ইংরেজি
web
শব্দের অর্থ হলো বুনট বা বয়নের কৌশল। সে দিক থেকে
webpage
-এর
আক্ষরিক অর্থ হতে পারে পৃষ্ঠা বয়নের বা রচনার কৌশল। এই অর্থে যে কোন পৃষ্ঠাকেই
ওয়েব পেজ বলা যেতে পারে।
কম্পিউটারজগতে কিন্তু ঢালাওভাবে সকল ধরনের পৃষ্ঠাকেই ওয়েব
পেজ বলা হয় না। কম্পিউটারের পরিমণ্ডলে সাধারণভাবে মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজের উপর ভিত্তি
করে তৈরিকৃত নথিপত্রগুলোকে বলা হয় ওয়েব পেজ।
এই জাতীয় নথিপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় নানা ধরনের উপকরণ সংযোজন করে, ওয়েবপেজকে কার্যোপযোগী করা হয়। প্রয়োজনানুসারে এর উপকরণ হতে পারে- বিভিন্ন শৈলী ও রঙের ফন্ট, বিভিন্ন ধরনের বাটন, টেবিল, শব্দ, স্থির ছবি, সচল ছবি (কার্টুন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি), অন্যান্য ওয়েব পেজের সাথে হাইপার লিঙ্ক ইত্যাদি। এছাড়া ওয়েব পেজে গতিশীল ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করার জন্য যুক্ত করা হয়, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ, স্টাইলশীট ইত্যাদি। ওয়েব জগতের মূল লক্ষ্য হলো, তথ্যের বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ পৃথিবীর যে কোন স্থানে রক্ষিত ওয়েব-তথ্য যেন যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করা যায়, কিম্বা প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
বলাই বাহুল্য, ওয়েব পেজ মাত্রেই
কম্পিউটার
নিয়ন্ত্রিত এক প্রকার নথি প্রকাশক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা
WWW(World Wide Web)
পরিমণ্ডলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। এই নথি দেখা বা পড়ার জন্য ওয়েব ব্রাউজার
(web browser)
নামক এক ধরনের
সফ্ট্অয়্যার ব্যবহার করা হয়। ওয়েব ব্রাউজারের সাহায্যে
কম্পিউটার-মনিটরে বা বিভিন্ন ধরনের চলৎ-ডিভাইস
(mobile
device—যেমন
মুঠোফোন) -এ ওয়েবপেজ উপভোগ করা যায়।
সাধারণত ওয়েব পেজ তৈরি হয়ে থাকে
HTML
বা
XHTML
বিন্যাসনে। এতে পাঠ্য,
ধ্বনি, স্থিরচিত্র এবং সচলচিত্র উপস্থাপন করার নানাবিধ সুযোগ রয়েছে। এছাড়া একাধিক
তথ্যের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য হাইপার লিঙ্ক ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়েবপেজের
মাধ্যমে কোনো তথ্য-ঘাঁটি
(database)
ব্যবহার করে প্রাথিত ফলাফলও প্রকাশ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
ওয়েবপেজ-এর ইতিহাস ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে
Vannevar Bush
নামক একজন গবেষক
Atlantic Monthly
নামক একটি পত্রিকায়
Memex
(এক ধরনের
আলোক-বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ডিভাইস) সম্পর্কে উপর একটি প্রতিবদেন প্রকাশ করেন। এই
প্রতিবেদনে ইনি ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে মাইক্রোচিপের সাহায্যে নথি বা তথ্যসমূহের
ভিতরে আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলা যায়। প্রতিবেদকের এই প্রতিবেদনে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত
গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন মরেন নি।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে Doug Engelbart
মাউস আবিষ্কার করেন। তিনি
ONLine System" (NLS)
নামক এমন একটি ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন, যাতে তথ্য
সমূহের ভিতরে আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলার সুযোগ
সৃষ্টি করেছিল। বলা হয়ে থাকে ইনি এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মাউস আবিষ্কার করেছিলেন।
Ted Nelson
এর সাথে ফাইল কাঠামোর ভিতরে
আন্তঃসংযোগের যুক্ত করার সুবিধা আনেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
Andy van Dam
এবং আরও কয়েকজন মিলে তৈরি
করেছিলেন
Hypertext Editing System
।
১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের জুন-ডিসেম্বর
টিম বার্নারস লি
(Tim Berners-Lee)
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা নগরীতে অবস্থিত
CERN
নামক একটি প্রতিষ্ঠানে (প্রতিষ্ঠানটি
পার্টিকল পদার্থ বিজ্ঞানের ইউরোপীয় গবেষণাগার হিসাবে পরিচিত) একটি নোটবুক
প্রোগ্রাম রচনা করেন। এই প্রোগ্রামটির নাম ছিল
"Enquire-Within-Upon-Everything"
।
এর প্রোগ্রাম অনুসারে তিনি তথ্যসমূহের ভিতর আন্তঃযোগাযোগের জন্য সহায়ক গ্রন্থির
(arbitrary node)
-এর
ব্যবস্থা করেন। প্রতিটি গ্রন্থির জন্য ছিল একটি শিরোনাম, ধরন এবং উভমুখী ধরনের
সংযোগের তালিকা। এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করা হয়েছিল
—SINTRAN-III
কম্পিউটারের
Norsk Data machine-
গুলোতে।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে টিম বার্নার্স রচনা করেন
"Information Management: A
Proposal"
। এবং গবেষকদের মতামত পাওয়ার
জন্য এই লেখাটি প্রচার করেন। মূলত এরপর থেকে ওয়েব পেজ তৈরির নানাবিধ কৌশলের উন্নয়ন
ঘটেছে ক্রমান্বয়ে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
সূত্র : এইচটিএমএল ৪.০ ও জাভাস্ক্রিপ্ট। কামরুল হায়দার। সিসটেক পাবলিকেশন্স।
আগষ্ট-২০০০। কম্পিউটার কোষ। কামরুল হায়দার। সিসটেক পাবলিকেশন্স। মার্চ-২০০১। Microsoft
Computer Dictionary, 1997 Edition http://www.w3.org/History.html