বকসু
গোয়ালিয়রে রাজা মানসিংহ তোমরের (রাজত্বকাল: ১৪৮৬-১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দ) রাজসভার অন্যতম সভাগায়ক। সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে প্রাচীন গ্রন্থাদিতে তিনি নায়ক বকসু নামে অভিহিত হয়েছেন।

আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী, ফকীরুল্লাহ (মানকতুহলের অনুবাদক), মীর্জা খাঁ রচিত 'তুহ্‌ফুল্ হিন্দ্'  গ্রন্থে নায়ক বকসু সম্পর্কে সামান্য জানা যায়। সেকালের গোয়ালিয়ের বাইরে আগ্রা, মথুরা এবং অন্যান্য নিকটবর্তী অঞ্চলে, দেশী সুর অবলম্বনে নানা ধরনের শঙ্কর রাগের সৃষ্ট হয়েছিল। বকসু এই সকল রাগকে শাস্ত্র সম্মতভাবে উন্নত করেন। বকসু 'নায়কী-কানাড়া এবং নায়কী কল্যাণ রাগ সৃষ্টি করেছিলেন।

মানসিংহ তোমরের রাজদরবারে, বকসু যখন এ সকল রাগে ধ্রুপদ রচনা শুরু করলেন তখন রক্ষণশীল সঙ্গীতজ্ঞরা এর বিরোধিতা করেছিলেন।  কারণ সে সময়ে ধ্রুবা গানকে মূলত শাস্ত্রীয় গান হিসেবে মান্য করা হতো। পক্ষান্তরে ধ্রুবা গানের আদলে নবধারার ধ্রুপদকে মনে করা হতো শাস্ত্রসিদ্ধ গানের বাইরে লঘু গান। এই সময় নব্যধারার ধ্রুপদ পথে পথে ঘুরে গাইতো ঢাড়ী মেয়েরা। উল্লেখ্য ঢাড়ী আদিবাসী শিল্পীরা অভিজাত হিন্দুদের ঘৃণা অবহেলার স্বীকার হয়ে- ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তাই মুসলমান মেয়েদের গান হিসেবে অভিজাত হিন্দু সঙ্গীতজ্ঞরা ধ্রুপদকে অপাঙ্ক্তেয় করে রাখার চেষ্টা করেছিল। মানসিংহ তোমরর রাজদরবারে বকসু রচনা করেছিল দুই বা তিন তুকের ধ্রুপদ। এই সময় এই গানে ব্যবহৃত হতো- চৌতাল এবং সুরফাঁক্তা।

১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে
মানসিংহ তোমরে সাথে সিকান্দার লৌদীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মানসিংহ পরাজিত ও নিহত হন। কোনো কোন মতে এই সময় বকসু কালীগঞ্জ দুর্গের রাজা কিরাৎ-এর আশ্রয় নেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটের শাসক বাহাদুর শাহের রাজদরবারের সভাগায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এই রাজদরবারে থাকাবস্থায় তিনি তৈরি করেছিলেন বাহাদুরী টোড়ি। এছাড়া তিনি চার বা পাঁচ তুকের ধ্রুপদ রচনা করেছিলেন।

১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট হুমায়ুন গুজরাট আক্রমণ করেন।  এই সময় হুমায়ুন মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের অধিকাংশ কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। এই সময় সঙ্গীতজ্ঞ বলে বকসু রক্ষা পেয়েছিলেন।

বকসুর মৃত্যর সময় সম্পর্কে জানা যায় নি।

সূত্র: