ইটা কারিনা
ইংরেজি : eta carinae

ক্যারিনা নক্ষত্রমণ্ডলের একটি নক্ষত্র বিশেষ। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৭৫০০ আলোকবর্ষ। আদিতে এর ভর ছিল ভর সূর্যের ১৫০ গুণ। বর্তমানে (২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ) এর ভর সূর্যের ১২০ গুণ। উপরিতলের তাপমাত্রা ১৫০০০ কেলভিন।

বিষুবাংশ (RA) : ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ০৩.৫৯১ সেকেন্ড
বিষুবলম্ব
(Dec) : -৫৯ ডিগ্রি ৪১ মিনিট ০৪.২৬ সেকেন্ড।

এই নক্ষত্রটির অস্বাভাবিক আচরণের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে পরম কৌতুহলের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে এডমন্ড হ্যালি প্রথম এই নক্ষত্রটিকে তালিকাভুক্ত করেন। ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দে এটি চতুর্থ মাত্রা উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিল। তারপর এটি ক্রমে ক্রমে নিষ্প্রভ হয়ে যায়। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের এর উজ্জ্বলতা পুনরায় বৃদ্ধি পায়।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে জন হার্শেল জানান যে, এই নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হার্শেলের এই পর্যবেক্ষণকে যথার্থই ছিল। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বিজ্ঞানীরা দেখলেন এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়ে প্রথম মাত্রায় পৌঁছেছে। ১৮৩৮

 খ্রিষ্টাব্দ থেকে নক্ষত্রটি প্রথম মাত্রা থেকে উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। কিন্তু ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এর উজ্জ্বলতা -০.৮মাত্রায় পৌঁছায়। মূলত এই সময় নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। এই সময় উজ্জ্বলতার দিক থেকে এই নক্ষত্রটি সমগ্র মহাকাশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। উল্লেখ্য তখন উজ্জ্বলতার বিচারে  লুব্ধক ছিল প্রথম। তারপর দীর্ঘদিন ধরে নক্ষত্রটি এইভাবে উজ্জ্বল থাকলেও ক্রমে ক্রমে উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলেছিল। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা সপ্তম মাত্রায় পৌঁছায়। ফলে তখন আর একে খালি চোখে দেখা যায় নি। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়ে ষষ্ঠ মাত্রায় পৌঁছায়। তবে পরবর্তী কয়েক বৎসরে এই উজ্জ্বলতা কমে অষ্টম মাত্রায় পৌঁছেছিল। এরপর এই উজ্জ্বলতা অনেকদিন ধরে অষ্টম মাত্রায় স্থির অবস্থায় ছিল। তবে এই নক্ষত্রটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অব্যাহত ছিল। এই সূত্রে আর্জেন্টিনার কর্ডোভা পর্যবেক্ষণ মন্দির 'এনরিক গাভিওলা' ঘোষণা দেন যে, ইটা কারিনা মূলত একটি নীহারিকা পরিবেষ্টিত নক্ষত্র। এবং ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এই নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। সে কারণে সে সময়ে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই সূত্রে ইটা কারিনাকে ঘিরে থেকে মেঘমালার নামকরণ করা হয় ইটা কারিনা নীহারিকা।

হাবল টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবি

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পুনরায় এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে থেকে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে এই উজ্জ্বলতা প্রায় ১ মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে হাবল টেলিস্কোপ থেকে এই নক্ষত্রটির উপর বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো। এই পর্যবেক্ষণের দ্বারা এর রহস্যের কিছুটা আন্দাজ করা গিয়েছিল। মূলত এই নক্ষত্রের বাইরের দিকে বিশালাকার ঘূর্ণায়মান মেঘের আস্তরণ রয়েছে, তা ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের বিস্ফোরণের পর নক্ষত্রের বস্তুপুঞ্জ বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। বিস্ফোরণের পরে সৃষ্ট গ্যাসপুঞ্জের বাইরের দিকে চলে আসার গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল।

প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন এই গ্যাসীয় পিণ্ডগুলো হয়তো ফাঁপা। কিন্তু পরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলো এগুলোর ভিতরে রয়েছে প্রচুর মহাকাশীয় ধূলিকণা। এই চলমান মেঘের রাশিকে পৃথিবী থেকে দুটি প্রধান পিণ্ড হিসেব দেখা যায়। এই পিণ্ডদুটিকে অনেকে ফুসফুসের দুটি ফুলানো বেলুনের মতো অংশ হিসেবে উদাহরণ দেওয়া হয়। এই পিণ্ড দুটি নক্ষত্রটির দুই মেরু থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলেই ধারণা করা হয়। উৎক্ষিপ্ত গ্যাসীয় অংশ এইভাবে পিণ্ডাকার লাভের পিছনে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নক্ষত্রটির প্রচণ্ড চৌম্বক ক্ষেত্র, তীব্র ঘুর্ণন গতি, অন্যান্য নক্ষত্রের প্রভাব ইত্যাদি। বিস্ফোরণের পর থেকে এর বিষুব অঞ্চল থেকে বস্তু সরাসরি উৎক্ষিপ্ত না হয়ে দুই মেরু থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়ে চলেছে।

এই গ্যাসীয় পিণ্ডে ঘূর্ণায়মান কিছু পাখার মতো অংশ লক্ষ্য করা যায়। এতে তিনটি রহস্যময় ফুটকি দেখা যায়। এই ফুটকি তিনটি প্রতি ঘণ্টায় ১,০০,০০০ মাইল বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। এছাড়া এই মেঘে রয়েছে কিছু ক্ষুদ্রাকার বস্তুপুঞ্জ। এগুলো নক্ষত্রটি থেকে ৩০ হাজার মাইল বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই মেঘে নর্দান জেট নামক একধরনের পদার্থ শনাক্ত করেছেন। এই পদার্থও তীব্রবেগে ছুটে চলেছে।

এই নক্ষত্র থেকে প্রতি বৎসর ০.০০০৩ সৌরভর কমে যাচ্ছে। এইভাবে ভর কমতে থাকলে। ৩০০ বৎসর পরে এই নক্ষত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে।


সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাক এসোসিয়েশন

http://en.wikipedia.org/wiki/

contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff 2nd edition
http://www.noao.edu/image_gallery/html/im0061.html