রবি
শঙ্কর, পণ্ডিত
প্রখ্যাত সেতার বাদক। এর প্রকৃত নাম
রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল, ভারতের উত্তর প্রদেশের বেনারসে জন্মগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য এঁদের আদি বাসস্থান ছিল
বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলায়। জীবিকার সন্ধানে তাঁদের পরিবার যশোর থেকে বেনারসে
চলে গিয়েছিল। তাঁর
পিতার নাম শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী।
তাঁর বাবা শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী ছিলেন ঝালওয়ারের
মহারাজার কর্মী। তাঁর
মায়ের নাম হেমাঙ্গিনী দেবী। ইনি ছিলেন পিতামাতার সপ্তম সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ।
ইনি
শৈশবকাল বারানসীতে অতিবাহিত করেন। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর বড় ভাই প্রখ্যাত
নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের নৃত্য দলের (ব্যালে ট্রুপ) সাথে প্যারিসে যান।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ বৎসর বয়সে তিনি এই নৃত্য সংগঠনের সদস্য হন এবং এই সময় দলের
সদস্য হিসাবে নাচ শেখেন।
এরপর উদয় শঙ্করের সাথে তিনি ইউরোপ এবং আমেরিকা
ভ্রমণ করেন। এই সময়ের ভিতরে তিনি ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষা শেখেন এবং
পাশ্চাত্য চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং আচার আচরণের সাথে গভীরভাবে পরিচিত হন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার সঙ্গীত সম্মেলনে― মাইহার রাজদরবারের
প্রধান সঙ্গীত শিল্পী
ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খান-এর সঙ্গীত শুনে উদয় শঙ্কর মুগ্ধ হন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে উদয় শঙ্করের
সাথে ইউরোপ সফর করেন। এই সময় এই দলে ছিলেন
ওস্তাদ
আলাউদ্দিন খান
। একজন কুশলী একক সেতারবাদক
হিসাবে তৈরি করার
আশায় রবিশঙ্করকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে মাইহারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিকভাবে
রবিশঙ্করকে এই ইউরোপ সফরের জন্য তৈরি করা জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেন। এক্ষেত্রে
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান রবিশঙ্ককে একটি শর্ত দেন। শর্তটি হলো, শিক্ষা সমাপ্ত না হওয়া
পর্যন্ত তাঁকে এই শিক্ষায় একনিষ্ঠ থাকতে হবে। এই শর্তানুসারে রবিশঙ্কর এরপর ইউরোপ ভ্রমণ শেষে উদয় শঙ্করের নাট্যদল ত্যাগ করেন
এবং মাইহারে যান।
অন্নপূর্ণা : ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের কন্যা ও পণ্ডিত রবি শঙ্করের স্ত্রী |
উদয় শঙ্করের নাট্যদল ত্যাগ করে, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে সেতার ও সুরবাহার বাদন শেখার জন্য মাইহারে যান। তিনি খান পরিবারের সদস্য হিসাবে এখানে অবস্থান করেন। তিনি আলাউদ্দীন খানকে বাবা এবং তাঁর স্ত্রীকে মা সম্বোধন করতেন। এই সময় তিনি মূলত সেতার ও সুরবাহারে তালিম এছাড়া রুদ্রবীণা, রবাব এবং সুরশৃঙ্গার যন্ত্রও বাজানো শেখেন। এই সময় তাঁর সতীর্থ ছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের পুত্র ওস্তাদ আলী আকবর খান ও কন্যা বিদুষী অন্নপূর্ণা। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ওস্তাদ আলী আকবর খানের (সরোদশিল্পী) সাথে প্রথম দ্বৈতবাদন পরিবেশন করেন।
এরপর ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের তিনি নিষ্ঠার সাথে এই সকল যন্ত্র এবং ভারতীয়
রাগ সঙ্গীতের নানাবিধ দিক শিক্ষালাভ করেন। এরপর তিনি মুম্বাই যান এবং তিনি সেখানকার
Indian People's Theatre Association-এর
সাথে যুক্ত হন। এখানে তিনি নানারকম গণমানুষের গানে সুরারোপ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে
কবি ইকবালের 'সারে জাঁহা মে আচ্ছা' কবিতার সুরারোপ করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের
ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি 'অল ইন্ডিয়া রেডিও'-এর নয়াদিল্লী শাখার সঙ্গীত পরিচালকের
দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে
সত্যজিৎ রায়ের 'অপু-ত্রয়ী' (পথের পাঁচালী, অপরাজিত, অপুর
সংসার)-এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু হিন্দি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা
করেছিলেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে প্রখ্যাত পাশ্চাত্য বেহালা বাদক ইহুদি মেনহুইন ভারত সফরে আসেন।
এই সময় এই বেহালা বাদকের সাথে পরিচত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি বহুবার এই মেনহুইনের
সাথে যুগলবন্দী করেছেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সঙ্গীত দলের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নে যান
এবং একক বাদন পরিবেশন করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের সৌন্দর্য্য তুলে ধরার জন্য নিউইয়র্কে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের
আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে সেতার পরিবেশনের জন্য তিনি রবি শঙ্করকে আমন্ত্রণ জানান।
তাঁর বৈবাহিক ঝামেলার জন্য এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি এই
অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য ওস্তাদ আলী আকবর খানের নাম প্রস্তাব করেন। নিউইয়র্কের
Museum of Modern
Art-এ ওস্তাদ আলী আকবর খান সরোদ
পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তাঁর সাথে তবলায় সঙ্গত করেছিলেন চতুর লাল। এই
সূত্রে ওস্তাদ আলী আকবর খানের সরোদ মার্কিন টেলিভশনে প্রচারিত হয়। এটাই ছিল মার্কিন
টেলিভিশনে কোনো ভারতীয় শিল্পীর প্রথম রাগ পরিবেশন।
ওস্তাদ আলী আকবর খানের এই বাদনের সূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রোতাদের আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ইউরোপ আমেরিকায় ভারতীয় রাগ সঙ্গীতকে তুলে ধরার জন্য, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পণ্ডিত রবি শঙ্কর অল ইন্ডিয়া রেডিও-র চাকরি ছেড়ে দেন এবং যুক্তরাজ্য, জার্মানী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। এই সফরে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে লণ্ডন থেকে, তাঁর বাদিত তিনটি রাগের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো সঙ্গীত উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এই সময়ে তিনি কিছু পাশ্চাত্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনাও করেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর সাথে তবলায় সঙ্গত করেছেন চতুর লাল। এই বৎসরে তিনি মুম্বাইতে Kinnara School of Music প্রতিষ্ঠা করেন।
বিটল-এর জর্জ হ্যারিসন ও রবি শঙ্কর |
এই সময় বিটল-এর জর্জ হ্যারিসন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি একটি সেতার কিনে তা কিছুটা শিখেও নেন। পরে তাঁর বিখ্যাত গান-এ "Norwegian Wood (This Bird Has Flown)" এই সেতার ব্যবহার করেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লণ্ডনে হ্যারিসনের সাথে রবি শঙ্করের পরিচয় ঘটে। এর কিছুদিন পর, হ্যারিসন ভারতে আসেন এবং শ্রীনগরে রবি শঙ্করের কাছে ছয় সপ্তাহ সেতারের তালিম নেন। হ্যারিসনের এই ভ্রমণের সময় 'রাগ' নামে রবিশঙ্করের উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন Howard Worth এবং এই তথ্যচিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে। হ্যারিসনের সাথে এই বন্ধুত্বের সূত্র রবি শঙ্কর পাশ্চাত্য শ্রোতাদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে the Monterey Pop Festival -এ সেতার বাজান এবং মেনহুইনের সাথে জার্মানের Best Chamber Music Performance for West Meets East পুরস্কার পান। এরপর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে, মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত তাঁর 'কিন্নর সঙ্গীত বিদ্যালয়ে'-এর একটি শাখা খোলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেস এবং ক্যালিফোর্নিয়া-তে। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর রচিত My Music, My Life গ্রন্থ।
ইনি নিউইয়র্ক সিটি কলেজ-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিথি প্রভাষক হিসাবে শিক্ষাদান করেন এছাড়া ওস্তাদ আলী আকবর খানের প্রতিষ্ঠিত Ali Akbar College of Music-এ অতিথি শিক্ষক হিসাবে পাঠদান করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তিনি California Institute of the Arts -এর ভারতীয় সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে London Symphony Orchestra-এর আমন্ত্রণে লণ্ডন যান এবং এবং সেখানে সেতার বাজন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ রবি শঙ্কর (সেতার), আল্লা রাখা খাঁ (তবলা) ও ওস্তাদ আলী আকবর খান (সরোদ), তানপুরায় কমলা চক্রবর্তী |
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনযুদ্ধের স্বপক্ষে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি জর্জ হ্যারিসনকে উৎসাহী করে তোলেন। এই আয়োজনে তিনি ভারতবর্ষ এবং পাশ্চাত্য অন্যান্য আরও বহু বিখ্যাত শিল্পীদের একত্রিত করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন উল্লেখযোগ্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন― বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, জোয়ান বায়েজ ও ওস্তাদ আলী আকবর খান।
এই সূত্রে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগষ্ট, তাঁর প্রধান সহযোগী এবং বন্ধু জর্জ হ্যারিসনকে সঙ্গে নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে ঐতিহাসিক কনসার্টের আয়োজন করেন। এই কনসার্টের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর রেকর্ড বিক্রয়শীর্ষ স্থান লাভ করে। এই কারণে পরবর্তী সময়ে তিনি গ্র্যামি এওয়ার্ড লাভ করেন। উল্লেখ্য এই অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত সকল অর্থ মুক্তিযুদ্ধের জন্য দান করেন।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর বন্ধু ও পরিবারের সাথে নিয়ে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে ইউরোপ ও ভারত ভ্রমণ করেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে চিকাগোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই কারণে তিনি কিছুদিন সঙ্গীত পরিবেশন থেকে বিরত থাকেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় রাগমালা। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধী ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে Academy Award for Best Original Music Score -এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী, তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে গ্রহণ করেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নৃত্যনাট্য 'ঘনশ্যাম' তৈরি করেন। এই সময় তাঁর সাথে এই কাজে যুক্ত ছিলেন ফিলিপ গ্লাস। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে এই নৃত্যনাট্যের এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে হৃদরোগের সমস্যাটা তীব্রতর হয়ে উঠলে, তিনি তাঁর সঙ্গীত-বিষয়ক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এই সময় জর্জ হ্যারিসন তাঁর বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন দ্বিতীয় গ্রন্থ 'রাগমালা'। এই গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছিলেন হ্যারিসন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন। সঙ্গীতে অসামান্য
অবদানের জন্য গ্র্যামী অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে কন্যা অনুশ্কাকে নিয়ে সঙ্গীত সফর করেন। এই বৎসরে অনুশ্কার
Bapi: Love of My
Life প্রকাশিত হয়। হ্যারিসন এবং
রবিশঙ্কর অনুশ্কার জন্য একটি কনসার্টো রচনা করেন। রবিশঙ্কর কর্তৃক বিন্যাসিত এই
কনসার্টো অনুশ্কা পরিবেশন করেন ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে
যুক্তরাজ্যে সেতার পরিবেশন করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ নভেম্বরে
ক্যালিফোর্নিয়ার লঙ বিচের
Terrace Theater-এ
কন্যা অনুশ্কাকে নিয়ে কনসার্ট করেন।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর, ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোস্থ লা জোল্লা'র
Scripps Memorial Hospital-এ
অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হন হাসপাতলে ১১ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় ৪.৩০ মিনিটে মৃত্যবরণ
করেন।
পুরস্কার :
বিবাহ এবং সন্তান সন্ততি
অন্নপূর্ণা : রবি শঙ্করের প্রথমা স্ত্রী |
|
রবি শঙ্করের কন্যা নোরা জোন্স |
কন্যা অনুশ্কার সাথে রবি শঙ্কর |
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে একুশ বছর বয়সে, রবি শঙ্কর তাঁর গুরু ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর মেয়ে অন্নপূর্ণাকে বিয়ে করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শঙ্করের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর ব্যক্তিত্বের সংঘাতে উভয়ের ভিতরে বিচ্ছেদ ঘটে।
শুভেন্দ্র শঙ্কর তাঁর মায়ের তত্ত্ববধানে সেতার শেখেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এরপর কমলা শাস্ত্রী নামক নৃত্যশিল্পীর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং এঁরা একসাথে বসবাস শুরু করেন। এরই ভিতরে নিউইয়র্কের কনসার্ট প্রডিউসার সুয়ে জোন্স্ (Sue Jones) এর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সুয়ে জোন্স্ একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এই কন্যার নাম নোরা জোন্স (Norah Jones)। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নোরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্রামি এওয়ার্ড লাভ করেন।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে কমলা শাস্ত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্ক চিরতরে বিচ্ছেদ হয়। এরপর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি থাকেন সুয়ে জোন্স্-এর সাথে। পরে এঁর সাথে বিচ্ছেদ ঘটার পর তিনি ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সুকন্যা রাজন-কে বিবাহ করেন। এই স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন অনুশ্কা শঙ্কর। তাঁর সন্তানদের ভিতরে একমাত্র অনুশ্কাকে তিনি অত্যন্ত যত্নের সাথে সেতার বাদন শিখিয়েছেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুশ্কা অত্যন্ত জনপ্রিয় সেতার বাদিকা।