হার্ডডিস্ক
প্রচলিত নাম hard disk। মূল নাম Hard Disk Dirve । সংক্ষিপ্ত নাম HDD

কম্পিউটারে ব্যবহৃত সহায়ক স্মৃতিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হার্ডডিস্ক। তথ্য লিখন/পঠনের সময়ের নিরিখে, এই জাতীয় ডিভাইসের মধ্যে, এখনও হার্ডডিস্ককে সবচেয়ে দ্রুততম ডিভাইস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর এর বড় সুবিধা হলো― কম্পিউটার বন্ধ করলে বা বিদ্যুৎ চলে গেলে এর সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায় না। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করার পর, হার্ডডিস্ক স্বাভাবিকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। একে বলা হয়― হাডডিস্কের আয়ুষ্কাল (Life-time) । হার্ডডিস্ক ভেদে এই সময় ২০,০০০ ঘণ্টা বা তার বেশি হতে পারে। এছাড়া হার্ডডিস্ক নষ্ট হতে পারে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গেলে, আগুনে পুড়ে গেলে। সাময়িকভাবে তথ্য-বিপর্যয় ঘটতে পারে― ভাইরাসের কারণে। এছাড়া প্রত্যক্ষভাবে শক্তিশালী চুম্বকের সংস্পর্শে এলেও হার্ডডিস্কের তথ্য মুছে যেতে পারে।

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আইবিএম-এর সানজোস ক্যালিফোর্নিয়া পরীক্ষাগারে, রেনোল্ড জনসন
(Reynold Johnson) হার্ডডিস্ক উদ্ভাবন করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নানাভাবে নানা ধরনের হার্ডডিস্কের উন্নয়ন ঘটেছে। এই সময়ের ভিতরে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আইবিএম তাদের 305 RAMAC কম্পিউটারের সাথে প্রথম হার্ডডিস্ক সংযোজন করে। এই হার্ডডিস্কের নাম ছিল IBM 305

হার্ডডিস্কের গাঠনিক উপকরণ
হার্ডডিস্ক বাইরে থেকে একটি আবদ্ধ বাক্সের মতো মনে হয়। এই বাক্স মেইনফ্রেম কম্পইউটারের ক্ষেত্রে আকারে অনেক বড় ছিল। ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এর আকার বেশ ছোট। আকারে যাই হোক, এর গাঠনিক উপকরণ একই। বাইরের ধাতব কঠিন আবরণ খুলে ফেললে প্রথমেই চোখে পড়ে এক বা একাধিক
চাকতি (platter)। এই চাকতির উপরে থাকে চূম্বকধর্মী আবরণ। এর উপরে লিখন/পঠন উপযোগী হেড দিয়ে তথ্য লিখন/পঠনের কাজ করা হয়। প্রতিটি প্ল্যটারের উভয় পাশে একটি করে লিখন/পঠন হেড থাকে। ভয়েস কয়েল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই হেড এ্যাকুয়েটরযুক্ত হার্ডডিস্কের প্লেটারে কিছু তথ্য অাগে থেকেই লিখিত থাকে। বিশেষভাবে লিখিত এই তথ্য হলো মূলত এক ধরনের সূচী। একে বলা হয় সার্ভো (servo) প্ল্যটারকে ঘুরানো এবং এর লিখন/পঠন হেড প্লেটারের উপর সঞ্চালিত করার জন্য দুই ধরনের মোটর ব্যবহার করা হয়।

 

হার্ডিস্কের রূপ-প্রকরণ (Form factors)
হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারের আকার ও সংখ্যা, এর ঘূর্ণগতি এবং তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতার বিচারে হার্ডডিস্কের রূপ-প্রকরণ (
Form factors) বিচার করা হয়।

ভয়েস কয়েল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হেড এ্যাকুয়েটরযুক্ত হার্ডডিস্কে কিছু তথ্য গে থেকেই লিখিত থাকে। বিশেষভাবে লিখিত এই তথ্য হলো মূলত এক ধরনের সূচী। একে বলা হয় সার্ভো (
Servo)। হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারে কয়েক পদ্ধতিতে সার্ভো লিখা হয়। ডেডিকেটেড সার্ভোর জন্য যে কোন একটি প্ল্যাটারের এক পিঠকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রতিটি প্ল্যাটারের উভয় পৃষ্ঠায় সার্ভো লিখা হয়।

ডেডিকেটেড সার্ভোর প্ল্যাটারের যে তলটিতে গ্রে কোড লিখা হয়- সেই তলে অন্য কোন সাধারণ তথ্য রাখা হয় না। এই কারণে এই তলের উপর চলাচলকারী হেডও একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে- একটি প্ল্যাটারে এরূপ শুধু গ্রে কোড থাকার কারণে, প্ল্যাটারের অপচয় হয়ে থাকে। কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে, এতে জায়গার অপচয় হয় না। কারণ, একটি প্ল্যাটারে একটি তল গ্রে কোড ব্যবহার করা হলেও অন্যান্য প্ল্যাটারের বাকী তলগুলোতে কোন গ্রে কোড লিখা হয় না। ফলে- একাধিক প্ল্যাটার বিশিষ্ট হার্ডডিস্কে জায়গার অপচয় হয় না। বরং এই ব্যবস্থায় অতিদ্রুত তথ্য লিখন/পঠন সম্ভব হয়।
 

সাধারণভাবে প্রচলিত হার্ডডিস্কে দুটি মোটর থাকে। এর একটি মোটর হার্ডডিস্কের ভিতরে তথ্য সংরক্ষণকারী চাকতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। অপর মোটরটি হার্ডডিস্কের চাকতি থেকে তথ্য পড়ার উপযোগী হেডকে পরিচালিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ডডিস্কের ঘূর্ণায়মান


হার্ডডিস্কের ভিতর যে অংশগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে, তাকে প্রধানত ৫টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই অংশগুলো হলো―
১. ডিস্ক প্ল্যাটার
২. স্পিন্ডল মোটর
৩. লিখন/পঠন হেড : হার্ডডিস্কের ট্র্যাকসমূহে তথ্য লিখা ও পড়ার জন্য এক ধরনের ম্যাগনেটিক হেড ব্যবহার করা হয়। এই হেড একটি দণ্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে। আর এই দণ্ডকেই এ্যাকসেস আর্ম (
Access arm) বলে । এই দণ্ডের যে প্রান্তে হেড সংযুক্ত থাকে তা ডিস্কের প্ল্যাটারের উপর চলাচল করে তথ্য লিখন-পঠনের কাজে সহায়তা করে। হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারের উভয় পাশ্বে একটি একটি করে মোট দুটি এ্যাকসেস আর্ম থাকে। যে সকল হার্ডডিস্কে একাধিক প্লটার থাকে, সে সকল হার্ডডিস্কে প্ল্যাটার সংখ্যা অনুসারে এ্যাকসেস আর্মের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়।
৪. বায়ু শোধক
৫. লজিক বোর্ড
 


সূত্র :