পেশী কলা
প্রাণীদেহের প্রধান চার প্রকার
কলা
একটি হলো- পেশী কলা (Muscular
tissue)।
এই কলা সংকোচন ও
প্রসারণের উপযুক্ত অসংখ্য তন্তু নিয়ে গঠিত। এর কোষগুলোতে নিউক্লিয়াস আছে।
কোষগুলো সারকোলেমা
(Sarcolemma) নামক পর্দা দিয়ে আবৃত
থাকে। কোষগুলো আকৃতিতে সুতার ন্যায় লম্বা হয়ে থাকে। কোষগুলো প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি ও
২৫ শতাংশ কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। পেশী কলার কোষের সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম বল।
সারকোপ্লাজমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য উপতন্তু বা
মায়োফাইব্রিল
(Myofibril)
দেখতে পাওয়া যায়।
এই কলার গঠনপ্রকৃতি, কাজ ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে, তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
এগুলো হলো-রৈখিক
(Striated) বা ঐচ্ছিক (Voluntary) পেশী, মসৃণ (Non-striated)
বা
অনৈচ্ছিক
(Involuntary) পেশী এবং হৃদ
(Cardiac)
পেশী।
রৈখিক
(Striated)
বা ঐচ্ছিক
(Voluntary)
পেশী:
এই জাতীয় পেশী হয়ে থাকে নলাকার তথা সিলিন্ডার
(Cylinder)
আকৃতির। কোষগুলো গুচ্ছাকারে থাকে
এবং প্রতিটি গুচ্ছকে ঘিরে যোজক কলার একটি আবরণ থাকে। প্রতিটি
কোষ সারকোলেমা নামক আবরণে আবৃত থাকে। এই আবরণের নিচেই কয়েকশ গোলাকার বা ডিম্বাকার
বহু নিউক্লিয়াস দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি কোষে লম্বালম্বিভাবে সূক্ষ্ম উপতন্তু
তথা মাইয়োফাইব্রিল দেখতে পাওয়া যায়। কোষগুলির মাইয়োফাইব্রিলে কিছুদূর
পর পর অনুপ্রস্থ রেখা বা দাগ দেখতে পাওয়া যায় (তাই একে রৈখিক বা
চিহ্নিত পেশী বলা হয়)। মানুষের ঐচ্ছিক পেশী দৈর্ঘ্যে ১-৪ সেমি এবং
১০-৪০ মাইক্রন হয়ে থাকে।
অস্থির সংযোগস্থলে কিছু পেশী পাওয়া যায়। এই কারণে এই জাতীয় ঐচ্ছিক পেশীকে কংকাল পেশীও বলা হয়।
এছাড়াও চোখ, জিহ্বা, গলবিল, উদরগাত্র ইত্যাদি অঙ্গে এ পেশী দেখতে পাওয়া
যায়। আবার অস্থি সংলগ্ন পেশী কলার সংকোচন-প্রসারণে প্রাণীর নড়ন ও চলন সম্পন্ন
হয়ে থাকে। এ পেশীর সংকোচন-প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল বিধায়
একে ঐচ্ছিক পেশী বলা হয়।
মসৃণ
(Non-striated)
বা অনৈচ্ছিক
(Involuntary)
পেশী:
এ জাতীয় পেশীর উভয় প্রান্ত সরু এবং মধ্যাংশ প্রশস্ত। ফলে এদের দেখতে
অনেকটা তাঁতের মাকুর মতো মনে হয়। কোষগুলোর মধ্যাংশে
একটি নিউক্লিয়াস উপস্থিত। সারকোলেমায় মাইয়োফাইব্রিল থাকে। তবে
অনুপ্রস্থ রেখা বা দাগ অনুপস্থিত (তাই একে মসৃণ পেশী বলা হয়)। মানুষের
অনৈচ্ছিক পেশী দৈর্ঘ্যে ০.০২-০.০৫ মিমি এবং প্রস্থে ৮-১০ মাইক্রন হয়ে
থাকে।
পৌষ্টিকনালী, শ্বাসনালী, রেচন-জনন নলী, রক্তনালী, লসিকা নালী,
গ্রন্থীনালী, চোখের সিলীয় পেশী ইত্যাদি অঙ্গে এ পেশী দেখতে পাওয়া যায়।
এ পেশীর সংকোচন-প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়। তাই একে
অনৈচ্ছিক পেশী বলে। এ পেশী সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরস্থ
বিভিন্ন নালীর ভেতর দিয়ে বিভিন্ন বস্তুর চলাচলে ভূমিকা রাখে। যেমন-
পৌষ্টিকনালীর মধ্য দিয়ে পেরিস্ট্যালসিস
(Peristalsis) প্রক্রিয়ায়
খাদ্যবস্তু সম্মুখ থেকে পেছনের দিকে ধাবিত হয়।
হৃদ
(Cardiac) পেশী:
এই পেশী কেবল হৃদযন্ত্রের প্রাচীরেই দেখতে পাওয়া যায়।এই পেশীর
কোষগুলো সারকোলেমায় আবৃত থাকে। এর আকার নলাকার তথা সিলিন্ডার
(Cylinder)-এর
মতো। কোষগুলো
সমান্তরালভাবে গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। তব পাশাপাশি অবস্থিত কোষগুলো
অনিয়মিতভাবে একে ওপরের সাথে শাখার মাধ্যমে যুক্ত থেকে জালের মত একটা
অবয়ব গঠন তৈরি করে। অন্যদিকে উপর-নিচে অবস্থিত কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা
ঘনভাবে হয়ে অনুপ্রস্থ রেখার সৃষ্টি করে যা ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক
(Intercalated disc)
নামে পরিচিত। এ কলার কোষের নিউক্লিয়াস কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে। মানুষের হৃদ পেশী দৈর্ঘ্যে প্রায়
০.৮ মিমি এবং প্রস্থে ১২-১৫ মাইক্রন হয়ে থাকে।
দ্রুত এবং ক্লান্তিহীন এ পেশী হৃদযন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে দেহে
রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই এর কাজ। গঠনের দিক দিয়ে এ পেশীর
সাথে রৈখিক পেশীর বেশি মিল থাকলেও, কাজের দিক থেকে এটি অনৈচ্ছিক পেশীর
অনুরূপ।