বাণী কুমার
১৯০৭-১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে
বিংশ শতাব্দীর গীতিকার, বেতার
সম্প্রচারক, নাট্য পরিচালক ও প্রযোজক।
প্রকৃত নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। বাণী কুমার ছদ্মনামে তিনি গান রচনা করতেন।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর হাওড়া জেলার কানপুরে
জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম পণ্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, মায়ের নাম অপর্ণা
ভট্টাচার্য।
তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল পিতার কাছে। এরপর হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন। এই সময় কবি
করুণানিধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেন। এই স্কুল থেকে পাশ করার
পর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হন। এরপর তাঁর পিতার ইচ্ছায় বিবাহ করতে হয়।
সাহিত্য চর্চা তাঁর নেশা ছিল। কিন্তু সংসারের প্রয়োজনে তিনি চাকরি নেন কলকাতার
টাকশালে। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি উদ্যোগে কলকাতা বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হলে, তিনি বেতার
নাটকের সূত্রে এই বেতার-কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে টাকশালের চাকরি
ছেড়ে দিয়ে রেডিওতে যোগদান করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি 'সরস্বতী
সঙ্গীত বিচিত্রা' অনুষ্ঠানের ভিতর দিয় 'বেতার বিচিত্রা' অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এই
অনুষ্ঠানের শুরু থেকে প্রায় ২১ বছর এর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন শারদ-আগমনী গীতি-আলেখ্য 'মহিষাসুরমর্দিনী'।
বেতারে প্রচারিত এই গীতি-আলেখ্যটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। উল্লেখ্য এই
গীতি-আলেখ্যটিতে সুর দিয়েছেইলেন পঙ্কজ মল্লিক এবং চণ্ডীপাঠ ও ভাষ্যে ছিলেন
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অবশ্য ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বেতার কর্তৃপক্ষ একবার এই
গীতি-আলেখ্যের চণ্ডীপাঠ ও ভাষ্যে উত্তমকুমারকে পরীক্ষামূলকভাবে নিয়েছিলেন। তখন এর
নাম দেওয়া হয়েছিল 'দুর্গা দুর্গতিহারিণী'। কিন্তু শ্রোতারা এই অনুষ্ঠানে সাদরে
গ্রহণ করেন নি। এই পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে কলকাতা বেতারকেন্দ্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
পরের বছর থেকে 'মহিষাসুরমর্দিনী'-তে আবার ফিরে আসেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
রাজপুত্রনাটকে এবং ‘ভাগ্যচক্র’, ‘দেনা-পাওনা’, ‘রূপলেখা’ ও ‘দেবদাস’ ছবিতে বাণীকুমার রচিত গান
ব্যবহৃত হয়েছিল। তাঁর
রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো-
‘সন্তান’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘গীতবল্লকী’, ‘কথা-কথালি’, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’, ‘রায়বাঘিনী’, ‘হাওড়া হুগলীর ইতিহাস’, ‘স্বরলিপিকা’ (২ খন্ড) ইত্যাদি।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
কাজী নজরুল ইসলামের ‘ওমর খৈয়াম’-এর বেতার নাট্যরূপ রচনা করেছিলেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগষ্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।