স্কেল
scale, musical scale
বাংলাতে স্কেল শব্দটি এসেছে ইংরেজি
scale
থেকে। এই
শব্দের উৎস ছিল
প্রাচীন ল্যাটিন scalae
।
এর অর্থ ছিল ধাপ বা মই।
এই শব্দটি হয়ে মধ্যযুগীয় ল্যাটিন ভাষায় দাঁড়ায় scala
(মই)।
এই শব্দই
মধ্যযুগীয়
ইংরেজি ভাষায়
scale
হিসেবে গৃহীত হয়।
ইংরেজি স্কেল শব্দটি আরও অনেকক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই সকল
অর্থগুলো থেকে সঙ্গীতে ব্যবহৃত অর্থকে বিশেষভাবে বুঝানোর জন্য একে বলা হয়
musical scale
।
পাশ্চাত্য সঙ্গীত রীতিতে
সঙ্গীতোপযোগী শব্দের ব্যবহারিক পরিমাপ হলো স্কেল।
সঙ্গীতোপযোগী শব্দ
হলো যৌগিক শব্দ। এর সর্বনিম্ন কম্পাঙ্কের ধ্বনিকে বলা হয় মূল সুর আর উচ্চ
কম্পাঙ্কের ধ্বনিগুলোকে বলা হয় উপসুর। যখন উভয় ধরনের সুরের সমন্বয়ে স্নিগ্ধ,
মনোমুগ্ধকর, আনন্দদায়ক ধ্বনির উদ্ভব হয়, তখন তাকে বলা হয়
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি।
মূলত
উপসুরগুলো সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির রঞ্জকতা সৃষ্টি করে।
যে কোনো সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির মূল সুরের কম্পাঙ্ককে দ্বিগুণ করলে, একটি নতুন
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি পাওয়া যায়। এর ফলে আদি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি এবং উৎপন্ন নতুন
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির নিয়ে যে পরিমাপটি পাওয়া যায়, তাকেই বলা হয় স্কেল। ধরা যাক কোনো
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির মৌলিক ধ্বনির মান যদি ৪৪০ হার্টজ্ হয়, তাহলে তার দ্বিগুণ মান
হবে ৮৮০ হার্টজ। তাহলে ৪৪০-৮৮০ হার্টজ্ হবে একটি স্কেল।
কম্পাঙ্কের বিচারে স্কেলের মূলসূত্রটি
দাঁড়ায়
x>2x
সূত্রে। এখানে
x-এর
মান যে কোনো কম্পাঙ্কের সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি।
গাণিতিক সূত্র যাই হোক, সঙ্গীতে তা ব্যবহারের উপযুক্ত কিনা সেটা বড় ব্যাপার। গাণিতসূত্রে যত সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি পাওয়া যাবে, ততগুলোই স্কেল তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সঙ্গীতজগতে স্কেল নির্ণয়ে আদ্য ধ্বনি নির্বাচনটা বড় সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে তার যন্ত্রের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছিল। কারণ, তারযন্ত্রের শিল্পীরা যখন তার বাঁধতেন, তখন তাঁর সাঙ্গীতিক বোধ থেকে একটি স্থানকে আদ্য স্বর ধরে নিয়ে বাঁধতেন। একক বাদনে এটা সমস্যা না করলেও ঐক্যবাদনে সমস্যা হতোই। এই কারণে নানা তর্ক বিতর্কের ভিতর দিয়ে পাশ্চাত্য সঙ্গীতগুরুরা ৪৪০ হার্টজের নাম দিয়েছিলেন A। যেহেতু A একটি স্কেল, তাহলে এর সীমা হবে ৪৪০-৮৮০ হার্টজ। এই সীমার ভিতরে যত সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি থাকবে, তার সবগুলোই A-স্কেলের অধীনে থাকবে। বাস্তবে একটি স্কেলের ভিতরে সকল সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিকে ব্যবহার করা যায় না। এর পিছনে দুটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছিল।
শনাক্তকরণ সমস্যা: একটি স্কেলের ভিতরের সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিগুলোর কম্পাঙ্ক যখন খুব কাছাকাছি হয় তখন তা শনাক্ত করা যায়। ধরা যাক একটি সঙ্গীতোপযোগ ধ্বনির কম্পাঙ্ক মান ৪৪০ হার্ট্জ, অপরটির ৪৪০.২৫ হার্টজ। শ্রবণেন্দ্রিয়ের কাছে উভয় ধ্বনি একই মনে হবে। তাই তাঁরা বিশেষভাবে নজর দিয়েছিলেন প্রচলিত সুরের উপর। মানুষ সহজাত প্রবৃত্তে যে সুরের ভিতর দিয়ে স্বর চিনতে পারে, তার উপর ভিত্তি করে স্কেলের ভিতরে ব্যবহারের উপযোগী ধ্বনির সন্ধান করেছিলেন।
নান্দনিকতা: সুরের ভিতরে যে সৌন্দর্য রয়েছে, তার বিচারে যেকোনো সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি ব্যবহার করা যায় না। সুসমন্বয় হীন দশায় কোনো সঙ্গীতোপযোগীর মিশ্রণই সুন্দর হয়ে উঠে না।
স্কেলের এই ধারণা
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, প্রশ্ন উঠলো একটি স্কেলে কতগুলো সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি থাকবে এবং একটি স্কেলের
অন্তর্গত কতটি ধ্বনিকে সঙ্গীতে ব্যবহার করা যাবে এবং সেগুলো কোন আদর্শে নির্দিষ্ট হবে? কারণ নানা দেশে নানান
সঙ্গীতগুরুদের মধ্যে স্বরের সংখ্যা এবং কম্পাঙ্কের হিসাব এক ছিল না। এই সকল সমস্যা
সমাধানের জন্য ইউরোপে বহুদিন ধরে গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণার সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল সমগুণান্বিত স্কেল (equal
tempered scale)-এর
ধারণা। গবেষকরা একটি স্কেলের অন্তর্গত সকল সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিকে সম-শ্রবণ দূরত্বে
ভাগ করে একটি মীমাংশায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। এর ফলে সৃষ্ট সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিগুলোর একটি সাধারণ বিধির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার
পথে অগ্রসর হয়েছিল বটে, সমস্যাটা রাতারাতি মিটে যায় নি।
শুরুর দিকে
পাশ্চাত্য সঙ্গীতে
স্বাভাবিক স্বরজ্ঞান থেকে,
একটি
স্কেলের ভিতরে সাতটি মৌলিক সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি নির্বাচন করা হয়েছিল। এগুলোর নাম
দেওয়া হয়েছিল
A
B C
D
E F G ।
স্কেল পূর্ণতা পায় আদ্য ধ্বনির দ্বিগুণিতক ধ্বনিকে সাথে নিয়ে। তাই
A
স্কেলের পূর্ণরূপ দাঁড়িয়েছিল-
A
B C D
E F G Aʹ
(Aʹ
=
A-এর
দ্বিগুণিতক কম্পাঙ্ক মান)
[দেখুন: পাশ্চাত্য স্বরপদ্ধতি ]