জীববিজ্ঞান
জীব
বিষয়ক বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞানের যে শাখায় জীব বিষয়ে আলোচনা করা
হয়। প্রকৃতিতে
জড় ও জীব এই দুটি সত্তা রয়েছে। উভয় সম্পর্কিত বিজ্ঞানের সাধারণ নাম প্রাকৃতিক
বিজ্ঞান। এর ভিতরে জড় নয় এমন সত্তাসমূহ নিয়ে যে বিজ্ঞান তাকে বলা হয়- প্রাণবিজ্ঞান। এর ভিতরে জীবিত জীবদের নিয়ে যে বিজ্ঞান, তাকে বলা হয় জীববিজ্ঞান।
জীববিজ্ঞানের আলোচ্য উপাদান হলো- যে কোনো জীবিত জীব। কিন্তু জীবিত জীব সম্পর্কে
আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় বিলুপ্ত জীবের কথা চলে আসে। কিন্তু ওই সকল জীব
প্রত্যক্ষভাবে জীববিজ্ঞানে অংশ নয়। যেমন 'ম্যামথ', ডাইনোসর ইত্যাদি বিলুপ্ত
প্রাণিসমূহ প্রাণবিজ্ঞানের অংশ, জীববিজ্ঞানের অংশ নয়।
পূর্ণাঙ্গরূপে জীববিজ্ঞানের সাথে জড়িত রয়েছে প্রাণের বিকাশ এবং এর ক্রমবিবর্তন,
পৃথিবী জুড়ে এরা কিভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এদের শ্রেণিকরণ ইত্যাদি। আধুনিক
জীববিজ্ঞান নানা শাখায় বিভাজিত। এর বিভিন্ন শাখায় বিশেষ বিশেষ বিষয়কে প্রাধান্য
দিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে সাধারণভাবে জীববিজ্ঞানের বিষয় হলো এমন কিছু সাধারণ বিষয়,
যা জীববিজ্ঞানের সকল শাখায় সমানভাবে গুরুত্ব পায়। যেমন জীবকোষ। এটি জীবের মৌলিক
অত্যাবশ্যকীয় একক হিসেব জীববিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়। এছাড়া
এর ভিতরে বিদ্যামান জিন এবং বংশধর্ম এসবও আলোচনায় চলে আসে
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের জড়জগতকে বাদ দিলে বাকি সকল অংশই জীববিজ্ঞানের আওতায় পড়ে।
এই বিচারে জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্র বিশাল। মানুষ যেদিন থেকে নিজের এবং অন্যান্য জীব
সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করেছিল, সেদিন থেকেই এই বিজ্ঞানের শুরু। সময়ের বিচারে
জীববিজ্ঞানই সর্বপ্রাচীন। মানুষ নিজে জীব বলেই এই বিজ্ঞানের শুরু হয়েছিল তার নিজদেহ
থেকেই। মানব সংস্কৃতির শুরু দিকে, খাদ্যাখাদ্যের বিচার, চিকিৎসা, বনজসম্পদের
ব্যবহার শিখেছিলে প্রকৃতির সাথে টিকে থাকার জন্য। একই সাথে শিখেছিল মানুষের শত্রু ও
উপকারী প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে। এই সূত্রে প্রাথমিকভাবে সৃষ্টি হয়েছিল উদ্ভিদ ও
প্রাণিবিজ্ঞান। আর এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সূত্রে তৈরি হয়েছে জীববিজ্ঞানের
নানা শাখা।
সুশৃঙ্খলভাবে জীবজগতকে জানার জন্য বর্তমানে
জীববিজ্ঞানকে নানা শাখায় ভাগ করা হয়েছে। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য ভাগগুলো হলো-
ইংরেজি ভাষায় জীববিজ্ঞানকে বলা হয় Biology । গ্রিক শব্দ βίος (bios (জীবন) এবং λογία (logia (জ্ঞান) শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে শব্দটি গঠিত হয়েছে Biology। ১৭৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি প্রকৃতিবিদ লিনিয়াস(Linnaeus (Carl von Linné) তাঁর Bibliotheca botanica গ্রন্থে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। এরপর ধীরে ধীরে ইউরোপের অন্যান্য ভাষায় এই শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।
লিনিয়াস সমগ্র জীবজগৎকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগ দুটি ছিল প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদ জগৎ। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আর. এইচ. হুইট্টেকার জীবজগৎকে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মারগুলিস এই বিন্যাসকে পরিমার্জিত নতুন রূপ দেন। [দেখুন: জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাস]