প্ল্যাটার (হার্ডডিস্ক)
ইংরেজি : Platter (hard disk)
 

হার্ডডিস্ক-এর ভিতরে রক্ষিত তথ্য লিখন-পঠনোপযোগী বিশেষ ধরনের গোলাকার চাকতি বিশেষ। কম্পিউটারের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে একে বলা হয় Platter প্রতিটি হার্ডডিস্ক-এর ভিতরে এক বা একাধিক প্লেটার থাকে। উল্লেখ্য ল্যাটিন Plattus শব্দের অর্থ সমতল। এই শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ইংরেজি শব্দ Plate, যাকে সোজা বাংলায় বলে সমতল থালা। আর এই শব্দ থেকেই চলে এসেছে এ্যাংলো-ফ্রান্স শব্দ Platter। এর বাংলা অর্থ হলো দীর্ঘ সমতল থালা। যদিও গোলাকার জাতীয় কোন শব্দ এতে লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু হার্ডডিস্কের প্ল্যাটার কিন্তু গোল ছাড়া অন্য আকৃতির হয় না।

প্ল্যটারের আকার ও সংখ্যা
হার্ডডিস্ক ভেদে এই প্লেটারের ব্যাস এবং সংখ্যা নানা রকমের হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আইবিএম-এর সানজোস ক্যালিফোর্নিয়া পরীক্ষাগারে, রেনোল্ড জনসন
(Reynold Johnson) হার্ডডিস্ক উদ্ভাবন করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আইবিএম তাদের 305 RAMAC কম্পিউটারের সাথে প্রথম হার্ডডিস্ক সংযোজন করে। এর নাম ছিল IBM 350। এই হার্ডডিস্ক-এ ব্যবহার করা হয়েছিল ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০টি চাকতি (platter)। আইবিএম পর্বর্তী সময়ে প্লেটারের ব্যাস ও সংখ্যা কমিয়ে আনে। বর্তমানে এর আকার সংখ্যা, পুরুত্ব, বস্তুগত উপাদানের নানা রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে যেসকল ব্যাসের প্লেটার হার্ডডিস্ক-এর ভিতরে যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো হলো, ৫.১২ ইঞ্চি, ৩.৭৪ ইঞ্চি, ২.৫ ইঞ্চি, ১.৩৩৩ ইঞ্চি প্রায়, এবং ১.১২৫ ইঞ্চি। হার্ডডিস্ক ভেদে এই প্লেটারের সংখ্যা ১ থেকে ১০টি পর্যন্ত হতে পারে থাকে। তবে বর্তমানে ২টি বা ৩টি প্লেটারের ব্যবহারই সচরাচর দেখা যায়।

প্ল্যাটারের উপাদান

আগে সাধারণত প্লেটার তৈরি হতো এ্যালুমিনিয়াম ভিত্তিক সঙ্কর ধাতু দিয়ে। কারণ এর ওজন অপেক্ষাকৃত হাল্কা ও উচ্চ তাপমাত্রায় এর প্রসারাঙ্কও অত্যন্ত কম। বর্তমানে প্লেটারের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্লাস বা গ্লাস-সিরামিক। অধিকমাত্রায় তথ্য রাখার জন্য গ্লাস/গ্লাস-সিরামিক অত্যন্ত উপযোগী বলে বিবেচিত হয়। ৩.৭৪ ও ২.৫ ইঞ্চির প্লেটারগুলো সাধারণত গ্লাস বা গ্লাস-সিরামিকের তৈরি হয়ে থাকে।

প্লেটারের উপরিতলে তথ্য রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় এক ধরনের চুম্বক-ধর্মী আবরণ। উপাদানভেদে এই অাবরণকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটো হলো

প্লেটারের ঘূর্ণন গতি
হার্ডডিস্কের ভিতরে সকল প্লেটার সেট হিসেবে একটি মোটরের বর্ধিত বাহুর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। এই মোটর ঘোরার সাথে সাথে এর সাথের প্লেটারগুলোও ঘুরতে থাকে। প্রথম উদ্ভাবিত হার্ডডিস্ক
IBM 350-এর ঘুর্ণনগতি ছিল ১২০০ বার/প্রতিমিনিট।

প্লেটার ও হেডের মধ্যবর্তী দূরত্ব
উচ্চ ঘূর্ণণ-গতির প্লেটারযুক্ত হার্ডডিস্ক তৈরি করা হয়, অত্যন্ত সাবধানতার সাথে। কারণ প্লেটার ও হেডের মধ্যবর্তী স্থানে কোন ধূলিকণা বা ধূয়ার কণা থাকলে, হার্ডডিস্কের হেড ও প্লেটার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সাধারণত প্লেটার ও হেডের মধ্যবর্তী দূরত্ব থাকে ২-৩ মাইক্রো ইঞ্চি। পক্ষন্তরে, ধূলিকণার পুরুত্ব হয় ৪০০ মাইক্রো ইঞ্চি, হাতের ছাপের পুরুত্ব হয় ৩০০ মাইক্রো ইঞ্চি, ধুয়ার কণার পুরুত্ব হয় ২৫০ মাইক্রো ইঞ্চি। অর্থাৎ অামাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে যে কণাগুলো রয়েছে, সে কণাগুলো হার্ডডিস্কের কাছে হবে পাহাড়ের মত উঁচু ও বিশাল প্রতিবন্ধক। নিচে এই কণাগুলোর তুলনমূলক চিত্রটি লক্ষ্য করুন।


বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন কণা বা বস্তু রয়েছে। উপরে দেখানো হলো এরকমই তিনটি উপাদান। এদের পরিমাপ হলো- ধূয়ার কণা ১০০ মাইক্রোন, ধূলি কণা ১০০০০ মাইক্রোন ও মানুষের চুল ১০০০০০ মাইক্রোন।

প্লেটারে লিখন পদ্ধতি
ভয়েস কয়েল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হেড এ্যাকুয়েটরযুক্ত হার্ডডিস্কের প্লেটারে কিছু তথ্য অাগে থেকেই লিখিত থাকে। বিশেষভাবে লিখিত এই তথ্য হলো মূলত এক ধরনের সূচী। একে বলা হয় সার্ভো
(servo)। কম্পিউউটারে ব্যবহৃত হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারে তথ্য লিখিত হয়ে থাকে এক প্রকার-লিখন/পঠন হেড দ্বারা। প্রতিটি প্ল্যাটারের উভয় পার্শ্বে একটি করে লিখন/পঠন হেড থাকে। প্ল্যাটারগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এফডিস্ক ও ফরমেট করা হয়। এর ফলে প্ল্যাটারের গায়ে ট্র্যাক, সেক্টর ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।
 

 


Dedicated Servo
ভয়েস কয়েল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হেড এ্যাকুয়েটরযুক্ত হার্ডডিস্কে কিছু তথ্য অাগে থেকেই লিখিত থাকে। বিশেষভাবে লিখিত এই তথ্য হলো মূলত এক ধরনের সূচী। একে বলা হয় সার্ভো (জযঁ্ত্)। ঈযমষভফুযম জযঁ্ত্ হলো তার একটি প্রকারভেদ মাত্র। দেখুন : জযঁ্ত্, ঈষ্নহ ঙড়ফুুযঁ

হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারে কয়েক পদ্ধতিতে সার্ভো লিখা হয়। অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রতিটি প্ল্যাটারের উভয় পৃষ্ঠায় সার্ভো লিখা হয়। কিন্তু ডেডিকেটেড সার্ভোর জন্য যে কোন একটি প্ল্যাটারের এক পিঠকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়। একটি প্ল্যাটারের একটি তলকে এইভাবে সার্ভোর জন্য উত্সর্গ করা হয় বলে- এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে যে প্ল্যাটারের যে তলটিতে গ্রে কোড লিখা হয়- সেই তলে অন্য কোন সাধারণ তথ্য রাখা হয় না। সেই কারণে এই তলের উপর চলাচলকারী হেডও একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে- একটি প্ল্যাটারে এরূপ শুধু গ্রে কোড থাকার কারণে, প্ল্যাটারের অপচয় হয়ে থাকে। কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে, এতে জায়গার অপচয় হয় না। কারণ, একটি প্ল্যাটারে একটি তল গ্রে কোড ব্যবহার করা হলেও অন্যান্য প্ল্যাটারের বাকী তলগুলোতে কোন গ্রে কোড লিখা হয় না। ফলে- একাধিক প্ল্যাটার বিশিষ্ট হার্ডডিস্কে জায়গার অপচয় হয় না। কিন্তু লাভ যেটা হয়- তা হলো অতিদ্রুত তথ্য লিখন/পঠন সক্ভব হয়। দেখুন : ঋঁফ। ইত্ময
 


 

সাধারণভাবে প্রচলিত হার্ডডিস্কে দুটি মোটর থাকে। এর একটি মোটর হার্ডডিস্কের ভিতরে তথ্য সংরক্ষণকারী চাকতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। অপর মোটরটি হার্ডডিস্কের চাকতি থেকে তথ্য পড়ার উপযোগী হেডকে পরিচালিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ডডিস্কের ঘূর্ণায়মান


হার্ডডিস্কের ভিতর যে অংশগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে, তাকে প্রধানত ৫টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই অংশগুলো হলো―
১. ডিস্ক প্ল্যাটার
২. স্পিন্ডল মোটর
৩. লিখন/পঠন হেড : হার্ডডিস্কের ট্র্যাকসমূহে তথ্য লিখা ও পড়ার জন্য এক ধরনের ম্যাগনেটিক হেড ব্যবহার করা হয়। এই হেড একটি দণ্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে। আর এই দণ্ডকেই এ্যাকসেস আর্ম (
Access arm) বলে । এই দণ্ডের যে প্রান্তে হেড সংযুক্ত থাকে তা ডিস্কের প্ল্যাটারের উপর চলাচল করে তথ্য লিখন-পঠনের কাজে সহায়তা করে। হার্ডডিস্কের প্ল্যাটারের উভয় পাশ্বে একটি একটি করে মোট দুটি এ্যাকসেস আর্ম থাকে। যে সকল হার্ডডিস্কে একাধিক প্লটার থাকে, সে সকল হার্ডডিস্কে প্ল্যাটার সংখ্যা অনুসারে এ্যাকসেস আর্মের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়।
৪. বায়ু শোধক
৫. লজিক বোর্ড

 


সূত্র :
কম্পিউটার কোষ। কামরুল হায়দার। সিসটেক ২০০১।