পিয়াসেনজিয়ান আমল
Piacenzian age
৩৬-২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
 

এটি প্লিয়োসিন অন্তঃযুগের যুগের দ্বিতীয় এবং শেষ আমল। ৩৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই আমলের শুরু হয়েছিল। আর শেষ হয়েছিল ২৫ লক্ষ ৮০ হাজারখ্রিষ্টপূর্বাব্দ । ইতালির সিসিলির অন্তর্গত Piacenza  শহরের নামানুসারে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী Karl Mayer-Eymar এই আমলের নামকরণ করেন। এই আমলের পরে শুরু হয়েছিল কোয়াটার্নারি অধিযুগ

ম্যামোথের ক্রমবিবর্তন

গণ্ডারের ক্রমবিবর্তন

অস্ট্রালোপিথেকাস গণের বিবর্তন
এই আমলের পৃথিবীর আবহাওয়া বেশ গরম ও আর্দ্র ছিল। সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এই সময় আবাহওয়ার পরিবর্তনের ফলে আফ্রিকার ইথিওপিয়া অঞ্চলের গভীর অরণ্য হাল্কা হয়ে গিয়েছিল। ফলে অনেক স্থানে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল। আর এ সব ফাঁকা জায়গা পূরণ করেছিল ঘাস। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল 'সাভানা' অঞ্চল। এই নতুন পরিবেশে অস্ট্রালোপিথেকাস গণের বিবর্তন ঘটেছিল। এই সূত্রে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে অস্ট্রালোপিথেকাস গণ থেকে ৫টি পৃথক প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। এগুলো হলো-

কেনিয়ান্থ্রোপাস গণের উদ্ভব ও বিলুপ্তি
হোমিনিনি গণ থেকে ৩৫-৩২ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে উদ্ভব হয়েছিল কেনিয়ান্থ্রোপাস নামক নূতন একটি গণ। এই গণের
Kenyanthropus platyops প্রজাতি কেনিয়ার তুর্কানা হ্রদের কাছে বসবাস করতো। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোনিয়া হার্মার্ড এবং জেসন লুইস কেনিয়ার তুর্কানা হ্রদের কাছে কিছু পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতির সন্ধান পান। গবেষকরা এই ক্ষেত্রের নামকরণ করেন Lomekwi3 । এই নতুন ক্ষেত্রটিতে পাওয়া যায় এমন কিছু যন্ত্র, যেগুলো পাথর ঘষে তৈরি করা হয়েছিল। এরূপ নানা ধরনের ১৩০টি নমুনা পাওয়ার পর সোনিয়া হার্মার দাবি করেন যে, এগুলো হোমোনিনি গোষ্ঠীর কোনো প্রজাতির সৃষ্টি। ইথিওপিয়ার গনার নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত পাথরের যন্ত্রের চেয়ে এগুলো ছিল বেশ ভারি। এখানে প্রাপ্ত যন্ত্রের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে একটি ধাতুর তৈরি তাওয়া। এর ওজন প্রায় ১২ কেজি।

এই গণের জীবন-যাপনে প্রথম সৃজনশীল কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এর আগের প্রজাতিগুলো, জন্মগ্তসূত্রে প্রাপ্ত সহজাত ক্ষমতায় যা করতে পারতো, তার বাইরে কিছু ভাবাটা প্রয়োজন মনে করে নি। কেনিয়ান্থ্রোপাস গণের এই প্রজাতিটি, এর বাইরে বেরিয়ে এসে পাথরকে ঘষে ঘষে যন্ত্র তৈরি করেছিল। মটি খনন, হিংস্র জন্তু থেকে আক্রমণ প্রতিহতকরণ, মাংস কর্তন বা থেঁতলানোর জন্য এরা এই পাথুরে যন্ত্র ব্যবহার করতো। গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করতো। সেকালের পরিবেশে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য এই টুকু ক্ষমতাই হয়তো পর্যাপ্ত ছিল না। তাই ৩২ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

হোমো গণের আদিম প্রজাতি হোমো হ্যাবিলিস -এর আবির্ভাব
অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মতে এই আমলের ২৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে হোমিনিনি গোষ্ঠী থেকে হোমো গণের আবির্ভাব হয়েছিল। জীবাশ্ম আবিষ্কার এবং পর্যাবেক্ষণের বিচারে এই গণের আদিমতম প্রজাতি হলো- হোমো হ্যাবিলিস (Homo habilis) ধারণা করা হয়, ্রায় লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আফ্রিকাতে এই প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল তবে হোমিনিনি গোষ্ঠীর কোন বিশেষ শাখা বিবর্তিত হয়ে, হোমো গণের উদ্ভব হয়েছিল তা জানা সম্ভব হয় নি।

হস্ত-কুঠার

হোমো হ্যাবিলিস  প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় আফ্রিকা মহাদেশের তান্জানিয়ার ওল্ডুভাই জর্জ (Olduvai Gorge) অঞ্চলে। এদের দ্বারাই সর্বপ্রাচীন নিম্নপ্রস্তর-যুগ সভ্যতার সূচনা করেছিল।  এরাই প্রথম পাথর দিয়ে হস্ত-কুঠার নির্মাণ করেছিল। এই কারণে ওল্ডুভিয়ান সভ্যতাকে মানবসভ্যতার সুতিকাগার হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার সূত্রে এদেরকে বলা হয় প্রথম মানবগোষ্ঠী। হোমো হ্যাবিলিসদের বুদ্ধির বিকাশ উন্নততর হয়ে উঠতে পারে নি। বিজ্ঞানীর এর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন, করোটির মাপের সূত্রে। হোমো স্যাপিয়েন্সের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষে করোটির গড় মান ১২৬০.৭৩ ঘনসেন্টিমিটার এবং নারীর করোটির মাপ ১১৩১.১ ঘনসেন্টিমিটার। অন্যদিকে হোমো হ্যাবিলিসদের করোটির মাপ ছিল ৬০০ ঘনসেন্টিমিটার নিচে। মস্তিষ্কের পরিমাণগত পার্থক্য থেকে ধারণা করা যায় যে, বুদ্ধিমত্তার বিচারে হোমো হ্যাবিলিসরা হোমো স্যাপিয়েন্সদের সমকক্ষ ছিল না।

এই আমলের শেষে শুরু হয়েছিল গেলাসিয়ান আমল (২৫.৮-১৮.৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)।


সূত্র: