১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম সাবদার হোসেন খান। স্থানীয়
লোকেরা তাঁকে সাধু খান নামে ডাকতেন। তাঁর অপর দুই ভাই হলেন― ওস্তাদ আফতাব উদ্দীন
খান (তবলা ও বংশীবাদক) এবং ওস্তাদ আয়াত আলী খান (সুরবাহার বাদক)।
ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের তবলায় হাতে খড়ি হয় তাঁর বড় ভাই ফকির আফতাবুদ্দীন খানের
কাছে। একই সাথে তিনি তাঁর পিতার কাছে সেতারের তালিম নেন। দশ বছর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে
বরিশালের 'নাগ-দত্ত সিং' যাত্রাদলে যোগ দেন। তৎকালীন যাত্রাগানে
বাংলার লোকসঙ্গীতের উপাদানে ভরপুর ছিল। যাত্রাদলের সাথে থাকার সময় তাঁর
হার্মোনিয়াম, তবলা, বাঁশি, বেহালা, সারঙ্গী ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র এবং রাগসঙ্গীতের প্রাথমিক
পর্যায়ের তালিম হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাঁর প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক ফকির আফতাবুদ্দীন
খানের কাছে পাওয়া সঙ্গীতজ্ঞান বিশেষভাবে কাজে লেগেছিল। কিন্তু যাত্রাদলের গান-বাজনা
তাঁকে তাঁকে বেশিদিন পরিতৃপ্ত করতে পারে নি।
যাত্রাদলের সাথে ঘুরতে ঘুরতে তিনি কলকাতায় আসেন। এরপর বড় কোনো গুরুর কাছে তালিম নেবেন এই আশায়, যাত্রাদল ত্যাগ করে কলকাতায় ঘুরতে থাকেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন মানুষকে গান শোনাতেন এবং একরকম ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবন নির্বাহ করতেন। এই অবস্থায় একদিন তিনি পাথুরিয়াঘাটার সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরকে গান গেয়ে মুগ্ধ করেন। পরে তাঁর গান শেখার ইচ্ছার কথা জানতে পেরে, সৌরীন্দ্রমোহন রাগসঙ্গীত শিক্ষার জন্য পণ্ডিত গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী (নুলো গোপাল)-এর কাছে পাঠান। এই গুরুর কাছে তিনি ৭ বৎসর কণ্ঠসঙ্গীত, মৃদঙ্গ এবং উচ্চতর তবলা প্রশিক্ষণ নেন। সাত বৎসর এখানে শিক্ষাকাল কাটানোর পর, ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে প্লেগ রোগে পণ্ডিত গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি কলকাতার 'স্টার থিয়েটার'-এর সংগীত পরিচালক হাবু দত্তের কাছে যান―'স্টার থিয়েটার'-এর বাদ্যযন্ত্রী হওয়ার জন্য। হাবু দত্ত তাঁর সঙ্গীতে দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হন এবং থিয়েটারে যন্ত্রসঙ্গীত দলের সদস্য হিসাবে নেন। থিয়েটারে তিনি তবলা, মৃদঙ্গ ও সেতার বাজাতেন। এই সময় অন্যান্য যন্ত্রীদের কাছ থেকে তিনি বেহালা, বাঁশী ও পাখোয়াজ বাদনে পারদর্শী হয়ে উঠেন। পরে তিনি এই যন্ত্রদলে এসকল বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে খ্যাতি লাভ করেন। এর কিছুদিন পরে গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁকে তবলা বাদক হিসাবে মিনার্ভা থিয়েটারে নিয়ে যান। এই সময় গিরিশচন্দ্র তাঁর নাম দিয়েছিলেন প্রসন্ন বিশ্বাস। এর পাশাপাশি তিনি কলকাতার মেছোবাজারের হাজারী ওস্তাদ নামক একজন সানাই বাদকের কাছ থেকে সানাই বাজানো শেখেন। এই সময়ে গোয়া থেকে আগত ফোর্ট উইলিয়ামের ব্যান্ডের ব্যান্ডমাস্টার লোবো’র কাছে ইউরোপিয়ান ক্লাসিক্যাল বেহালা বাজানো শেখেন।
এর কিছুদিন পর, পালিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর বড় ভাই ফকির আফতাবুদ্দীন খান কলকাতায় আসেন। তিনি বহু সাধ্যসাধনা করে, আলাউদ্দীন খানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তাঁকে ঘরে সংসারি করার জন্য, ৯ বৎসর বয়সী মদিনা বেগমের সাথে তাঁর বিয়ে দেন। বাসর রাতে ঘুমন্ত নববধূকে রেখে তিনি যৌতুকের টাকা এবং গহনাদি নিয়ে পালিয়ে কলকাতা আসেন। এই টাকা দিয়ে দিয়ে তিনি বেহালা এবং ক্ল্যারিওনেট কেনেন। এই সময় অর্থের সাশ্রয়ের জন্য তিনি ছাতুবাবুর লঙ্গরখানায় একবেলা আহার করতেন এবং অতি অল্প ভাড়ার একটি মেসে থাকতেন। সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন স্থানে যন্ত্রী হিসাবে বাজাতেন। তাঁর বাজনায় মুগ্ধ হয়ে, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর তাঁকে তাঁর সঙ্গীতসভার জন্য নিয়ে যান। ওস্তাদ আহমদ আলী খানের সরোদ (ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের দাদামশাই এবং ওস্তাদ আশগর আলী খানের পিতা) শুনে তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং সরোদ শেখার জন্য তিনি তাঁর শিষ্যত্ব বরণ করেন। কথিত আছে নিজের ঘরানা অন্যের কাছে চলে যাবে, এই আশঙ্কায় ওস্তাদ আহমদ আলী খান, তাঁর নিজের ঘরানার বিষয়গুলো শেখাতেন না। কিন্তু সঙ্গীত সভায় তাঁর বাদন শুনে শুনে আ্লাউদ্দীন খান ওস্তাদের বাদন শৈলী রপ্ত করে ফেরেন। এরপর ওস্তাদ আহমদ আলী খান তাঁকে সাথে নিয়ে রামগড়ে (উত্তর প্রদেশ, ভারত) আসেন। সেখানে ওস্তাদজি তাঁকে গান শেখানোর পরিবর্তে বেশিরভাগ সময় গৃহস্থালী কাজে ব্যস্ত রাখতেন। কিন্তু ওস্তাদের অবর্তমানে আলাউদ্দীন খান ওস্তাদজির বাদনশৈলীর অনুশীলন করতেন। একদিন ওস্তাদ আহমদ আলী খান তাঁর গোপন চর্চা শুনে ফেলেন এবং তাঁর ঘরানার বাদনশৈলী অন্যের কাছে চলে যাচ্ছে দেখে, তিনি আলাউদ্দীন খানকে বিদায় দেন। উল্লেখ্য এই সময়ে তিনি সরোদের 'দিরি দিরি' স্বরক্ষেপণের কৌশল ত্যাগ করে প্রথাবিরুদ্ধ 'দারা দারা' স্বরক্ষেপণ প্রয়োগ করা শুরু করেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা সঙ্গীত সম্মেলনে বাম থেকে পণ্ডিত কণ্ঠে মহারাজ (তবলা), আশিস খান (তানপুরা), ওস্তাদ আলী আকবর খান (সরোদ), ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান (সরোদ) ও পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় (সেতার)। |
ওস্তাদের আশ্রয় হারনোর
পর, তিনি কিছুদিন নিরাশ্রয় হয় ইতস্তত ঘুরে বেড়ান। পরে একটি নাইটক্লাবের ব্যান্ড
মাস্টারের চাকরি পান। এই চাকরিতে তিনি আর্থিক ও মানসিকভাবে অস্বস্তির মধ্যে কাটান।
পরে তিনি এই চাকরি ত্যাগ করেন এবং তিনি ওস্তাদ উজীর খাঁর (তানসেনবংশীয় বীণাবাদক)
কাছে বীণা শেখার চেষ্টা করেন। প্রাথমিকভাবে এই চেষ্টা ব্যর্থ হলে, তিনি রামপুরের
নবাব হামিদ আলী খাঁর কাছে যান। উল্লেখ্য নবাব হামিদ আলী খাঁর ওস্তাদ ছিলেন ওস্তাদ
উজীর খাঁ। পরে নবাবের সুপারিশে ওস্তাদ উজীর খাঁ তাঁকে শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন।
কিন্তু ওস্তাদ উজীর খাঁ তাঁকে বীণার পরিবর্তে সরোদ শেখাতে রাজি হলে, আলাউদ্দীন খান
তাতেই রাজি হন। ওস্তাদ উজীর খাঁ তাঁকে শুরুতেই কিছু
শর্ত দিয়ে দেন। এই শর্ত সাপেক্ষে অঙ্গীকার করিয়ে আলাউদ্দীন খার হাতে নাড়া বেঁধে
দেন। এই অঙ্গীকার ছিল―
'এ বিদ্যা কুপাত্রে দেব না, কুসঙ্গে যাব না, বিদ্যা ভাঙিয়ে ভিক্ষা করব না, বাঈজী বা
বারাঙ্গনাদের সঙ্গীত শেখাব না।' নবাব হামিদ আলী খাঁ বিশেষভাবে আলাউদ্দীন খানকে
শতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন 'এ বিদ্যা অর্থের বিনিময়ে কেউ উজীর খাঁর কাছে থেকে পাবে
না। তাঁকে খিদমত করে অর্জন করতে হবে।' এরপর ওস্তাদ উজীর খাঁ'র বাড়িতে থেকে, আড়াই বৎসর
তাঁর সেবা করেন। পরে তাঁর নিষ্ঠা দেখে আড়াই বৎসর পর, ওস্তাদ তাঁকে শিক্ষাদান শুরু
করেন। ১২ বৎসর পর, ওস্তাদ তাঁর শিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। এরপর তিনি
বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। এই সময় কলকাতার শ্যামলাল ক্ষেত্রীর উদ্যোগে মধ্য
প্রদেশের মাইহারের জমিদার মহারাজা ব্রজনাথ সিং-এর দরবারে যান। তাঁর সঙ্গীত শুনে
রাজা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং সভা-সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে নিয়োগ দেন। একই
সাথে রাজা তাঁকে দেবোত্তর সম্পত্তির ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন। ধারণা
করা হয়, ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি মাইহারে স্থায়ী হন।
১৯২০-২১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি দেশে
ফিরে আসেন। পরিবার পরিজনের সাথে বেশ কিছুদিন কাটান। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর
প্রথম পুত্র ওস্তাদ
আলী আকবর খান-এর জন্ম
হয় শিবপুরে। এরপর তিনি স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে মাইহারের চলে আসেন। এখানে ফিরে
আসার পর তাঁর গুরু ওস্তাদ উজীর খাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান। ইতিমধ্যে গুরুপুত্র পিয়ার
মিঞা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাই ওস্তাদ তাঁর অধীত সকল বিদ্যা তাঁর প্রিয় শিষ্য ওস্তাদ
আলাউদ্দীন খানকে দান করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এই পর্যায়ে তিনি ওস্তাদ উজীর খাঁর কাছে
পুনরায় শিক্ষা শুরু করেন। তিন বৎসর পর ওস্তাদ উজীর খাঁ মৃত্যুবরণ করলে, তিনি
মাইহারের ফিরে আসেন।
ওস্তাদ উজীর খাঁ'র কাছে শিক্ষাগ্রহণ কালে, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান তাঁর গুরুভাইদের কাছে বলেন যে, যা তা বাম হাত বাজাতে পারে, তা তার ডান হাতও বাজাতে পারে। এরপর তিনি তিনি সেতার উভয় হাতে বাজিয়ে দেখান। এরপর থেকে তিনি তারের যন্ত্র বাজাতেন ডান হাতে এবং চামড়াচ্ছাদিত বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন বাম হাতে।
কিছুদিন পণ্ডিচেরীতে শ্রী অরবিন্দ-এর আশ্রমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শ্রীঅরবিন্দ তাঁর বাদনে মুগ্ধ হয়ে- আলাউদ্দীন খাঁনকে 'সুরের ভিতর দিয়ে ঈশ্বরের সাধক' হিসাবে স্বীকৃতি দেন।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের সাথে ইউরোপ ভ্রমণ করেন। এই সফরের সূত্রে উদয় শঙ্করের ছোটো ভাই রবি শঙ্কর ছিলেন। পরিবর্তী সময়ে তাঁর কাছে রবি শঙ্কর সেতার শেখেন এবং বিশিষ্ট সেতারী হয়ে উঠেন।
ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের কাছে শিক্ষারতা অন্নপূর্ণা। দূরে অন্নপূর্ণা'র মা মদিনা বেগম। |
ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের আগে মাইহারে যে ভারতীয় রাগসঙ্গীতের ধারা প্রচলিত ছিল, তিনি তা নতুন রূপে সাজালেন এবং সেই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল মাইহারের নবতর ঘরানা। যদিও মাইহার ঘরানার প্রাথমিক রূপটি গড়ে উঠেছিল ঊনবিংশ শতকে, কিন্তু তাতে কোনো সুসংহত রূপ ছিল না। আলাউদ্দীন খান এই ঘরানাকে এতটাই সুবিন্যাস্ত করেছিলেন যে, তাঁকে এই ঘরানার স্রষ্টা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর এবং তাঁর শিষ্যকূলের দ্বারা এই ঘরানা ভারতীয় সঙ্গীতের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত করেছে।
অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার
কারণে সারা-জীবনে কোনো শিষ্যের কাছ থেকে কোনো অর্থকরী বা গুরুদক্ষিণা নেন নি। তিনি
ঢেঁড়া পিটিয়ে সঙ্গীত শেখানোর জন্য প্রায় শ'খানেক অতি সাধারণ মানুষ জোগার করেছিলেন।
তাঁর স্কিলে শিষ্যদের ধরে রাখার জন্য তিনি এদের খাবারে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এদের
দিয়েই সূত্রপাত ঘটেছিল 'মাইহার ব্যান্ড'। এদের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন মনোহরা,
চন্দ্রসারং, কাষ্ঠতরঙ্গ নামক যন্ত্র। এই সূত্রে তিনি
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাইহার সঙ্গীত কলেজ (Maihar
College of Music) প্রতিষ্ঠা
করেন।
বিস্ময়কর হলেও সত্য
যে, ভারতীয় চিরায়ত সঙ্গীতের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের যন্ত্র তিনি কুশলতার সাথে
বাজাতে পারতেন। তাঁর শিষ্যদের দিকে তাকালে, বাদ্যযন্ত্রের সমাহার যে দেখা যায়, তাঁর
বিচারে তাঁকে অতিমানবীয় গুণের অধিকারী বলে মনে হয়। তিনি তাঁর পুত্র ওস্তাদ
আলী আকবর খানকে সরোদ,
পণ্ডিত
রবি শঙ্কর ও নিখিল বন্দোপাধ্যায়কে সেতার, কন্যা বিদুষী
অন্নপূর্ণাকে সুরবাহার,
পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষ ও বিজনাথ ঘোষ কে বাঁশি, পণ্ডিত রবীন ঘোষকে বেহালা শিখিয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে এঁরা সবাই জগৎবিখ্যাত হয়েছেন।
সম্মাননা
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'সংগীত নাটক একাডেমী ফেলোশিপ' সম্মাননা পান।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে একাডেমী ফেলো নির্বাচিত হন।
১৯৫৮ সালে তিনি পদ্মভূষণ উপাধি পান।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী তাঁকে 'দেশিকোত্তম' উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মবিভূষণ উপাধি পান।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এই
সঙ্গীত সাধক মাইহারে মৃত্যবরণ করেন।
তাঁর সৃষ্ট রাগ : ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান বিভিন্ন রাগ সৃষ্টি করেন। তিনি সংকীর্ণ রাগের উপর কাজ করতে পছন্দ করতেন। তাঁর সৃষ্ট রাগগুলো হলো― অর্জুন, ভগবতী, ভীম, ভুবনেশ্বরী, চণ্ডিকা, ধবলশ্রী, ধনকোষ, দীপিকা, দুর্গেশ্বরী, গান্ধী, গান্ধী বিলওয়াল, হৈমন্তী, হেম-বিহাগ, হেমন্ত ভৈরব, ইমনি মঞ্ঝ, জানুপুরী তোড়ি, কেদার মঞ্ঝ, কোমল মারওয়া, মদনমঞ্জরী, মাধবশ্রী, মাধবগিরি, মালয়া, মঞ্ঝ খামাজ, মেঘবাহার, মুহাম্মদ, নাত-খামাজ, প্রভাকলি, রাজ বিজয়, রাজেশ্রী, শোভাবতী, সুগন্ধা এবং সুরসতী।
যে সকল
বাদ্যযন্ত্রে অসাধারণ দখল ছিল (বর্ণানুক্রমে)-
কাষ্ঠতরঙ্গ, ক্ল্যারিওনেট, চন্দ্রসারং, তবলা, দোতারা, পাখোয়াজ, বাঁশী, বেহালা,
মনোহরা, মৃদঙ্গ, রুদ্রবীণা, সরোদ, সানাই,
সারেঙ্গী, সুরশৃঙ্গার, সুরবাহার, সেতার, হার্মোনিয়াম।
ওস্তাদ আলাউদ্দীন
খানের পরিবার
স্ত্রীর নাম মদিনা বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
পুত্র : ওস্তাদ আলী আকবর খান । প্রখ্যাত সারোদ বাদক।
কন্যা : শারিজা। শৈশবে মারা যান।
কন্যা : জেহানারা। আলাউদ্দীন খান অত্যন্ত যত্নের সাথে তাঁকে কণ্ঠসঙ্গীতে তালিম দিয়েছিলেন। বিবাহের পর জেহেনারার শাশুড়ি তাঁর সঙ্গীত চর্চা বন্ধ করে দেয়। নিষেধ অগ্রাহ্য করে জেহেনারা সঙ্গীত চর্চা করতে থাকলে, শাশুড়ি জেহেনারার তানপুরা পুড়িয়ে দেয়। পরে তাঁর সঙ্গীত সাধনায় অগ্রসর হয় নি।
সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথমখণ্ড)। জানুয়ারি ২০০২