ঠাট
ঠাট [অভিধান]

উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে রাগের বর্গীকরণের জন্য ব্যবহৃত একধরনের স্বর-কাঠামো। দক্ষিণ ভারতে একে বলা হয় মেল। আর পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এর সমতুল্য উপাদান হলো স্কেল

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ঠাট-ভিত্তিক রাগের বিন্যাসের আগে, প্রচলিত ছিল পুরুষবাচক রাগিভিত্তিক শ্রেণিকরণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিশেষ কিছু রাগকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এদের অধীনস্থ রাগগুলোকে রাগিণী এবং এরা রাগগুলোর স্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হতো। কোনো কোনো মতে রাগ-রাগিণী দম্পতির পুত্র এবং পুত্রবধু হিসেবে বিশেষ কিছু রাগ যুক্ত করা হয়েছিল।

 

১. একটি স্বরসপ্তকের ১২টি স্বরের ভিতর থেকে ৭টি স্বর নিয়ে একটি ঠাট গঠিত হবে।

২. স্বরসপ্তকের স, প এবং  বাকি ৫টি স্বরের শুদ্ধ বা বিকৃত স্বরের যে কোন একটি নিয়ে ঠাট গঠিত হবে।

৩. কোন স্বর একাধিক বার গৃহীত হবে না।
৪. স্বরগুলির চলন হবে সরল। মূলত আরোহণ অবরোহণ ব্যতীত এর অন্য ধরনের ব্যবহার নেই।

উত্তরভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ঠাটের প্রচলিত রূপটি বিষ্ণুনারয়াণ ভাতখণ্ডে কর্তৃক প্রণীত। এই মতে ঠাটের সংখ্যা ১০টি। ভাতখণ্ডের  হিন্দুস্তানী সঙ্গীত পদ্ধতি ক্রমিক পুস্তক মালিকা গ্রন্থানুসারে এই ১০টি ঠাটের স্বরবিন্যাস নিচে তুলে ধরা হলো। 
 

  ১. বিলাবল : স র গ ম প ধ ন র্স
২.
খাম্বাজ : স র গ ম প ধ ণ র্স
৩.
কাফি : স র জ্ঞ ম প ধ ণ র্স
৪.
শাবরী : স র জ্ঞ ম প দ ণ র্স
৫.
ভৈরবী : স ঋ জ্ঞ ম প দ  ণ র্স
৬.
ভৈরব : স ঋ গ ম প দ ন র্স
৭.
কল্যাণ : স র গ হ্ম প ধ ন র্স
৮.
মারবা : স ঋ গ হ্ম প ধ ন র্স
৯.
পূরবী : স ঋ গ হ্ম প দ ন র্স
১০.
টোড়ি : স ঋ জ্ঞ হ্ম প দ ন র্স

 

ত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে রাগের মৌলিক কাঠামোগত রূপ হিসেবে ঠাট বা মেলের যে পরিচয় বর্তমানে পাওয়া যায়, তা একদিনে গড়ে উঠে নি। ভারতীয় রাগসঙ্গীতের গোড়ার দিকে রাগসমূহের শ্রেণিকরণের প্রক্রিয়াটিই ছিল না। গ্রাম পদ্ধতি, রাগ-রাগিণী পদ্ধতি এবং দক্ষিণ ভারতীয় ৭২ মেলের ধারণার উপর ভিত্তি করে, পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে ১০টি ঠাট নির্ধারণ করেছিলেন।
        [দেখুন: মেল বা ঠাটের ইতিহাস।]

 


তথ্যসূত্র:
ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস । প্রথম খণ্ড। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ
। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। বৈশাখ ১৩৭২।
রাগ ও রূপ। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ। জুলাই ১৯৯৯।
সরল বাংলা অভিধান। সুবলচন্দ্র মিত্র
বঙ্গীয় শব্দকোষ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
হিন্দুস্তানী সঙ্গীত পদ্ধতি ক্রমিক পুস্তক মালিকা । বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে