কঙ্কাল যোজক কলা
প্রাণীদেহের প্রধান চার প্রকার
কলা
একটি হলো- কঙ্কাল যোজক কলা (Skeletal
Connective Tissue)।
কঙ্কাল যোজক কলার মাতৃকা অর্ধ-কঠিন
বা কঠিন। গঠন প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে এই কলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-
(Cartilage):
এ
কলার মাতৃকা কন্ড্রোমিউকয়েড
(Chondromucoid)
এবং কন্ড্রোঅ্যালবুনয়েড
(Chondroalbunoid)
প্রোটিন দ্বারা এক ধরনের কঠিন ও স্থিতিস্থাপক পদার্থ সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় কনড্রিন
(Chondrin)
। এই কন্ড্রিন হলো কোমলাস্থির মূল উপাদান। এদের মাতৃকায় তরল পদার্থ পূর্ণ ল্যাকুনা
(lacuna)
নামক গহ্বর থাকে। এতে এক বা একাধিক কন্ড্রোসাইট
(Chondrocyte)
দেখতে পাওয়া যায়। এ কলা অন্যান্য কলা অপেক্ষা বেশী চাপ ও টান বহন করতে পারে। চার ধরণের কোমলাস্থি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো-
(Hyaline)
কোমলাস্থি:এ কলা পেরিকন্ড্রিয়াম নামক তন্তুময় আবরণে আবৃত থাকে। এর মাতৃকা তন্তুবিহীন, নমনীয়, নীলাভ ও ঈষৎ স্বচ্ছ হয়ে থাকে। হাঙ্গর ও ব্যাঙের ভ্রূণে, স্তন্যপায়ীর শ্বাসনালী, স্বরযন্ত্র ও নাকে এ কলা উপস্থিত।
পীততন্তুময় বা স্থিতিস্থাপক
(Elastic)
কোমলাস্থি:
এর অস্বচ্ছ ও ঈষৎ হলুদ রং এর মাতৃকায় স্থিতিস্থাপক
পীততন্তু দেখতে পাওয়া যায়। তন্তুগুলো বাহিরের দিকের তুলনায় ভিতরের দিকে
অধিক ঘনভাবে অবস্থান করে। বহিঃকর্ণ ইউস্টেসিয়ানআল-জিহ্বা ইত্যাদিতে এ কলা
বর্তমান।
শ্বেততন্তুময়
(White fibrous)
কোমলাস্থি:
এ কলার মাতৃকায় ঘনভাবে অবস্থিত শ্বেততন্তু প্রচুর
পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। উভয় কশেরুকার মাঝে এবং এজাতীয় অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে
উপস্থিত।
চুনায়িত
(Calcified)
কোমলাস্থি:
প্রায় অস্থির ন্যায় শক্ত এ কলার মাতৃকায় প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দেখতে পাওয়া যায়। হিউমেরাস ও ফিমারের অগ্রপ্রান্ত তথা মাথায় দেখতে পাওয়া
যায়।
অস্থি (Bone):
সর্বাপেক্ষা কঠিন এ কলা ৪০ শতাংশ জৈব ও ৬০ শতাংশ অজৈব পদার্থে গঠিত। কোলাজেন ও
অসিমিউকয়েড দ্বারা এর জৈব অংশটি গঠিত। অজৈব অংশে প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট ও
ক্যালসিয়াম কার্বনেট উপস্থিত। এ কলার মাতৃকা ল্যামেলি
(Lamellae)
নামক কতগুলো স্তরে সজ্জিত থাকে। হ্যাভারসিয়ান নালী
(Haversian canal)
নামক একটি কেন্দ্রীয় নালীর চারদিকে ল্যামেলিগুলো চক্রাকারে সজ্জিত হয়ে হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র
(Haversian system) গঠন করে। প্রতিটি ল্যমেলাতে
(ল্যামেলির একবচন) ল্যাকুনা (Lacuna)
নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহ্বর দেখতে পাওয়া যায় যাতে অস্টিওসাইট
(Osteocyte)
বা অস্থিকোষ অবস্থান করে। প্রতিটি ল্যাকুনার চারদিকে ক্যানালিকুলি
(Canaliculi)
নামক সূক্ষ্ম নালিকা রয়েছে যার মাধ্যমে পাশাপাশি অবস্থিত ল্যাকুনার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হয়। অস্থিকলার কেন্দ্রে মজ্জা নামক একটি গহ্বর উপস্থিত যা শ্বেত বা লাল বর্ণের মজ্জায় পূর্ণ থাকে। দৃঢ়তা ও ঘনত্বের উপর ভিত্তিকরে অস্থি দুই প্রকার। যথা-
-
ঘনসন্নিবিষ্ট বা
দৃঢ়অস্থি (Compact bone):
দৃঢ়
অস্থিতে হ্যাভারসিয়ান
তন্ত্র উপস্থিত থাকে। হিউমেরাস ও ফিমার হচ্ছে এ জাতীয় অস্থি। অন্যদিকে
স্পঞ্জিঅস্থিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে এবং হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র থাকে না
তবে অসংখ্য সূক্ষ্ম ব্যবধায়কের (Septa)
উপস্থিতির কারণে এটি স্পঞ্জের মত দেখায়। চাপা অস্থি ও মাথার খুলিতে এধরণের
অস্থি বর্তমান।
- স্পঞ্জসদৃশ বা স্পঞ্জিঅস্থি
(Spongy bone): অস্থিকলা দেহকে দৃঢ়তা দান করে একটি কাঠামো প্রদান করে, অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে (মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ইত্যাদি) রক্ষা করে, মজ্জাকে আবৃত করে রাখে, রক্ত থেকে আর্সেনিক ও সীসার মত দূষিত পদার্থসহ সকল দূষিত পদার্থ অপসারণ করে এবং পেশীর সহযোজনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে।