কাজী নজরুল ইসলাম

(২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ -২৯ আগষ্ট ১৯৭৬)
বাংলা ভাষার অন্যতম কবি,গীতিকার ও সুরকার। বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

[তথ্য সংশোধনের কাজ চলছে]

বাংলা সাহিত্যের সহস্রাধিক বৎসরের গৌরবান্বিত মহাসভায়, যে কয়েকজন তাঁদের স্বনামকে অতিক্রম করে মহিমান্বিত হয়েছেন, নজরুল তাঁদেরই একজন। বিশ্বকবি বলতে রবীন্দ্রনাথ, রায়গুণাকর বলতে ভারতচন্দ্র,  সাহিত্যসম্রাট বলতে বঙ্কিমচন্দ্র, পল্লীকবি বলতে জসিমুদ্দীন- এমনি আরও অনেকে যেমন মানসলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন। তেমনি 'বিদ্রোহী কবি' বলতে সগৌরবে মনে পড়ে যায়- একমাত্র নাম 'কাজী নজরুল ইসলাম'। অথচ পরম কুণ্ঠার সাথেই বলতে হয়, নজরুলের সৃষ্টিকর্ম এবং জীবনাচারের বিচারে 'বিদ্রোহী কবি' অভিধাটি যথেষ্ঠ নয়। আমাদের এ‌ই সাড়ম্বরে উচ্চারিত 'বিদ্রোহী কবি' সম্ভাষণের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়- তাঁর অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভা, পরম অসাম্প্রদায়িক মানবহিতৈষী সত্তা, কিম্বা সর্বাঙ্গসুন্দর প্রেমের কবি-পরিচয়, এমনি আরও আরও অনেক কিছু।

বর্ধমানের ক্ষুদ্র লোক-নাট্যগীতি লেটো গানের মধ্য দিয়ে তাঁর সৃষ্টি-সত্তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শৈশব-কৈশোরের সন্ধিক্ষণে। তারপর আমরা পাই গ্রামছাড়া সহায়সম্বলহীন এক বালকের ছন্নছাড়া জীবনের পরিভ্রমণের গল্পকথা। সে এক 'সৃষ্টি সুখের উল্লাস'-হীন অধ্যায়। তারপর তাঁর সৃষ্টির দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো- বাংলা থেকে বহুদূরে সৈনিকবেশে করাচির সেনানিবাসে। সেখানেই জন্ম নিলো তাঁর নতুন সৃষ্টি সত্তা, সূচনা হলো এক নূতন বিস্ময়কর অধ্যায়ের। সে অধ্যায়ে দেখি তাঁর এক হাতে বাঁশের বাঁশী, আর হাতে রণতূর্য। প্রবাসী-সৈনিক জীবনের এই সূচনা ছিল তাঁর সৃষ্টির দ্বিতীয় অধ্যায়ের কুঁড়ি-দশা। প্রবাস থেকে পত্রযোগে তিনি হানা দিলেন বঙ্গের বাংলা পত্রিকা জগতে। সে সব রচনার বেশিরভাগই অপাংক্তেয় বলে আশ্রয় নিয়েছিল আবর্জনার ঝুড়িতে। কিছু তার টিকে গিয়েছিল সেকালের পত্রিকাসমূহের সম্পাদকদের বদান্যতায়।

অবশেষে সৈনিকজীবনের অবসান হলো, আর শুরু হলো- সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাব্য ও সঙ্গীত- অমরাবতীর স্রোতধারায়। প্রথম পর্বের সৃষ্টি-অন্তে যেন কুম্ভকর্ণ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কোন অজানিত যাদুস্পর্শে তিনি জেগে উঠেছিলেন এবং জাগিয়ে দিয়েলেন। দ্রোহের দাবানল জ্বলে উঠেছিল 'বিদ্রোহী‌'-কাব্য বিস্ফোরণে। সেই তাঁর শুরু। নানা বৈচিত্র্য ভরিয়ে দিলেন বাংলা কাব্য-সঙ্গীত-জগত। তার আকস্মিকভাবে এলো বিদায় নেবার পালা। দেহ টিকে রইলো বটে, কিন্তু সৃষ্টির সুখের উল্লাস ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ হতে হতে অন্ধকারে ডুবে গেল। পড়ে রইল তাঁর ফেলে যাওয়া আলোক-দীপিকার জ্যোতি-ঐশ্বরয। যা চিরায়ত সৃষ্টি হয়ে আজও আমদের বিমুগ্ধ-বিস্ময়ে অভিভূত করে চলেছে। তাঁর সেই অপার বিমুগ্ধ-বিস্ময়-ঐশ্বর্যের সন্ধানে নজরুল-জীবনের সামগ্রিক রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই রচনায়। কালানুক্রমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ব্যক্তি-নজরুল ও স্রষ্টা নজরুলকে। প্রসঙ্গক্রমে এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে, নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়।

নজরুল-জীবনের সামগ্রিক রূপকে কালানুক্রমিক কয়েকটি পর্বে। এর শুরুটা হয়েছে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দী থেকে নজরুলের জন্মদিন পর্যন্ত। এই পর্বের নাম: নজরুলের তাঁর জন্মস্থান এবং পূর্ব-পুরুষের কথা।


সূত্র: