অনুকূলচন্দ্র
ঠাকুর
বাঙালি হিন্দু ধর্মসাধক।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই সেপ্টেম্বর (৩০ ভাদ্র ১২৯৫ বঙ্গাব্দ) বাংলাদেশের পাবনা জেলার হেমায়েতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এঁর পিতার নাম ছিল শিবচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন পেশায় ছিলেন ঠিকাদার। তাঁর মায়ের নাম মনোমোহিনী দেবী। উল্লেখ্য মনোমোহিনী দেবী ছিলেন উত্তর ভারতের যোগী হুজুর মহারাজের শিষ্য। শৈশবে অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছে ধর্ম-শিক্ষা লাভ করেন।
তিনি পাবনা ইনস্টিটিউশানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর, পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল থেকে হোমিওপ্যাথি পাশ করে পাবনায় ফিরে আসেন এবং হেমায়েতপুরে চিকিৎসা শুরু করেন।
এই সময় তিনি দৈহিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক শান্তির জন্য ব্যবস্থাপত্র দিতেন। মনস্তাতাত্ত্বিক বিষয়ের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে অধ্যাত্মিক দর্শনেও অনুপ্রাণিত করতেন। ধর্মীয় সাধনার সূত্রে তিনি ধর্ম প্রচারের জন্য কীর্তন দল গঠন করেন। কথিত আছে কীর্তনের আসরে তিনি অনেক সময় আবিষ্ট হয়ে, নানা ধরনের আধ্যাত্মিক কথা উচ্চারণ করতেন। এই সকল কথা সংগৃহীত হয়ে পরে পূণ্যপুঁথি নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই সময় থেকে স্থানীয় লোক তাঁকে ঠাকুর বলা শুরু করে।
সৎকর্ম, সৎনিষ্ঠা, সত্য কথা ইত্যাদির দ্বারা আত্মিক উন্নতির জন্য তিনি এই সৎসঙ্গ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে তিনি চারটি কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে সৎসঙ্গের আদর্শকে যুক্ত করে দেন। এই আদর্শগুলো হলো— শিক্ষা, কৃষি, শিল্প ও সুবিবাহ। আর এই আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্থাপন করেন তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, ছাপাখানা-সহ প্রকাশনা কার্যক্রম।
পাবনার সৎসঙ্গ আশ্রম |
পাবনার সৎসঙ্গ আশ্রমটি আদিতে সাদামাঠা বৈশিষ্টে নির্মিত হয়েছিল। তবে বর্গাকৃতির ভবনটির শীর্ষদেশ চারটি ত্রিভূজ আকৃতির ক্রমহ্রাসমান ছাদে আচ্ছাদিত ছিল। এ মন্দিরের শিখর ক্ষুদ্রাকৃতির কলস আকর্ষণীয় বৈশিষ্টমণ্ডিত ছিল। মন্দিরের পাশেই শ্রী শ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের পূজার ঘর অবস্থিত। এ ক্ষুদ্র ভবনটি গম্বুজবিশিষ্ট এবং ধনুক বক্র কার্নিশ ও গম্বুজের চারকোণে চারটি দৃষ্টিনন্দন শিখর ধারণ করে এক বৈচিত্রময় বৈশিষ্টের অবতারণা করেছে।
শ্রী
শ্রীঅনুকূল চন্দ্রের পিতা-মাতার স্মৃতিরক্ষার্থে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল।
মন্দিরের সম্মুখ প্রাসাদে 'স্মৃতি মন্দির' কথাটি পাথরের উপরে উৎকীর্ণ আছে।
অনুকূলচন্দ্র 'সৎসঙ্গ' নামে একটি জনহিতকর সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। প্রকৃত অর্থে
অনুকূল ঠাকুর মানবকল্যাণে তাঁর জায়গা-জমি যথাসর্বস্ব উৎসর্গ করে গেছেন।
স্মৃতিমন্দিরটি অন্যান্য ইমারতের তুলনায় এখনো সুসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। সম্প্রতি নব
নির্মিত সৎসঙ্গ-আশ্রম-মন্দির সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্য নিদর্শনটি সহজেই সবার দৃষ্টি
আকর্ষণ করে। এখানে শ্রী শ্রীঅনুকূল চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে
বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঐ সময় এখানে প্রচুর ভক্ত ও অতিথির সমাগম হয়।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিহারের দেওঘরে একটি আশ্রম গড়ে তোলেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে
ভারত বিভাজিত হওয়ার পর তিনি আর পাবনাতে ফিরে আসেন নি। ১৯৬৯
খ্রিষ্টাব্দে ২৬ জানুয়ারিতে দেওঘরে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী
সত্যানুসরণ
পুণ্যপুথি
অনুশ্রুতি (৬ খণ্ড)
চলার সাথী
শাশ্বতী (৩ খণ্ড)
বিবাহ বিধায়না
সমাজ সন্দীপন
যতি অভিধর্ম
সূত্র :
http://www.banglapedia.org/