পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডে
১৮৬০-১৯৩৩
খ্রিষ্টাব্দ
প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ, হিন্দুস্থানী স্বরলিপি প্রণেতা।
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতির ১০
ঠাটের প্রণেতা।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগস্ট মুম্বাই-এর বালেশ্বর নামক একটি গ্রামের ব্রাহ্মণ
পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে পরে পুনের ডেকান
কলেজে লেখাপড়া করেন। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিএ পাশ করেন। এরপর ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি এলএলবি পাশ করেন।
আইন ব্যবসার
জন্য তিনি করাচিতে যান। কিন্তু সেখানে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে তিনি মুম্বাইতে
ফিরে আসেন।
সঙ্গীতজীবনের শুরু হয়েছিল তাঁর ঘরেই। পরিবারে গানের চর্চা ছিল। সেই সূত্রে তিনি
ভক্তিমূলক গান গাইতেন। তাঁর কলেজ জীবনে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে
উঠেন। তিনি সেতারে তালিম নেন শেঠ বল্লভদাস ও গোপালগিরি জয়রাজগিরির কাছে।
রাওজি বাও-এর কাছে ধ্রুপদ শেখেন। এরপর তিনি পণ্ডিত বেলবাগকর, ওস্তাদ আলী হুসেন খান,
ওস্তাদ বেলায়েত হুসেন খান-এর কাছে তালিম নেন। এই সময়ে তিন মুম্বাইয়ের
জ্ঞান-উত্তেজকমণ্ডলী নামক বাদ্যযন্ত্র বৃত্তের সদস্য হন। ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতের
পাশাপাশি সঙ্গীতের তাত্ত্বিক বিষয় জানা আবশ্যক, এই ভাবনা থেকে তিনি শাস্ত্রীয়
সঙ্গীতের উপর গবেষণা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে নানা
ধরনের তথ্যাদি সংগ্রহ করা শুরু করেন। ওকালতি পেশা ত্যাগ করে, তিনি এই সাঙ্গীতিক
অভিযান শুরু করেন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে।
এই অভিযানকালে তিনি প্রাচীন সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থাদি সংগ্রহ ও
পাঠ করেন। একই সাথে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কলাকারদের কাছে রক্ষিত বন্দেশ ও
সুর সংগ্রহ করেন। এই সকল সুরকে ধরে রাখার জন্য তিনি একটি স্বরলিপি লিখন পদ্ধতি
উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতি বর্তমানে
হিন্দুস্থানী স্বরলিপি নামে
পরিচিত। তিনি তাঁর সংগৃহীতে গানের সুর এই স্বরলিপিতে রচনা
করেছিলেন।
এই অভিযানের শুরুতে তিনি
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ করেন এবং দক্ষিণ ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হন।
দক্ষিণ ভারতের পণ্ডিত ব্যঙ্কটমুখীর ৭২ ঠাট দেখে তিনি উত্তর ভারতীয় ঠাট-এর
প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই সূত্রে তিনি উত্তর ভারতীয় রাগগুলোকে ১২টি ঠাটের
অন্তর্গত করে একটি শ্রেণিবিন্যাস করেন।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উত্তর ও পূর্ব ভারতে এই সাঙ্গীতিক অভিযানে বের হন।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি কলকাতায় আসেন। এই সময় বাংলাদেশের
তৎকালীন প্রখ্যাত পণ্ডিত
শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর-এর সাথে দেখা করেন। সে সময় তিনি বাংলা লোকগান এবং
বিষ্ণুপরী ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিষয়ে অবগত হন। উত্তর ও পূর্ব ভারতের এই
অভিযান শেষে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের আলোকে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে
প্রকাশিত এই গ্রন্থটির নাম স্বরমালিকা।
যথার্থ সঙ্গীত শিক্ষা প্রদানের
জন্য তিনি বরোদায় একটি সঙ্গীত বিদ্যায়তন চালু করেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বরোদায় এই
বিদ্যায়তনটি সরকারি স্বীকৃতি পায়। এই বৎসরই বরোদায় তিনি একটি সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনে
সঙ্গীতগুরুদের সাথে আলোচনা করে রাগের শুদ্ধরূপ নির্ধরাণ করার চেষ্টা করেন। এই সময় তাঁর ১২
ঠাটের ধারণা অনেকে গ্রহণ করেন। তবে অনেক সঙ্গীতগুরু এর বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু
শেষ পর্যন্ত ১২ ঠাটের বিন্যাস প্রতিষ্ঠা পায়। অবশ্য ১২ ঠাটের বিন্যাস যথার্থ কিনা এ
নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে।
বরোদায় এই বিদ্যায়তন
প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে
সাহায্য করেছিলেন গোয়ালিয়র
মহারাজা। পরে এই মহারাজের সহায়তায় তিনি
মাধব সংগীত কলেজ
প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ রাই উমানাথ বালি এবং ডঃ রাই রাজশ্বেরী বালির সহায়তায়
Marris College of Music
প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়
Bhatkhande College of Hindustani Musi
।
আর বর্তমানে এই কলেজের নাম
Bhatkhande Music Institute (Deemed University)।
এই বিদ্যায়তনের পাঠক্রম হিসেবে তিনি রচনা করেন সঙ্গীত ক্রমিক পুস্তক মালিকা।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পক্ষাঘাতে
আক্রান্ত হন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি :
- স্বরমালিকা। ১৯০৯
খ্রিষ্টাব্দ।
- সঙ্গীত ক্রমিক
পুস্তক মালিকা (১-৫ খণ্ড)
- হিন্দুস্থানী সঙ্গীত পদ্ধতি।
তথ্যসূত্র
: