অস্ট্রেলোপিথেকাস আফ্রিকানাস
Australopithecus africanus
অস্ট্রালোপিথেকাস গণের একটি প্রজাতি। প্রায় ৩৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পূর্ব আফ্রিকার এই প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছিল।
আর বিলুপ্তকাল ২১ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
অনেক গবেষকই মনে করেন যে-
অস্ট্রলোপিথেকাস আফারেনসিস-
এর বিবর্তনের সূত্রে এই প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছিল। আবার এটাও ধারণা করা হয় যে,
এই বিবর্তনটি আধুনিক মানুষের বিবর্তনের মূলধারার সাথে সম্পর্ক রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে মানুষের সাথে
অস্ট্রলোপিথেকাস আফারেনসিস-এর চেয়ে
এই প্রজাতির মিল অনেক বেশি। এদের চেহারা ছিল অনেকটা মানুষের মতো। এবং মস্তিষ্কের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আফ্রিকার
Northern Lime Company,
দক্ষিণ আফ্রিকার টাউং
(Taung)
অঞ্চলের চুনা পাথর উত্তোলনের সময়
M. de Bruyn
নামক একজন শ্রমিক একটি মাথার খুলি খুঁজে পান। পরে খুলিটি
University of Witwatersrand -
এর জীববিজ্ঞানী
Raymond Dart-
এর কাছে পাঠানো হয়। এরপর তিনি জীবাশ্মের গণ নির্ধারণ করেন অস্ট্রেলোপিথেকাস।
একই সাথে এবং জীবাশ্মের প্রজাতিগত নাম দেন
- Australopithecus africanus
। পরে আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলেও এর বেশ কিছু জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।
নিচে এই জীবাশ্মগুলোর পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
টাউং নমুনা (১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ)
প্রথম নমুনা: টাউং শিশু
১৯২৪ সালের ২৪ অক্টোবর তারিখে
M. de Bruyn
দক্ষিণ আফ্রিকার টাউঙ্গ
(Taung)
অঞ্চলে প্রথম একটি আদি-মানবের জীবাশ্ম পান। পরে
University of Witwatersrand
জীববিজ্ঞানী রেমন্ড ডার্ট
(Raymond Dart)-
এর কাছে এই জীবাশ্মটি পাঠানো হয়।
রেমন্ড ডার্ট জীবাশ্মটি পরীক্ষা করে এর বয়স নির্ধারণ করেন ২৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এই জীবাশ্মটি পরীক্ষা করেই ডার্ট, এর গণের নাম দেন অস্ট্রেলোপিথেকাস। আর আবিষ্কৃত ফসিলের প্রজাতিটির নাম দেন-
Australopithecus africanus
।
এটি ছিল ৩-৪ বৎসরের একটি শিশুর মাথার খুলি। এই কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে টাউঙ্গ শিশু
(Taung child)
।
এর মাথার খুলির মাপ ছিল ৪০৫ সিসি। ধারণা করা হয়, পরিণত বয়সে এর মাথার মাপ দাঁড়াতো ৪৫০ সিসি।
প্রাপ্ত জীবাশ্মটি ছিল অত্যন্ত জরাজীর্ণ। পরে সংস্কার করা হয়। নিচে তিনটি চিত্রে এর নমুনা দেখানো হলো। এর ভিতরে প্রথমটি জীবাশ্মের আদিরূপ এবং পরের দুটি সংস্কারকৃত রূপ।
টাউঙ্গ শিশুর আদি জীবাশ্ম
|
সংস্কারকৃত টাউঙ্গ শিশুর
সম্মুখভাগ |
|
|
টাউঙ্গ শিশুর পার্শ্ব-সম্মুখভাগ |
|
স্টের্কফোন্টেন
(Sterkfontein)
নমুনা
STS 5 (Mrs. Ples)
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার স্টের্কফোন্টেন
(Sterkfontein)
অঞ্চলে এই প্রজাতির কিছু জীবাশ্ম আবিস্কার করেন রবার্ট ব্রুম
Robert Broom)
এবং জন টি রবিনসন
(T. Robinson)
।
প্রথম দিকে ব্রুম ধারণা করেছিলেন যে, এটি একটি মধ্যবয়সী নারীর জীবাশ্ম।
এই কারণে তিনি এর নাম দিয়েছিলেন-
Mrs. Ples
।
বর্তমানে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এটি পুরুষের জীবাশ্ম হিসাবে স্বীকার করে নিলেও,
এর নাম
Mrs. Ples
-ই রয়ে গেছে।
এর নমুনা প্রতীক
STS 5
।
এই জীবাশ্মগুলোর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এর খুলির পরিমাপ ৪৮৫ সিসি।
স্টের্কফোন্টেন
(Sterkfontein)
নমুনা:
Sts71
১৯৪৭-৪৯ সালের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্টের্কফোন্টেন অঞ্চলে
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান পরিচালনাকালে,
Australopithecus africanus
-এর এই নমুনাটি
আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর তারিখে এই জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেন
Robert Broom
এবং
John T. Robinson
।
|
Sts 71 |
জীবাশ্মটির আনুমানিক বয়স ধরা হয়েছে ২৫ লক্ষ্ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এদের মাথার খুলির মাপ ছিল ৪২৮ সিসি।
এই কারণে ধারণা করা হয়
STS 5 (Mrs. Ples)
-
থেকে এদের বুদ্ধিমত্তা কম ছিল।
পাশের চিত্রে
Sts 71
-এর নমুনা
দেখানো হলো।
গোড়ার দিকে
এই নমুনাটিও একটি মেয়ের জীবাশ্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
১৯৭২ সালের
Witwatersrand
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জন ওয়ালেস
(John Wallace)
এই প্রজাতির অপর একটি নমুনা
(STS 36)
এর সাথে
তুলনা করে,
প্রমাণ করেন যে,
এই জীবাশ্মটি ছিল পুরুষের।
মাকাপান্সগাট
(Makapansgat)
এই জীবাশ্মগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাকাপান্সগাট অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
তবে আবিষ্কারের তারিখ ও আবিষ্কারকের পরিচয় পাওয়া যায় নাই।
এই জীবাশ্মটির বয়স ধরা হয়েছে ৩৩ থেকে ৩০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় জীবাশ্মটি উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে এর সংস্কার করা হয়।
তবে মাকাপান্সগাট অঞ্চলে আবিষ্কৃত অন্যান্য জীবাশ্মগুলোর বিচারে এদের কিছু চোয়ালের নমুনা প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, এই জীবাশ্মগুলোর বয়সও ধরা হয়েছে-৩৩ থেকে ৩০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
এদের চোয়ালের গঠন যথার্থ আধুনিক মানুষ বা গরিলার মতো ছিল না।
সংস্কারকৃত
নমুনার পার্শ্ব-সম্মুখভাগ |
সংস্কারকৃত নমুনার সম্মুখভাগ |
মাকাপান্সগাট
চোয়ালের নমুনা |
|
|
|