লর্ড
ওয়েলেস্লে
Lord Wellesley
(১৭৬০-১৮৪২)
ব্রিটিশ
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি'র গভর্নর
জেনারেল।
এঁর পুরো নাম Richard Colley Wesley।
১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন আয়ারল্যণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম গ্যারেট
ওয়েলেস্লে। মায়ের নাম এ্যানে।
তিনি Royal School, Armagh, Harrow School
এবং Eton College-এ
লেখাপড়া শেষ করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে এখান থেকে
পাস করার পর আইরিস হাউস অফ কমনস-এ যোগদান করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি আইরিশ হাউস
অফ লর্ড হন। ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রান্ড লজ অফ আয়ারল্যান্ড পদ অধিকার করেন।
১৭৮৪
খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ হাউস অফ কমনস-এর সদস্য পদ লাভ করেন। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে
ভারত বিষয়ক নিয়ন্ত্রক বোর্ডের সদস্য হন। এই সূত্রে ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে
তিনি গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হয়ে ভারতবর্ষে আসেন।
১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (the
system of Subsidiary Alliance)
ব্যবস্থা প্রচলন করে অনেক ভারতীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সামরিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল
করে তোলেন। তিনি প্রথমে নজর দেন হায়দ্রাবাদের দিকে। এ সময় হায়দ্রাবাদের নিজামের
সাথে ফরাসিদের ঐক্য ছিল। এই ঐক্যকে দুর্বল করার জন্য, বিশেষ মনোযোগ এবং নিজামের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত গ্রহণের আদেশ দেন। এই প্রচেষ্টার প্রথম ধাপে ছিল
হায়দ্রাবাদ নিজাম এবং ফরাসি সৈন্যর ভিতরে ঐক্যের বাধন নষ্ট করা। ১৭৯৮
খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই ঐক্যে ভেঙে যাওয়ার
ঘটনায় ওয়েলেস্লের একটি বড় ভূমিকা ছিল।
এই বছরেই হায়দ্রাবাদ প্রথম অধীনতামূলক
মিত্রতা নীতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর পরে একে একে মহীশূর, তাঞ্জোর, যোধপুর,
জয়পুর, আভাদ, মেছেরি, বুন্দি, ভারতপুর, বেরার প্রভৃতি রাজ্য যোগ দেয়।
১৭৯৯
খ্রিষ্টাব্দে
চতুর্থ ইঙ্গো মহীশূর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি টিপু সুলতান পরাজিত ও নিহত হন।
এই যুদ্ধে জয়ের পর, ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি, ভারতে প্রধান সামরিক শক্তি হিসেবে
আত্ম-প্রকাশ করে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবল আত্মবিশ্বাসে নানা ধরনের কাজে একক সিদ্ধান্ত
নেওয়া শুরু করেন।
এর ভিতরে ছিল প্রকাশনা-বিধি, বাণিজ্যনীতি এবং বিপুল অর্থব্যয়ে কলকাতায় নানা ধরনের
উন্নয়নের কাজ। আর এসকল কাজ তিনি করেছিলেন কোম্পানির ডিরেক্টদের অনেক সময় না জানিয়েই।
এসব বিষয় নিয়ে আদালতের সাথেও তাঁর সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধ হয়েছিল। মূলত এই যুদ্ধটা হয়েছিল সিন্ধু এবং বেরারের রাজার মধ্যে। যথারীতি এই যুদ্ধে লাভবান হয়েছিল ওয়েলেস্লের শাসিত ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানি। এই যুদ্ধে ওয়েলেস্লের ভাই আর্থারের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
তিনি তাঁর অনেক কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও পছন্দ করতেন না। কোম্পানির স্বার্থে তিনি বাক্-স্বাধীনতার উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। বিশেষ করে
তাঁর এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল তৎকালীন সংবাদপত্রের উপর। ১৭৯৯
খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে পত্র-পত্রিকা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতো। এর ফলে অনেক সময়
অত্যন্ত অশীলন শব্দচয়নে এবং অশীলন বিষয়াদি প্রকাশিত হতো। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর
চলাচলের গোপন সংবাদও পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এছাড়া প্রকাশিত হতো ওয়েলেস্লের
শাসিত ভারতের নানা দুর্ভোগের কথা। এই অবস্থা নিরসনের জন্য ১৭৯৯
খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে লর্ড ওয়েলস্লি সংবাপত্রের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এই বিধি
অনুসারে সে সময় থেকে, কোনো সচিব দ্বারা পরীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো পত্রিকা
প্রকাশিত হতে পারতো না। এই নিয়মের ফলে পত্রিকার প্রবন্ধাদি থেকে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত
পরীক্ষা করা হতো।
তাঁর ব্যয়বহুল কাজের ভিতরে ছিল-
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারাকপুরে গঙ্গাতীরে বিলিতি ধাঁচের এক 'ব্যারাকপুর পার্ক'
নামক বাহারি উদ্যান তৈরির
কাজ। ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই উদ্যানের জন্য তিনি ১০০৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন।
এই উদ্যানের ভিতরে এক প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। তিনি অস্থায়ী ভাবে থাকার জন্য গঙ্গার তীর ঘেঁষে
তৈরি করেছিলেন একটি বড় দোতলা বাড়ি। তাঁর প্রাসাদ তৈরি সম্পন্ন না হলেও দোতলা বাড়িটি
তৈরি হয়েছিল এবং এই বাড়িটি
প্রাধান্য পেয়েছিল 'ব্যারাকপুর গভর্নমেন্ট হাউস' নামে। এই সময় ক্যালকাটা গভর্নমেন্ট হাউস থেকে তার ব্যারাকপুর পার্কের বাড়িতে সহজে যাতায়াতের জন্য
তিনি শ্যামবাজার থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত টানা এক রাস্তা
তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে এর নাম বি টি রোড।
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে নবাগত ইংরেজ কর্মচারীদের ভারতীয় শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য
তিনি
কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
এতসব কাণ্ডের জন্য, তিনি
ফলে ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দ তিনি গরভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন
এবং ইংল্যাণ্ডে ফিরে যান।
১৮০৯ ওয়েলেস্লি স্পেনের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। তিনি তালাভেরার যুদ্ধ সম্পূর্ণ হবার পরেই কাদিয এ অবতরণ করেন।
এই সময় স্প্যানিশ সরকারকে নিজের মুঠোর মধ্যে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কয়েক মাস পরে জর্জ ক্যানিং এবং রবার্ট স্টুয়ার্টের দ্বন্দ্ব হয় এবং তারা দুজনেই পদত্যাগ করেন।
এরপর ওয়েলেসলি স্পেন্সর পারসেভাল এ পররাষ্ট্র সচিবএর পদ গ্রহণ করেন। পারসেভালের হত্যার পর তিনি এবং জর্জ ক্যানিং যৌথ ভাবে লর্ড লিভারপুলের প্রশাসনে যোগ দিতে অস্বীকার করেন।
১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর লণ্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর দুটি বিবাহ করেছিলেন। স্ত্রীদ্বয়ের নাম ছিল-
hyacinthe Gabrielle
ও
Marianne Caton
সূত্র :