অশ্বিনীকুমার দত্ত
ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি পিতার কর্মস্থল পটুয়াখালীতে অশ্বিনীদত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল বৃহত্তর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার অন্তর্গত বাটাজোর নামক গ্রাম। তাঁর পিতা ব্রজমোহন দত্ত ছিলেন সাব-জজ এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা।

তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল গুরুমশাইয়ের কাছে।
১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে অশ্বিনীকুমার রংপুর থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন। 

১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এমএ এবং বিএল পাশ করেন। এরপর তিনি শ্রীরামপুর চাতুরা ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি বরিশালে আইন ব্যবসার জন্য চলে আসেন।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে ব্রাহ্ম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট রমেশচন্দ্র দত্তের পরামর্শে আইন ব্যবসা ত্যাগ করে পিতার নামে ব্রজমোহন স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুন তিনি ব্রজমোহন স্কুল চালু করতে সক্ষম হন। উল্লেখ্য বরিশাল শহরের মধ্যে নিজের দান করা এক বিরাট এলাকায় এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বরিশাল মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের কমিশনার নিযুক্ত হন।
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে দুরনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য পিপলস্ এ্যাসোসিয়েশন স্থাপন করেন এবং জাতীয় কংগ্রেসের অনুমোদন লাভ করতে সক্ষম হন। এই বৎসরে তিনি বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কাছে দীক্ষা নেন। উল্লেখ্য, এই বৎসরে তাঁর উদ্যোগে বাখরগঞ্জ ডিস্ট্রিক বোর্ড স্থাপিত হয়।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্ত্রীশিক্ষার জন্য এই বৎসরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বাখরগঞ্জ হিতৈষণী সভা'। এই বৎসরে তিনি মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধি হয়ে যোগদান করেন। এই অধিবেশনে তিনি ভারতে আইনসভা প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেন।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। জনমত গড়ে তোলার জন্য তিনি বরিশালের টাউন হলে সভার আয়োজন করেন নিজে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। এই সময় তাঁর ভাবশিষ্য মুকুন্দ দাস তাঁরই অনুপ্রেরণায় স্বদেশী গান এবং যাত্রাপালা রচনা করে তা গ্রামে গ্রামে পরিবেশন করা শুরু করেছিলেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় মুকুন্দ দাস রচনা করেছিলেন মাতৃপূজা, পথ ও সাথী নামক তিনটি নাটক। উল্লেখ্য, এই তিনটি নাটকই ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। মাতৃপূজা নাটকের জন্য মুকুন্দ দাসের প্রায় আড়াই বছর কারাবাস এবং জরিমানা হয়েছিল।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসের স্বদেশী আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশে তিনি 'স্বদেশ বান্ধব সমিতি' নামক একটি দল গড়ে তোলেন। স্বল্প সময়ের ভিতরে তিনি এই সমিতির ১৭৫টি শাখা স্থাপন করতে সক্ষম হন। এই বৎসরেই এই সমিতির উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি লক্ষ্ণৌ জেলে বন্দি থাকেন। এই সময়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি জেল থেকে ফিরে এসে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারি সাহায্য গ্রহণ করেন।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজ এবং স্কুল পৃথক দুটি ট্রাস্টির অধীনে বিভক্ত করেন।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির অধিবেশনে সভাপতি হন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে যোগাদান করেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল প্রাদেশিক সমিতির অধিবেশনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হন। এই বৎসরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাবে তিনি সমর্থন জানান। এই বৎসরে ব্রজমোহন স্কুল জাতীয় বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এই বৎসরে গান্ধীজী বরিশালে আসেন এবং তিনি অশ্বিনীকুমারকে শ্রদ্ধা জানান।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে আসামের চা-বাগানের কুলদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে আসাম-বাংলা রেলপথ ও স্টিমার কোম্পানির ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। এই ধর্মঘটে বরিশাল শাখার পক্ষে তিনি সভাপতিত্ব করেন।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর রচিত গ্রন্থাবলি
ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, প্রেম, দুর্গোৎসবতত্ত্ব, আত্মপ্রতিষ্ঠা, ভারতগীতি।

সূত্র :
বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড। সাহিত্য সংসদ। জানুয়ারি ২০০২
বাংলা বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর, ১৯৭২।