মাইটোসিস (কোষ বিভাজন)
Mitosis

জীবদেহের একপ্রকার কোষ বিভাজন পদ্ধতি।
সু-প্রাণকেন্দ্রিক  কোষ (Eukaryotic cell) কোষে এই বিভাজন হয়ে থাকে। একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে সমান ও অভিন্নগুণ সম্পন্ন এমন দুটি অপত্য কোষের সষ্টি করে, যাদের প্রতিটিতে ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রামোজোমের সংখ্যার সমান থাকে। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম এই প্রক্রিয়াটির বিষয় আবিষ্কৃত হয় ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে পোলিশ বিজ্ঞানী  Wacław Mayzel এর ব্যাখ্যা করেন।


কোষবিভাজন প্রক্রিয়া


ইন্টাফেজ (
Interphase) : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের শুরুতে মাতৃকোষে এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এই প্রস্তুতিপর্বকে ইন্টাফেজ (Interphase) বলা হয়। এই পর্যায়ে খুব বেশি সময় ব্যয় হয় না। এই দশা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। দশা তিনটি হলো
 

  G1 (first gap) : বিরাম ১
এই দশায় ডিএনএ এবং প্রোটিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও অন্যান্য উপাদান তৈরি হতে শুরু করে।

S (synthesis) দশা
এরপর কোষ বিভাজনের প্রস্তুতি পর্বের
S (synthesis) দশা শুরু হয়। এই  দশায় ডিএনএ অণুর একটি প্রতিলিপি তৈরি হয়। একই সাথে সহায়ক অন্যান্য প্রোটিন ও আরএনএ অণু সৃষ্টি হয়। এই সময় ডিএনএ-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয় এবং ক্রোমোজোম সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে স্বাভাবিক আকারের হতে পারে, এতটাই বৃদ্ধি পায়।

G2 (Second gap) : বিরাম 2
এই দশায় সাইটোপ্লাজম ও অন্যান্য দানাদার বস্তুসমূহের ভিতর নানাবিধ প্রক্রিয়া চলে। এই সময় কোষের নিউক্লিয়াস বেশ বড় আকার ধারণ করে। এই সময় কোষে এটিপিতে পূর্ণ হয়ে যায়। নিউক্লিয়াসের ভিতর অনুলিপিকৃত ক্রোমাটিন জালিকার মতো অবস্থান করে।


ইন্টারফেজ দশা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় কোষ
বিভাজনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় নিউক্লিয়াসের বিভাজনের মধ্য দিয়ে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস (karyokinesis)। কোষের নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর এর সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়। এই বিভাজনকে  বলা হয় সাইটোকাইনেসিস (cytokinesis)

 

ক্যারিওকাইনেসিস (karyokinesis) : নিউক্লিয়াস বিভাজনের প্রক্রিয়াই হলো ক্যারিওকাইনেসিস। এই প্রক্রিয়াটি মোট পাঁচটি ধাপ বা দশায় সম্পন্ন হয়। এগুলো হলো ইন্টারফেজ, প্রোফেজ, মেটাফেজ, এনাফেজ ও টেলোফেজ।
 

  প্রোফেজ (Prophase):
এই পর্যায়ের শুরুতে নিউক্লিয়াস বেশ বড় আকারের থাকে। এই দশায় নিউক্লিয়াসের জলীয় অংশ লাপ পায় এবং নিউক্লিয় জালিকা খুলে গিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোমে পরিণত হয়।

প্রথমে ক্রোমোজোমগুলি সুদীর্ঘ ও কুণ্ডলী বিহীন থাকে। পরে ক্রোমোজোমগুলো বেশ খাটো এবং মোটা আকার ধারণ করে। এই সময় প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক একটি ভাগকে বলা হয় ক্রোমাটিড। এই ভাগদুটি একটি বিন্দুতে যুক্তাবস্থায় থাকে। এই যুক্তবিন্দুকে বলা হয় সেন্ট্রোমিয়ার (
centromere) বলে।

এই সময় নিউক্লিয়াস প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। সেন্ট্রোজোম বিভাজিত হয়ে যায় এবং স্পিন্ডল যন্ত্রের আভাষ পাওয়া যায়

   
  প্রো-মেটাফেজ (Prometaphase):
এই পর্যায়টি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ফলে অনেক সময় প্রোফেজ থেকে একে ঠিক পৃথক করা যায় না। একইভাবে একে অনেক সময় মেটাফেসের অংশও বিবেচনা করা হয়।

এইদশার প্রাথমিক পর্জযায়ে নিউক্লিয়ার পর্দা ভেঙে যায় এবং নিউক্লিয়ারের জায়গায় মাইক্রোটুবুলেসের (
microtubules) আবর্ভাব ঘটে। শেষের দিকে প্রতিটি ক্রোমোজোম এর সেন্ট্রিমিয়ার বরাবর দুটি কাইনেটোকোর (
kinetochores)-এ বিভাজিত হয়ে যায়। এর সাথে প্রতিটি ক্রোমাটিড যুক্ত থাকে। কাইনেকটেকোর মাইক্রোটুবুলসের সাথে প্রতিটি ক্রোমোজম তার সকল অংশসহ যুক্ত থাকে। এক্ষেত্রে কাইনেটোকোর একধরনের বড়শির মতো বন্ধনী দ্বারা ক্রোমাটিডকে সবলে ধরে রাখে ফলে পরবর্তী সময়ে ক্রোমোজোম বিভাজনে সহায়তা করে।

 


সূত্র :
http://kvhs.nbed.nb.ca/gallant/biology/mitosis_phases.html