Mona Lisa
মোনা লিসা

 

Mona Lisa, ১৫০৩-১৫০৬

ছবির নাম :
শিল্পী :
লিওনার্দো দ্যা ভিন্সি
প্রকৃতি : পোপলারের উপর তৈলচিত্র।
অঙ্কনের সময় : ১৫০৩-১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দ, সম্ভবত ১৫১৭ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন।
আকার : ৭৭ সেমি
×৩ সেমি (৩১ ইঞ্চি× ২১ ইঞ্চি)।
সংরক্ষণ : প্যারিসের লুভর যাদুঘর।

এই ছবির নারী ছিলেন ফ্রান্সিসকো ডেল জিওকোন্ডা'র স্ত্রী। এঁর নাম ছিল লিসা ঘেরাডিনি (Lisa Gherardini)। জিওকোন্ডো'র স্ত্রী হিসেব এই ছবিটিকে লা জিওকোন্ডো (La Gioconda) নামেও পরিচিত। এর অন্য নাম লা জোকোন্ডে (La Joconde)। তবে ছবিটি 'মোনা লিসা' সারাবিশ্বে পরিচিত। এটি লিওনার্দো নিজে তাঁর সেরা কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

১৫০৩  খ্রিষ্টাব্দে লিওনার্দো এই ছবিটি আঁকা শুরু করেন। পোপলার কাঠের উপরে তিনি তৈলরঙ ব্যবহার করে এই ছবিটি অঙ্কন করেন। ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই ছবিটি নিয়ে কাজ করে প্রাথমিকভাবে শেষ করেন। ১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের রাজা ফ্রান্সিস (প্রথম), এ্মবোজ- তাঁর দুর্গের নিকটবর্তী ক্লোস লুস-এ কাজ করার জন্য লিওনার্দোকে আমন্ত্রণ জানান। এই সময় লিওনার্দোর কাছে এই ছবিটি ছিল। রাজা এই ছবিটি তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ করেন। রাজার সাথে ফ্রান্সে আসার পথে এই ছবিটিকে লিওনার্দো নিপুণ করে তোলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। ফ্রান্সে আসার পরও তিনি এই কাজটি করে যান। ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই ছবির উপর কাজ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

মোনালিসা দীর্ঘদিন সংরক্ষিত ছিল ফ্রান্সের
Palace of Fontainebleau-এ। পরে ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই নিয়ে ছবিটি তাঁর Palace of Versailles এ নিয়ে যান। ছবিটি  ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবিটি সর্বসাধারণের কাছে প্রদর্শনের জন্য প্যারিসের লুভর (Louvre) যাদুঘরে রাখা হয়। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগষ্ট এই ছবিটি লুভর যাদুঘর থেকে চুরি হয়ে যায়। এরপর ‌এই ছবি চোরকে ধরার জন্য সারা সপ্তাহ লুভর যাদুঘর বন্ধ রাখা হয়।

এই ছবি চুরির জন্য নানা জনকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ছবিটির কোনো হদিসই পাওয়া যায় নি। এই ছবিটি চুরি করেছিলেন ভিনসেঞ্জো পেরুগ্গিয়া (Vincenzo Peruggia) নামক যাদুঘরের একজন কর্মচারী। প্রতিদিনের মতো যাদুঘর বন্ধ হওয়ার পর, এই কর্মচারী তাঁর দীর্ঘ কোর্টের আড়াল করে যাদুঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। মূলত পেরুগ্গিয়া ছিলেন ইতালির নাগরিক। তিনি ভেবেছিলেন, যেহেতু লিওনার্দো ইতালির নাগরিক ছিলেন। সুতরাং এই ছবিটি ইতালিতে থাকা উচিৎ। ছবিটি চুরির পর, পেরুগ্গিয়া নিজের বাসায় দুই বৎসর রেখে দেন। এরপর ফ্লোরেন্সের উফ্ফিজি গ্যালারির ডিরেক্টরের কাছে এই ছবিটি বিক্রয়ের চেষ্টা করার সময় তিনি ধরা পড়ে যান। এরপর এই ছবিটি ইতালিতে প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ছবিটি পুনরায় লুভের যাদুঘরে ছবিটি ফিরে আসে।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবির উপর এ্যাসিড নিক্ষেপ করলে এর অংশবিশেষ ক্ষিতগ্রস্থ হয়। পরে তা মেরামত করা হয়। এই বৎসরের ৩০ ডিসেম্বর এই ছবির উপর উগো নামের এক বলিভিয়ান পাথর নিক্ষেপ করে। এর ফলে ছবির নারী মূর্তির বাম কনুইয়ের কাছে রঙ চটে যায়। পরে এই অংশ মেরামত করে আগের অবস্থায় আনা হয়। এরপর ই ছবিটিকে পরে বুলেট-নিরোধক কাঁচের ভিতরে রাখার ব্যবস্থা করা আছে।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে টোকিও জাতীয় যাদুঘরে এই ছবিটি প্রদর্শনের সময় জনৈকা খোঁড়া মহিলা ছবিটির লাল স্প্রে রঙ নিক্ষেপ করে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ আগষ্ট তারিখে রাশিয়ার একজন  মহিলা ফরাসি নাগরিকত্ব অস্বীকার করে এই ছবির উপর চায়ের কাপ ছুঁড়ে মারে।

এই ছবিতে ব্যবহৃত 'লিসা ঘেরাডিনি'র ডান দিকের কাঁধ একটু উঁচু। এরই সাথে সামঞ্জস্য রেখে লিওনার্দো পিছনের প্রেক্ষাপটকেও নিচু করে এঁকেছেন। প্রেক্ষাপটের ভূমি উঁচু নিচু। অনেকেই মনে করেন এই ছবিতে রয়েছে নারী এবং পুরুষ সত্তার প্রকাশ। কিন্তু নারী সত্তা প্রবলভাবে প্রকাশিত।

মিশরীয় উর্বরতার দেবতা আমন (
Amon)। পক্ষান্তরে উর্বরতার দেবী হিসেবে পূজিতা হতেন আইসিস। এর প্রতীকী নাম ছিল লিসা (Lisa)। উভয়ের নাম একত্রিত করলে দাঁড়ায় AMONLISAঅনেকে মনে করেন, এই ছবির নাম গ্রহণ করা হয়েছে AMONLISA থেকে লিওনার্দো AMON LISA>MONA LISA নামটি গ্রহণ করেছিলেন। কথিত আছে, লিওনার্দো ছিলেন ফ্রান্সের 'প্রায়োরি অফ সিওন' এর সদস্য। ১৫১০ থেকে ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই সংগঠনের গ্রান্ড মাষ্টার ছিলেন। তিনি এই ছবি এবং The Last Supper -এরভিতরেই তাঁর সংগঠনের সঙ্কেত রেখে গিয়েছিলেন।


সূত্র :
১. লিওনার্দো দা ভিঞ্চি
মোবাশ্বের আলী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। বৈশাখ ১৪১৩
২.
http://en.wikipedia.org/wiki/Leonardo_da_Vinci