আড়ানা
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতেকানাড়া অঙ্গের রাগ বিশেষ। আনুমানিক ১৬৮১ খ্রিষ্টাব্দে লোচন পণ্ডিত রচিত 'রাগতরঙ্গিণী' গ্রন্থে এই রাগের উল্লেখ রয়েছে। এই রাগটি ছিল দীপক সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত পণ্ডিত ভাবভট্টের (১৬৭৪-১৭০৯) 'অনুপসঙ্গীতরত্নাকর' গ্রন্থে 'কর্ণাট ভেদাঃ' নামে আড়ানা রাগের উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে- কর্ণাট ও মেঘের সমন্বয়ে আড়ানা রাগের উৎপত্তি হয়েছিল। এর মেল ছিল কর্ণাট। উল্লেখ্য এই সময় কর্ণাট মেল ছিল খাম্বাজের অনুরূপ। হনুমন্ত মতে কানাড়া ছিল দীপক রাগের অন্তর্গত রাগিনী বিশেষ। 'রাগতরঙ্গিণী'-তে কর্ণাট রাগসংস্থিততে- অড়ান (অড়ানা, আড়ানা)-এর উল্লেখ আছে

আড়ানা মেল বা ঠাট ভেদে ৩ প্রকার। এগুলো হলো-
১. আসাবরী ঠাট (কোমল ধৈবতযুক্ত)
২. আসাবরী ঠাট ধৈবত বর্জিত
৩. কাফি ঠাট (শুদ্ধ ধৈবত যুক্ত)
আশাবরী ঠাটের আড়ানা
এর আরোহণে শুদ্ধ নিষাদ এবং অবরোহণে কোমল নিষাদ ব্যবহৃত হয়। এর আরোহে গান্ধার এবং অবরোহে ধৈবত বর্জিত হয়। আবার কেউ কেউ অবরোহতে ধৈবত বক্রভাবে ব্যবহার করে থাকেন। রাগটির মুখ্য চলন মধ্য ও তার সপ্তকে। এর প্রকৃতি চঞ্চল। এটি কানাড়া অঙ্গের রাগ। এই রাগের সাথে বাহার-এর কিছুটা মিল পাওয়া যায়।

আরোহণ:  স র ম প দ ন র্স      
অবরোহণ: র্স ন র্স দ ণ প ম প জ্ঞ ম র স
ঠাট: আশাবরী
জাতি: ষাড়ব-সম্পূর্ণ
বাদীস্বর: র্স
সমবাদী স্বর: প
অঙ্গ: পূর্বাঙ্গ।
সময়: রাত্রি তৃতীয় প্রহর
পকড় : র্সা, দ, ন র্স, দ, ণ, প ম প, জ্ঞ ম র স।

আলাপ: স র ম প দ ন র্স, দ ণ প, ম প জ্ঞ ম র স, ণ প ম প স, ধ ণ প, ণ ণ প ম প, ম প জ্ঞ ম র স।

আসাবরী ঠাট ধৈবত বর্জিত আড়ানা
এর চলন প্রায় কোমল ধৈবতযুক্ত আড়ানার মতই। এতে শুধু ধৈবত বর্জিত হয়। ফলে রাগটি ঔড়ব-যাড়ব জাতির রাগে পরিণত হয়।  এর সাথে নায়েকী কানাড়ার মিল রয়েছে। বর্তমানে আড়নার এই রূপটি অপ্রচলিত।

কাফি ঠাটের আড়ানা
আড়ানার এই রূপটিতে কোমল ধৈবতের পরিবর্তে শুদ্ধ ধৈবত ব্যবহৃত হয়। এক সময় বাংলা গানে এই আড়ানার অল্প প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এই আড়ানার প্রচলন নেই।


তথ্যসূত্র: