হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে—
চৌষট্টি
যোগিনীর মধ্যে ভৈরবী প্রধানা।
ইনি ছিলেন দুর্গার সহচরী ও তাঁরই মত পূজনীয়া।
ইনি বিভিন্ন সময়ে দেবীর সহযোগী শক্তি হিসাবে দেবীকে সাহায্য করতেন।
দক্ষযজ্ঞে দক্ষ মহাদেবের নিন্দা করলে, সতীর আত্মহত্যা করেন। এরপর মহাদেব দক্ষযজ্ঞ
ধ্বংস করেন এবং সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের
উপক্রম হয়।
পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য− বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রের দ্বারা সতীর দেহকে ৬৪ খণ্ডে
বিভাজিত করেন।
সতীদেহের খণ্ডিত
অংশ যে সকল পতিত হয়েছিল,
সে সকল স্থান
পীঠস্থান হিসেবে তীর্থভূমিতে পরিণত হয়।
এই সকল পীঠস্থানের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারা সাধারণ ভাবে ভৈরব নামে অভিহিত হন। ভৈরবী
হলো— ভৈরবের স্ত্রী সত্তার নাম। এই ঠাট ও
রাগের নাম পৌরাণিক দৈবসত্তা ভৈরবীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
রাগশ্রেণিকরণে ব্রহ্মা, কল্পনাথ, হনুমন্ত ও ভরত মতে-
ভৈরবীকে রাগিণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই রাগিণী ছিল
ভৈরব রাগের
অধীনে
পত্নী
হিসেবে।
আদিকালে ভৈরবী ছিল কাফি ঠাটের
মতো। লোচন পণ্ডিতের রচিত 'রাগতরঙ্গিনী'-তে এই রাগের চলন সম্পর্কে বলা হয়েছে- কাফি
ঠাটের স্বরগুলোকে সোজা আরোহণ -অবরোহণ করলে ভৈরবীর রূপ পাওয়া যাবে। লোচন পণ্ডিত আরও
উল্লেখ করেছেন, কারো কারো মতে এই রাগে কোমল ধৈবত ব্যবহৃত হয়। এই বর্ণনা থেকে অনুমান
করা যায়, যে কাফি ঠাটের সাথে কেউ কেউ কোমল ধৈবত ব্যবহার করতেন। এক্ষেত্রে এর
আরোহণ-অবরোহণ হবে-
স র জ্ঞ ম প দ ণ র্স-
র্স ণ দ প ম জ্ঞ র স।
এই বিন্যাসে যে ভৈরবী পাওয়া যায়, তা আশাবরীর অনুরূপ। যদি চলন অনুসারে এই রাগটিকে
ভৈরবী বলা যায়, তা হলে তা আশাবরী ঠাটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারতে এই রাগটি
প্রচলিত আছে। বেঙ্কটমখীর মতে এর নাম ভৈরবী, কিন্তু গোবিন্দাচার্যের তালিকায় এই
রাগের নাম পাওয়া যায় 'নটভৈরবী'। উত্তরভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে ভৈরবীতে কোমল ঋষভের
ব্যবহৃত হলেও, পাশাপাশি শুদ্ধ ঋষভের ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়। পুণ্ডরীক তাঁর
'রাগমঞ্জরী' গ্রন্থে ভৈরবীকে 'গৌরী (একালের ভৈরব) ঠাটের অন্তর্ভুক্ত করেছন। সব
মিলিয়ে ভৈরবীর রাগের ঠাট পাওয়া যায়, ভৈরব, কাফি, আশাবরী এবং বর্তমানে প্রচলিত
ভৈরবী।
বর্তমানে
ভৈরবীকে একটি
স্বতন্ত্র ঠাট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
এর কাঠমো―
স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ র্স।
বর্তমানে
ভৈরবী
রাগিণীকে ভৈরবী ঠাটের জনক রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র :
এই ঠাটের অন্তর্গত রাগগুলি হলো––