল দুটি। এই থাক থেকে পরবর্তী সময়ে উদ্ভব হয়েছিল- এসএআর
সুপারগ্রুপ,
আর্কিপ্লাস্টিডা,
হাক্রোবিয়া থাকের প্রজাতিসমূহ। এই থাকের জীবকূল ১৬০- কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
ভিতরে বিভাজিত হয়ে তিনটি থাকের উদ্ভব হয়েছিল। এই থাকগুলো হলো-
-
আর্কিপ্লাস্টিডা :
আবরি্ভাব কাল ১৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই থাক বিভাজিত হয়ে চারটি বিভাগ
সৃষ্টি হয়েছিল। এগুলো হলো-
- রোডোফাইটা বিভাগ: এই বিভাগ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল শৈবাল পর্বের জীব।
- গ্লায়ায়ুকোফাইটা বিভাগ: এই বিভাগ থেকে মিষ্টি পানির অতিক্ষুদ্র শৈবালের
সৃষ্টি হয়েছিল।
- ভিরিডিপ্লান্টি থাক: এই থাক থেকে উৎপন্ন হয়েছিল সবুজ শৈবাল এবং সবুজ
উদ্ভিদ।
- পিকোজোয়া পর্ব: এই পর্ব থেকে উৎপন্ন হয়েছিল ক্ষুদ্রাকার সামুদ্রিক এককোষী
জীবকণিকা।
- ক্রিপ্টিস্টা থাক: এই থাক থেকে উৎপন্ন হয়েছিল শৈবাল-সদৃশ্য এককোষী
জীবকণিকা।
হাক্রোবিয়া: আবরি্ভাব
কাল ১৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এসএআর সুপারগ্রুপ:
আবরি্ভাব কাল ৭৩ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
পোডিয়াটা:
এদের একটি ক্ষণপদী জীব ছাড়াও ক্ষণপদহীন জীব ছিল।
এই সময়ে আবিরভূত হয়েছিল
Tappania plana নামক
ইউক্যারিয়েটিক স্বক্ষেত্রের প্রজাতি। উল্লেখ্য এই প্রজাতির জীবাশ্মের বয়স ধরা হয়েছ
১৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এই অবস্থার ভিতর
দিয়ে
ক্যালিম্মিয়ান অধিযুগের সমাপ্তি হয় ১৪০
কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এরপর শুরু হয়
এক্টাসিয়ান অধিযুগ।
এই অধিযুগের সময়সীমা ছিল ১৪০ কোটি
থেকে ১২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
সূত্র :