আয়েত আলী
খান, ওস্তাদ
প্রখ্যাত সঙ্গীতসাধক।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে
এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুর গ্রামে
জন্মগ্রহণ করে। পিতা নাম সবদর হোসেন খাঁও (সদু খাঁ)। তিনি ওই অঞ্চলের একজন বিখ্যাত
সঙ্গীশিল্পী ছিলেন।
দশ বছর বয়সে তাঁর বড় ভাই ফকির আফতাবুদ্দীন খানের কাছে সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন। দীর্ঘ সাত বছর সরগম সাধনা আর রাগ-রাগিণী রেওয়াজ করার পর
তিনি ভারতের মাইহারে যান। সেখানে তাঁর অপর অগ্রজ
ওস্তাদ
আলাউদ্দীন খান-এর নিকট সঙ্গীতে তালিম নেন।
এখানে এসে তিনি প্রথমে সেতার এবং পরে সুরবাহার শেখেন। সঙ্গীতে তাঁর আগ্রহ এবং
নিষ্ঠা দেখে,
ওস্তাদ আলাউদ্দীন
খান তাঁর নিজ সঙ্গীতগুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর
কাছে পাঠিয়ে দেন। এই গুরু কাছে তিনি দীর্ঘ তেরো বছর শিক্ষাগ্রহণ করেন। শিক্ষা
সমাপনান্তে তিনি আলী মাইহার রাজ্যের সভাবাদকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। মাইহারের মহারাজ তাঁর
আসন নির্দিষ্ট করে দেন অগ্রজ
আলাউদ্দীন খানের পাশে।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি শান্তিনিকেতন
যান এবং বিশ্বভারতীর যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু কয়েক
মাস শান্তিনিকেতনে থাকার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে তিনি স্বগ্রামে চলে আসেন।
এরপর থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এখানেই সঙ্গীতের সাধনা করেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাডি়য়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির
কারখানা খুলে গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন করেন। এই সময় তিনি মনোহরা ও
মন্দ্রনাদ নামক দুটি বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন করেন। এছাড়া তিনি সুরবাহার ও সরোদের নতুন
রূপ দেন।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শে তিনি চন্দ্রসারং যন্ত্রটিও তৈরি করেন। তিনি বারিষ,
হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত-ভৈরোঁ, মিশ্র সারং প্রভৃতি
রাগেরও স্রষ্টা।
বিশুদ্ধ রাগসঙ্গীতের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য তিনি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লায়
একটি সঙ্গীত বিদ্যায়তন চালু করেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ
স্থাপন করেন। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান
রেডিওতে নিয়মিত সুরবাহার পরিবেশন করেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীতে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরৃপ
তিনি গভর্নর পদক পান।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব প্রদান করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স লাভ করেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী
(মরণোত্তর) পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) পুরস্কার লাভ করেন।