আউলচাঁদ
আনুমানিক ১৬৯৪-১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ। তাঁর জন্মমৃত্যুকাল নিয়ে প্রচর মতবিরোধ আছে।

কর্তাভজা উপধর্মের আদিগুরু। কর্তাভজাদের মতে- গৌরচাঁদ (শ্রীচৈতন্য) তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য আউলচাঁদ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি মুসলমান না হিন্দু ছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না।

আনুমানিক ১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্ত্বরে, আনুমানিক ১৭৫৪-৫৫ খ্রিষ্টাব্দ)পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কর্তাভজাদের মতে- তিনি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরে নদীয়া জেলার উলা বীরনগরে মহাদেব বারুই নামে এক বৈষ্ণব পানচাষির নিকট প্রতিপালিত হন। কথিত আছে, মহাদেব বারুই বালক আউলচাঁদকে পানের বরজের ভিতর একাকী বসে থাকতে দেখেছিলেন। নিঃসন্তান মহাদেব বারুই তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসেন এবং নিজ সন্তানের মতই প্রতোপালন করেন। এঁরা এঁরা নাম রেখেছিলেন পূর্ণচন্দ্র। যতদূর জানা যায়, তিনি তাঁর এই পালক পিতার কাছে অক্ষরজ্ঞান পান। একই সময় তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি হরিহর ঠাকুরের কাছে সংস্কৃত ভাষা ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

পরে তিনি একজন মুসলমান ফকিরের শিষ্য হন। তখন তাঁর নাম আউলচাঁদ হয়। অপর মতে, তিনি ফুলিয়া গ্রামের বলরাম দাসের নিকট বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং তখন তার নাম হয় আউলচাঁদ। এই সময় থেকে লোকে বিশ্বাস করতে থাকেন যে, আউলচাঁদ চৈতন্যদেবের অবতার। এরপর তিনি বজরা গ্রামে কিছুকাল কাটান। কথিত আছে, ওই সময় জগদীশপুরের নন্দরাম পাল আউলচাঁদের দর্শনে আসেন। এরপর তিনি আউলচাঁদের কাছে পুত্রলাভের বর চান। আউলচাঁদ সে বর দান করেন এবং তিনি বলেন, এই পুত্রের নাম যেন 'রামশরণ' রাখা হয়।

এরপর আউলচাঁদ তাঁর দীক্ষাগুরু বলরামের সাথে দেশ ভ্রমণে বের হন। কিছুদিন পর তাঁর গুরু দেশে ফিরে এলেও আউলচাঁদ নানা তীর্থভ্রমণ করেন। দীর্ঘদিন পর তিনি ঘোষপাড়াতে ফিরে আসেন। এই সময় রামশরণ পিতৃগৃহ ত্যাগ করে  ঘোষপাড়ায় সস্ত্রীক বসবাস করতেন। কথিত আছে রামশরণ দীর্ঘদিন রোগে ভুগছিলেন। আউলচাঁদ আসার পর তিনি সুস্থ হয়ে যান। এই ঘটনার পর, রোগ মুক্তির জন্য বহু মানুষ তাঁর কাছে আসতেন। এই সূত্রে তাঁর ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এঁদের ভিতরে তাঁর ২২জন শিষ্য তাঁর আধ্যাত্মজ্ঞান ধারণ করতে সক্ষম হন। এর ভিতরে রামশরণ পালকে তাঁর সম্প্রদায়ের উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করেন। আনুমানিক ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বোয়ালিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর প্রধান ৮ জন শিষ্য রামশরণ পালকে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের কর্তাবাবা পদ প্রদান করেন। 

 সূত্র: