আমির খানের উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার তালিকা

আড়ানা [শ্রবণ নমুনা]
ইমন [শ্রবণ নমুনা -১, শ্রবণ নমুনা-২]
বাঁরোয়া [শ্রবণ নমুনা]
বাগেশ্রী [শ্রবণ নমুনা]
বৈরাগী [শ্রবণ নমুন-১, শ্রবণ নমুনা-২]

আমির খান, ওস্তাদ
(১৯১২-১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ)
স্বনামধন্য ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের কণ্ঠশিল্পী।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগষ্ট ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শাহমির খান ছিলেন  ইন্দোরের হোল্কার রাজ দরবারের সারেঙ্গী বাদক। উল্লেখ্য তাঁর দাদা চাঙ্গ খান ছিলেন বাহাদুর শাহ্ রাজদরবারের সভাগায়ক।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র নয় বৎস বয়সে তাঁর মায়ের মৃত্য হয়। এই সময় তাঁর ছোটো ভাই সারেঙ্গীবাদক হওয়ার জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিওর ইন্দোরে স্টেশনে যান।

আমির খান শৈশবে তাঁর পিতার কাছে সারেঙ্গী শেখা শুরু করেন। কিন্তু যন্ত্রের চাইতে তিনি বেশির সময় কণ্ঠের রেওয়াজ করতেন। প্রথাগতভাবে কণ্ঠসঙ্গীতের জন্য তাঁর বিশেষ কোনো গুরু ছিল না। এই সময় ইন্দোরে যত কণ্ঠসঙ্গীতশিল্পী গান পরিবেশনের জন্য আসতেন, তাঁদের সকলের গান শুনে তিনি শেখার চেষ্টা করতেন। ফলে তিনি বিভিন্ন ঘরনার একটি মিশ্ররীতিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠছিলেন। এই সময় তিনি তাঁর এক তবলা বাদক চাচার কাছে তবলার তালিম নেন।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে আমির খান মুম্বাই (সে আমলের বোম্বাই) যান। সেখানে তিনি কিছু সঙ্গীত আসরে যোগাদন করেন। এই সময় প্রায় অর্ধ-ডজন ৭৮-আরপিএম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। তাঁর সঙ্গীতের আসরের পরিবেশনা এবং রেকর্ডের গান তেমন সাড়া জাগাতে পারে নি।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতার পরামর্শে মধ্যপ্রদেশের রাইগড় সংস্থানের মহারাজ চক্রধর সিংহের দরবারে চাকরি নেন। এই বৎসরেই মহারাজ চক্রধর সিংহের পক্ষে মির্জাপুরে সঙ্গীত সম্মেলনে যোগদান করেন। সঙ্গীত আরম্ভের ১৫ মিনিট পর শ্রোতারা বিরক্তিকর ধুয়া তুলে তাঁর গান থামিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা তাঁকে ঠুমরি গান করার পরামর্শ দিলে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে আসর ত্যাগ করেন।

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে আমির খানের পিতা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি এই রাজসভা ত্যাগ করে আবার মুম্বাই যান। পড়ে তাঁর বন্ধুদের পরামর্শে কলকাতা আসেন। কলকাতায় তাঁর হোটেল থাকার মতো সামর্থ ছিল না। শেষ পর্যন্ত পূর্বপরিচিত ব্যক্তির কাছে আশ্রয় পান। কিছুদিনের মধ্যে, তিনি কলকাতার বৌবাজার-সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ের কাছে একটি বাড়িতে দারোয়ানের কাজ পান। তাঁর চাকরি ছিল রাতে।

সে সময়ে কলকাতায় বড়ে গোলাম আলী খান, কলকাতার জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। তাঁর সাথে টক্কর দিয়ে কলকাতায় রাগ সঙ্গীতে জায়গা করে নেওয়াটা বেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে ঠুংরি গানে বড়ে গোলাম আলী খান অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আর ঠুংরি গান আমির খান অপছন্দ করতেন। এই সময় আরও বেশি করে খেয়াল গানের রেওয়াজ শুরু করেন। তিনি আব্দুল ওয়াহিদ খানের বিলম্বিত খেয়াল, রজব আলী খানের তান এবং আমান আলী খানের বিস্তারের আদর্শে তিনি নিজের স্বতন্ত্র গায়কী গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর গায়কীতে ধ্রুপদের গাম্ভীর্ষ এবং খেয়ালের রাগ-বিস্তারের সৌন্দর্যকে সমন্বিত করে একটি স্বতন্ত্র রাগরূপকে প্রকাশ করার সাধনা করেছেন। ফলে তাঁর গানে আত্ম নিবেদনের অন্তর্মুখী রূপ পাওয়া যায়। তাঁর গাম্ভীর্য এবং পরিশিলীত রাগ রূপায়ণ রাজকীয় ভঙ্গীকেই প্রকাশ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীতের প্রকাশ ঘটে আত্মা এবং মনের গভীর সংবেদনশীলতা থেকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি ঝুমরা এবং একতালে রাগ পরিবেশেন করতেন। ত্রিতাল এবং অন্যান্য তালে তিন সরল ঠেকাকে অবলম্বন করে গান করতেন। যদিও তিনি নিজে সারেঙ্গী বাজাতে পারতেন, কিন্তু নিজের গানে সারেঙ্গীকে বেশি গুরুত্ব দেন নি। লয়করী তিনি খুব বেশি করেন নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর গানে বোলতান, আকার তান শোনা যায়। গান করার সময় যন্ত্র হিসেবে তিনি তবলা এবং ছয় তারের তানপুরা ব্যবহার করতেন।

খেয়াল গান পরিবেশন করে তিনি ভারতবর্ষের অন্যতম কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রেকর্ড ছাড়াও তিনি বৈজুবাওরা, স্বভাব, ঝনক ঝনক পায়েল বাজে ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া 'গালিব' তথ্য চিত্রে গজল গানও করেছেন।

তিনি সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিষ্যরা হলেন অমরনাথ, এ কানন, অজিতসিংহ পৈঁতা, আখতার সাদমানি, অমরজিৎ কৈয়ুর, ভীমসেন শর্মা, গজেন্দ্র বক্সি, হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর, কমল বোস, কঙ্কনা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুন্দ গোস্বামী, মুনির খাঁ, পূরবী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

স্বীকৃতি
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পান পদ্মভূষণ

পরিবার:
তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন সেতার বাদক ওস্তাদ বেলায়েত খানের বোন জীনাত। পরে এই স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।  এই ঘরের তাঁর একটি কন্যা সন্তান জন্মে। এর নাম ফরিদা।

তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মুন্নী বাঈ। এই ঘরের একমাত্র পুত্র সন্তানের নাম একরাম আহমেদ।

তাঁর তৃতীয় স্ত্রী রায়সা বেগম ছিলেন আগ্রার ঠুংরি গায়িকা মুস্তারি বেগমের কন্যা। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই বিবাহ করেছিলেন, মুন্নী বাঈ-এর বিনা অনুমতিতে। বিবাহের পর মুন্নী বাঈ সংসার ত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। অনেকে মনে করেন, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। রায়সার গর্ভে তাঁর পুত্র সন্তান হায়দার আমির (শাহবাজ খান) জন্মগ্রহণ করেন।