আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার
১৯৬৪-১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যাঞ্চেলর। তিনি বাংলার বাঘ হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন।

১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। মায়ের নাম জগৎতারিণী দেবী।

তাঁর প্রাথমিক পাঠ শুরু হয়েছিল ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া স্কুলে। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাময়িকভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। পরে ১২ বছর বয়সে তিনি ভর্তি হন ভবানীপুরের সাউথ সাবার্বন স্কুলে।

১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশুতোষ
এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সকল পরীক্ষার্থীর ভিতরে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিলেন
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে এফ,এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর ভিতরে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। এই সময় তিনি ঈশান বৃত্তি লাভ করেছিলেন।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে গণিতে এম.এ পাস করেন। এই সময় তিনি আইন নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। এই সময়ের ভিতরে তাঁর বেশ কিছু গণিত শাস্ত্রে মৌলিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এবং বেশ সাড়া ফেলে। এই সূত্রে
‘রয়্যাল অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন’ এবং ‘রয়্যাল সোসাইটি অব এডিনবরা’-র ফেলো নির্বাচিত হন। পাশাপাশি ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’-র সদস্য হন।

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদার্থবিদ্যায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এই ব্ছরে তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি (পি.আর.এস.) অর্জন করেন।
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ পরীক্ষার অঙ্কের পরীক্ষক ছিলেন।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন পরীক্ষা দিয়ে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। এই বছর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি, তখন থেকেই তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়  উচ্চতর গণিতের ওপর প্রায় বিশটির মতো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৮৮৭ থেকে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিনি গণিতের ওপর একাধিক অভিভাষন প্রদান করেন।

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় 'জিওমেট্টি অব কোণিক্স' নিবন্ধ।
১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগি্র লাভ করেন
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ট্যাগোর ল প্রফেসর হন।
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল 'ল অব পারপিচুইটিস' নিবন্ধ।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশনের সদস্য ছিলেন।
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে সদস্য হিসেবে ছিলেন।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কার্জন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।
১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ ও দ্বারভাঙ্গার মহারাজাকে পরাজিত করে তিনি ভারতীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯০৪ সালে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। এই সময় তাঁকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে সদস্যপদ এবং কলকাতা কর্পোরেশনের সদস্যপদ ত্যাগ করতে হয়েছিল।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমবারের মতো এ দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তাঁকে বিচারপতির পদ ত্যাগ করতে হয়েছিল।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচাপতি হন। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যাঞ্জেলর পদের জন্য দ্বিতীয়বার ডাক পেলে, তিনি বিচাপতির পদ ত্যাগ করেন। এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বারের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভাইস-চ্যান্সেলর পদ গ্রহণ করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভাইস-চ্যান্সেলরর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়েই তিনি কলা ও বিজ্ঞান শাখার পি.জি. কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের গর্ভনর লর্ড লিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করার অভিমত ব্যাক্ত করেন। তখন সরকারের সাথে এ বিষয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং পুনরায় উপাচার্যের দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান। এই তেজস্বিতার স্বীকৃতস্বরূপ জনগণের কাছ থেকে 'বেঙ্গল টাইগার' উপাধি পান। তিনি এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি, কলা ও বিজ্ঞান অনুষদে নতুন নতুন বিষয় খোলেন এবং নিজে সিলেবাস তৈরি করেন। কোনো রকম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় শিক্ষা কাঠামো প্রণয়নে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মে পাটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার