কাজী নজরুল ইসলামের
২১ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১০ই জ্যৈষ্ঠ (সোমবার ২৪শে মে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) নজরুলের
২০ বৎসর বয়স পূর্ণ হয়েছিল। ১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ২৫শে মে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) ২১ বৎসরের সূচনা হয়। ১৩২৮
বঙ্গাব্দের ১০ই জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ২৪শে মে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ) ২১ বৎসর পূর্ণ হয়েছিল।
গত বছরের শেষদিন পর্যন্ত কলকাতার ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটস্থ
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'র অফিসঘর ছিল নজরুলের বাসস্থান।
নজরুলের ২১ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শুরু হয়েছিল এই অফিস ঘরেই।
লেখালেখির সূত্রে যৎসামান্য প্রাপ্তিই ছিল তাঁর একমাত্র উপার্জনের উৎস। তাঁর
বসবাসের জন্য ঘর ভাড়া দিতে হতো না বলে, কিছুটা স্বস্তি ছিল।
|
২১ বৎসর বয়সের নজরুল
|
জুন ১৯২০ (১৮জ্যৈষ্ঠ-১৬ আষাঢ় ১৩২৭)।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকে নজরুল তাঁর নিয়মিত কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাফিজের কবিতা অবলম্বনে গান
রচনা করা শুরু করেছিলেন। এই সূত্রে রচিত প্রথম গানটি ছিল-'দুঃখ কি ভাই
হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিব ফিরে'। গানটি
সম্পর্কে আগের ২০ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সে বিস্তারিত আলোচনা করা
হয়েছে। গানটি '
মোসলেম
ভারত
' পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩২৭ (জুন-জুলাই ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। গানটি ছিল নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয়
পর্বের দ্বিতীয়।
জুন মাসের শুরু থেকেই
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'র
অফিসঘর তথা নজরুলের তৎকালীন বাসস্থানে আগের মতো জমজমাট
সাহিত্য-আড্ডা অব্যাহত ছিল। এরই ভিতরে
মোসলেম ভারত, বকুল,
অঙ্কুর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ১টি গান, ২টি কবিতা, ১টি গল্প ও ১টি প্রবন্ধ।
এগুলো হলো-
-
মোসলেম ভারত
[আষাঢ় ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (জুন-জুলাই ১৯২০)
বাদল-কালো স্নিগ্ধা আমার
[তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের
দ্বিতীয় পর্বের তৃতীয় গান।
এই গানটি প্রকাশিত হয়েছিল গানটির নিচে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল- "হাফিজের-এর ছন্দ ও ভাব অবলম্বনে"।
শিরোনাম 'বাদল-প্রাতের শরাব'।
এই গানটির সাথে নাম ছিল- হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম। পৃষ্ঠা: ১৭৮।
পরে এই গানটি
পূবের হাওয়া
প্রথম সংস্করণে আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ
(অক্টোবর ১৯২৫) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শিরোনাম
'বাদল-প্রাতের শরাব'। এই কবিতাটি পাঠ করে
মোহিতলাল
মজুমদার মুগ্ধ হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের দিকে মোহিতলাল '
মোসলেম ভারত'
পত্রিকার সম্পাদককে একটি দীর্ঘ পত্র লেখেন। চিঠিটি প্রকাশিত
হয়েছিল-'মোসলেম ভারত' পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট ১৯২০) সংখ্যায়। প্রসঙ্গক্রমে
এই চিঠিতে এই কবিতা সম্পর্কে লিখেছিলেন-
'বাদল প্রাতের শরাব' শীর্ষক কবিতায় ইরানের পুষ্পসার
ও দ্রাক্ষাসার ভরপুর হইয়া উঠিয়াছে। এই কবিতাটাতেও
কবির 'মস্ত্' হইবার ও 'মস্ত্' করিবার ক্ষমতা প্রকাশ পাইয়াছে। বাঙ্গালী
মাত্রেই ইহার উচ্ছল রসাবেশ অন্তরে অনুভব করিবে। কবির লেখনী জয়যুক্ত হউক।'
এই সময় নজরুলের সাথে
মোহিতলালের প্রথম সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন
সবুজপত্র পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক
পবিত্র
গঙ্গোপাধ্যায়। এই
প্রথম সাক্ষাৎকারের সময় সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়।
মুজাফ্ফর আহমদের
'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই সাক্ষাৎকারের
বিষয়টি ঘটেছিল নজরুল এবং
মুজাফ্ফর
৮/এ, টার্নার
স্ট্রীটের বাসায় থাকার সময়। তবে ঘটনাটি ঘটেছিল
সম্ভবত আগষ্ট বা জুলাই মাসে।
-
বাঁধন-হারা।
পত্রোপন্যাস।
(ঘ) [হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম]
মোসলেম ভারত
আষাঢ় ১৯২৭ বঙ্গাব্দ (জুন-জুলাই ১৯২০)। পৃষ্ঠা: ১৬২-১৭৭।
- বকুল [আষাঢ় ১৩২৭ (জুন ১৯২০)
- কবিতা
বকুল।
এই কবিতাটি নজরুলের জীবদ্দশায়
কোনো
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
বাংলা
একাডেমী থেকে প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী'র (জন্মশতবর্ষ সংস্করণ) নবম খণ্ডে
কবিতাটি 'অগ্রন্থিত কবিতা' অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
- গল্প।
সালেক।
শিরোনাম: 'সালেক'। এই গল্পটি
পরে
রিক্তের
বেদন [পৌষ ১৩৩১, ডিসেম্বর ১৯২৪
খ্রিষ্টাব্দ] নামক গল্প-সংকলনে
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
- প্রবন্ধ।
জাগরণী। শিরোনাম: 'উদ্বোধন'। এই প্রবন্ধটি পরে
যুগবাণী
[কার্তিক ১৩২৯ (অক্টোবর ১৯২২) নামক প্রবন্ধ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
- অঙ্কুর [আষাঢ় ১৩২৭ (জুন ১৯২০) সংখ্যা]
জুলাই ১৯২০ (১৭ আষাঢ়-১৫ শ্রাবণ ১৩২৭)
নবযুগ ও নজরুল
কাজী নজরুল ইসলাম ও রাজনীতিবিদ
কমরেড
মুজাফ্ফর
আহমদ যুগ্ম সম্পাদনায় নবযুগ পত্রিকার
যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই,
কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়।
এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন শের-এ-বাংলা
আবুল কাশেম ফজলুল হক। উল্লেখ্য,
ফজলুল হক নিজ অর্থে এই পত্রিকাটি প্রকাশ করছিলেন। তবে
পত্রিকাটিতে সম্পাদকের নাম থাকার বদলে
ফজলুল হকের নাম থাকতো পরিচালকের হিসেবে।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের প্রথম দিকে, ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটস্থ
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা'র
অফিসঘরে থাকতেন
কাজী নজরুল ইসলাম ও
মুজাফ্ফর আহমদ।
এঁরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে নিজেদের মতো
একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। সে সময়ে এঁদের প্রধান
পরামর্শক ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী। এছাড়া সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী
ও মঈনুদ্দীন হোসাইন এই পত্রিকার পরামর্শক ছিলেন।
একই সময়ে
ফজলুল হক তাঁর
কৃষক-প্রজা পার্টি'র মুখপত্র হিসেবে একটি পত্রিকা প্রকাশের কথা এই সময়ে
ভাবছিলেন। ফজলুল হকের সমস্যা ছিল পত্রিকা পরিচালনা এবং লেখার জন্য উপযুক্ত লেখকের
অভাব। এই
অবস্থায়
ফজলুল হক,
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক
মোজাম্মেল হকের শরণাপন্ন হন এবং
ফজলুল হক তাঁকে ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে
মোজাম্মেল হককে ডেকে পাঠান।
এই সময় তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশের সম্পাদনা এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য
উপযুক্ত লোকের অভাবের কথা
মোজাম্মেল হককেবলেন। এই আলোচনায়
মোজাম্মেল হক পত্রিকার জন্য
কাজী নজরুল ইসলাম,
মুজাফ্ফর আহমদ-সহ
আরও কিছু লোকের কথা বলেন। এরপর এঁদের সবাইকে নিয়ে
ফজলুল হক একটি সভা ডাকেন।
ফজলুল হক তাঁর ২২ নম্বর টার্নার স্ট্রিটের বাসভবনে নতুন পত্রিকার জন্য আলোচনা
সভায় উপস্থিত হন
কাজী নজরুল ইসলাম,
মুজাফ্ফর আহমদ,
মোজাম্মেল হক, নবনূর পত্রিকার প্রাক্তন ম্যানেজার উমেদ আলী মিয়া, নূর
লাইব্রেরির মালিক মঈনুদ্দীন হোসাইন, সিলেট নিবাসী ফজলুল হক শেলবর্ষী ও করুণা বাঁশদোহার।
মোজাম্মেল হক ছাড়া বাকি ছয় জনকে সম্পাদক পদে নেওয়া হয়েছিল। এঁদের প্রত্যেকের
বেতন নির্ধারিত হয়েছিল মাসিক ৬০ টাকা। উল্লেখ্য,
ওয়াজিদ আলী'র নামে পত্রিকার ছাড়পত্র
নেওয়া হয়েছিল।
এই আলোচনা শেষে পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব দেওয়া হয়
কাজী নজরুল ইসলাম ও
মুজাফ্ফর আহমদকে।
প্রথম পত্রিকার নাম নির্বাচন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। শেষপর্যন্ত নজরুলের প্রস্তাব অনুযায়ী পত্রিকার নাম
রাখা হয় 'নবযুগ'।
এই পত্রিকা প্রকাশের জন্য তিনি একটি প্রেস কিনেছিলেন। তবে এই
প্রেসটি পত্রিকা প্রকাশের উপযোগী ছিল না। তাই
ফজলুল হক অনেক টাকা করে প্রেসটিকে পত্রিকা প্রকাশের
উপযুক্ত করে তোলেন। এই সময় লেখক ও সাংবাদিক ওয়াজিদ আলী
ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে এই পত্রিকার সংশ্রব ত্যাগ করেন। তবে তিনি তাঁর নামে
পত্রিকার ছাড়পত্র গ্রহণে আপত্তি করেন নি।
পত্রিকা প্রকাশের বড় অসুবিধা ছিল সংবাদসমূহ পত্রিকার উপযোগী বাংলা ভাষায় লেখা। এরূপ
লেখায়
ফজলুল হক অভ্যস্ত ছিলেন না। এই সমস্যা অন্যান্য সম্পাদকদেরও
ছিল। এই কারণে সে সময়ে সম্পাদকীয় লেখার জন্য সে সময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক
পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ভাবা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯২০
খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই, কলকাতার ৬ নম্বর টার্ন স্ট্রিট থেকে
কাজী নজরুল ইসলাম ও
মুজাফ্ফর
আহমদের পত্রিকাটির
প্রকাশনা শুরু হয়েছিল। তবে সম্পাদক হিসেবে এঁদের নাম পত্রিকায়
থাকতো না। কিন্তু প্রধান পরিচালক হিসেবে
ফজলুল হকের নাম ছাপ হতো।
সে সময়ে সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ লেখার অভিজ্ঞতা ছিল না। তা সত্তেও
নজরুলের সংবাদ তৈরির কাজ
নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং
নজরুলের সংবাদ লেখন এবং শিরোনামের গুণে পত্রিকাটি দ্রুত
জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তবে এই পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের লেখা
সম্পাদকীয় সরকারে রুদ্র রোষে পড়ে। ভারতের স্বাধীনতা ও
গণজাগরণ-বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হওয়ার জন্য, ব্রিটিশ সরকার পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে
একাধিকবার সতর্ক করে দেয়।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে
অসহযোগ আন্দোলন
এবং
খেলাফত আন্দোলনের
পক্ষে এবং ব্রিটিশ বিরোধী লেখা প্রকাশের জন্য '
নবযুগ
পত্রিকা' জামানত বাতিল হয়ে
যায়। পরে
ফজলুল হক জামানতের দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের
ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এর কিছুদিন পর ফজলুল হকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে
কাজী নজরুল ইসলাম ও
মুজাফ্ফর
আহমদ
সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে এক বছরের মধ্যে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
এই
পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়গুলো নজরুলের যুগবাণী নামক
প্রবন্ধ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যে সকল রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো-
নবযুগ' পত্রিকার সম্পাদনার কাজে ব্যস্ত থাকলেও এই সময়ের ভিতরে নজরুলের
১টি গান ১টি কবিতা এবং ২টি গল্প বিভিন্ন পত্রিকার
শ্রাবণ সংখ্যায় (জুলাই) মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো
হলো-
-
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা।
শ্রাব্ণ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যা।
শিরোনাম গান। সুর হিন্দুস্থানী-কাজরী।
-
মোসলেম ভারত
পত্রিকায় শ্রাব্ণ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
-
কবিতা:
খেয়াপারের তরণী।
কবিতাটি প্রথম '
অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত
হয়েছিল। এই কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে
মুজাফ্ফর আহমদ
তাঁর
কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা। [পৃষ্ঠা: ৫৭] গ্রন্থে লিখেছেন-
'কি
কারণে জানি না, আফজালুল হক সাহেব ঢাকা গিয়েছিলেন। তিনি
তার 'মোসলেম ভারতে' ছাপানোর উদ্দেশ্যে ঢাকার বেগম মুহম্মদ
আজম সাহেবার (খান বাহাদুর মুহম্মদ আজমের স্ত্রীর) আঁকা একখানা
নৌকার ছবি সঙ্গে নিয়ে আসেন। পত্রিকায়
ছাপানোর আগে ছবিখানার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়
লিখিত হওয়ার. প্রয়োজন ছিল। তার জন্যে
ছবিখানা একদিন বিকাল বেলা নজরুল ইসলামের নিকটে
আফজালুল হক সাহেব রেখে গেলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে
নজরুল ইসলাম গদ্যে এই আধ্যাত্মিক ছবিখানার একটি সংক্ষিপ্ত
পরিচয় লিখে দিবে। কিন্তু নজরুল তা করল না। সে রাত্রি বেলা
প্রথমে মনোযোগ সহকারে ছবিখানা অধ্যয়ন করল এবং তারপরে
লিখল এই ছবির বিষয়ে তার বিখ্যাত কবিতা 'খেয়া-পারের তরণী'। এটি নজরুলের একটি বহুল প্রশংসিত কবিতা। সেই সময়ে তার
কলম যেন পরশ পাথর হয়ে গিয়েছিল। তার ছোঁয়া লাগলেই
তা থেকে সোনা বার হয়ে আসছিল। 'খেয়া-পারের তরণী' নজরুলের স্বকীয় কলাকৌশলে অপূর্ব
সৃষ্টি হলেও একথা মানতেই
হবে যে এই সৃষ্টির ভিত্তি বেগম আজম সাহেবার সৃষ্টির ভিত্তির
ওপরে প্রতিষ্ঠিত। এই কবিতার কথাগুলিও বেগম সাহেবার ছবি হতে
বা'র হয়ে এসেছে। কবিতাটিকে ধিরে যে আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা একান্তভাবে বেগম সাহেবারই। আমি আশ্চর্য
হচ্ছি যে 'খেয়া-পারের তরণী'র আলোচনা ও প্রশংসা যাঁরা
করছেন তাঁরা বেগম আজমের ছবিখানার নামোল্লেখও করছেন না।
ঢাকার সাহিত্যিকদের আলোচনায়ও যে বেগম সাহেবার ছবি বাদ
পড়ে যাচ্ছে তাতে আমার আরও বেশী আশ্চর্য বোধ হচ্ছে।'
-
গল্প:
বাদল-বরিষণ।
গল্পটি নজরুল করাচি সেনানিবাসে থাকাকালে রচনা করেছিলেন।
মোসলেম ভারত
পত্রিকায় শ্রাব্ণ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পরে
ব্যথার দান
গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
আগষ্ট ১৯২০ (১৬ শ্রাবণ- ১৫ ভাদ্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
১লা আগষ্ট (রবিবার ১৬ শ্রাবণ ১৩২৭ ) ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম
নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক
মৃত্যুবরণ করেন। এরই প্রতিক্রিয়ায় নজরুল
নবযুগ পত্রিকার
সম্পাদকীয়তে সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এই সময় কলকাতায়
বাল গঙ্গাধর তিলক-এর মৃত্যুতে স্বদেশীদের কাছে পরম
বেদনার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তারই স্মরণে রচনা করেছিলেন।
'লোকমান্য
তিলকের মৃত্যুতে বেদনাতুর কলিকাতার দৃশ্য (স্মৃতি)
'।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক ১৩২৯)মাসে প্রকাশিত
যুগবাণী প্রবন্ধ গ্রন্থে
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
মোসলেম ভারত পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৭ সংখ্যায় (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর), কবি ও সমালোচক
মোহিতলাল মজুমদার
নজরুলের
কবিতার প্রশংসা করেন এবং পত্রিকার সম্পাদককে একটি পত্র লেখেন। পরে পবিত্র
গঙ্গোপাধ্যায় নজরুলের সাথে
মোহিতলাল মজুমদারের
পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আগষ্ট মাসের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বর
মাসের প্রথমভাগে। এই সময়
মোহিতলাল
নেবুতলার ক্যালকাটা
হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। এই সময় নজরুলের সাথে অন্যান্যদের আড্ডা হতো
৩২, কলেজ স্ট্রিটে, কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের গজেন ঘোষের সাহিত্যের আসরে। এছাড়া নজরুল
এই সময় বিভিন্ন আসরে গান গাওয়ার জন্যও যেতেন।
এই মাসে নজরুলের ৩টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল।
নবযুগ প্রকাশের পর জুলাই মাসের শেষের দিকের
''
বঙ্গীয়
মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র অফিস থেকে
নজরুল ইসলাম ও
মোজাফ্ফর আহমদ মার্কুইস লেনের একটি বাড়িতে উঠে এসেছিলেন। তবে
এই বাসাটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ছিল। তাই সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে নজরুল ও
মুজাফ্ফর আহমদ
৬ টার্নার স্ট্রিটে নবযুগ অফিসের কাছে একটি একতলা পাকা বাড়িতে চলে আসেন।
অবশ্য এই সময় ''
বঙ্গীয়
মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র
অফিসের সাহিত্য-আড্ডায় তাঁদের নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল। এই আড্ডায়
যাঁরা প্রায় নিয়মিত যোগ দিতেন- নজরুল ইসলাম,
মোজাফ্ফর আহমদ,
শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়,
শশাঙ্কমোহন সেন, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, যোগীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,
হেমেন্দ্রকুমার রায়,
প্রেমাঙ্কুর
আতর্থী, কান্তিচন্দ্র ঘোষ, ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।
এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত রচনা
- কবিতা
- বঙ্গনূর। ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
- কবিতা
সুন্দরী।
পরে এই কবিতাটি
'নির্ঝর' কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত
হয় প্রকাশিত হয়েছিল।
- সাধনা। ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
-
কবির চাওয়া।
এই কবিতাটি কবির জীবদ্দশায় কোনো গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয় নি।
-
মোসলেম ভারত। ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
- কবিতা:
কোরবানী।
উল্লেখ্য, উদারপন্থী ম্যাজিস্ট্রেট আলিমুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল আলম ছদ্মনামে
'সবুজপত্র' পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৭ সংখ্যায় [পৃষ্ঠা: ২৩৫-৪৪] 'আজ ঈদ'
নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি এই প্রবন্ধে 'কোরবানী'-কে
'বর্বর যুগের চিহ্ন' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এরই প্রতিক্রিয়ায় এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
এই কবিতাটি '
অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
সেপ্টেম্বর ১৯২০ (১৬ ভাদ্র- ১৪ আশ্বিন ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে
অসহযোগ আন্দোলন
এবং
খেলাফত আন্দোলনের
পক্ষে এবং ব্রিটিশ বিরোধী লেখা প্রকাশের জন্য 'নবযুগ
পত্রিকা' জামানত বাতিল হয়ে
যায়। পরে
ফজলুল হক জামানতের দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের
ব্যবস্থা করে দেন।
- সম্পাদকীয়
মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?
পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করার আগে
নবযুগ'
পত্রিকায়
মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?
নামক সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছিল। এর পিছনে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত হয়েছিল
হিজরত আন্দোলন। উল্লেখ্য, ১৯২০
খ্রিষ্টাব্দে মওলানা আবুল কালাম আজাদ রাচী জেল থেকে মুক্তিলাভের পর হিজরত
আন্দোলন শুরু করেন। তার অনুসারী কওমী আলেমগণ ফতোয়া দেন যে, 'ভারত দারুল
হারব এবং এখান থেকে হিজরত করে কোন দারুল ইসলামে যেতে হবে'। এই দারুল ইসলামের
স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল 'আফগানিস্তান'কে। এই ফতোয়ার সূত্রে লক্ষ লক্ষ
মুসলমান তাঁদের সকল সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি
নিয়েছিল। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের কেবলমাত্র আগষ্ট মাসের দিকে প্রায় আঠারো হাজার
মুসলমান আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিল। এ ছাড়া প্রায় পাঁচ লক্ষ মুসলমান আফগানে
যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের ভিটেমাটি বিক্রয় করেছিলো।
-
ধর্মঘট।
নবযুগ'
পত্রিকায়
প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধটির রচনা প্রসঙ্গে,
মুজাফ্ফর আহমদ
তাঁর 'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা' গ্রন্থের যে বিবরণ দিয়েছেন, তা হলো-
'ধর্মঘট'
শিরোনামের লেখাটি হতে সকলে বুঝতে পারবেন যে ১৯২০
সালেও মেহনতী জনগণের প্রতি নজরুলের আকর্ষণ কতটা
ছিল। সে কয়লা খনির দেশের লোক। তাই,
লেখার সময়ে কয়লা খনির মজুরদের চেহারাই
তার চোখের সামনে বেশী করে ভেসে উঠেছে। কোনো একটি
ধর্মঘটকে উপলক্ষ করে সে এ লেখাটা লেখেনি। ১৯২০ সালে
দেশময় এখানে-ওখানে ধর্মঘট চলছিলই ।
অসহযোগ আন্দোলনের
সূত্রে নজরুল কংগ্রেসের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। 'নবযুগ' পত্রিকার জামানত বাতিলের
কারণে, কংগ্রেসের প্রতি নজরুল সে অনুরক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছিলে। ইতিমধ্যে প্রচারিত
হয়েছিল যে, কংগ্রেসের ৩৭তম অধিবেশন কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে। এই অধিবেশনে
উপস্থিত থাকার জন্য, সাংবাদিক হিসেবে যোগদানের উদ্যোগ নেন।
৪-৫ সেপ্টেম্বর (সোম-মঙ্গল, ১৯-২০ ভাদ্র
১৩২৭) কলকাতায় কংগ্রেসের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনের সভাপতিত্ব
করেছিলেন লালা লাজপৎ রায়। অধিবেশনে
মহাত্মা গান্ধী ও
জহরলাল
নেহেরু উপস্থিত ছিলেন। নজরুল ও
মুজাফ্ফর আহমদ
নবযুগের প্রতিনিধি হিসেবে এই অধিবেশনে যোগদান করেছিলেন।
নবযুগ প্রকাশিত হওয়ার পর নজরুল,
মুজাফ্ফর আহমদ-সহ
কয়েকজনের সাথে '
বঙ্গীয়
মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র সার্বক্ষণিক
সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটেছিল। এই সূত্রে নজরুল ও
মুজাফ্ফর আহমদ
সমিতির ভবনে না-থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তাঁরা নতুন বাসস্থানের সন্ধান করা শুরু
করেন। এবং শেষ পর্যন্ত মার্কুইস লেনের একটি বাড়িতে উঠেছিলেন। এখানকার অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশে
মুজাফ্ফর আহমদ
অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর এঁরা কয়েকদিনের জন্য নবযুগ পত্রিকার অফিসের (
৮, টার্নার স্ট্রিটের বাসায়) কাটিয়েছিলেন। এরপর নবযুগ
পত্রিকার কাছেই ৮/এ, টার্নার স্ট্রিটের বাসায়
এঁরা উঠে আসেন। এই বাড়িতে থাকার সময় নজরুল সহজাত গুণে বস্তির নানা জনের সাথে তাঁর
বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। প্রসঙ্গে,
মুজাফ্ফর আহমদ
তাঁর 'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা' গ্রন্থের লিখেছেন-
'...জামিন বাজেয়াপ্ত
হওয়ায় 'নবযুগ' তখন
সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
আমর! তাই কয়েকদিন 'নবযুগ'
আফিসেও (৬, টার্নার স্ট্রীটে) ছিলেম। তারপরে আমরা
যে-বাড়ীটি ভাড়া নিয়েছিলেম
তার কিছু বর্ণনা এখানে না দিলেই নয়। বাড়ীটির নম্বর ছিল ৮/এ,
টার্নার, 'নবযুগ'
আফিস হতে মাত্র এক-দু? মিনিটের পথ দূরে।
টার্নার স্ট্রীটের এখন নাম নওয়াব আবদুর
রহমান স্ট্রীট। অন্ধকার
বাই লেনের ভিতরে একটি খোলার বস্তীর মধ্যেখানে ছিল ৮/এ নম্বরের
ছোট্ট একতলা পাকা বাড়ীটি। তখনকার দিনে ভাড়া
ছিল মাসিক দশ টাকার কিছু
কম। বাড়ীটিতে জলের কল, পায়খানা, রান্নাঘর ইত্যাদি
সবই ছিল। খানিকটা উঠোনও ছিল বাড়ীতে। বস্তিটি
ছিল মুসলমানদের। বয়স্কা
মহিলাদের মধ্যে নজরুল তো খালা (মাসী)
পাতিয়ে নিল। যাঁর গায়ের রং ফরস৷ছিল
তাঁকে সে রাঙা খালা
ডাকত । এই খালারা মাঝে মাঝে আমাদের খাওয়ার
সময়ে তাঁদের রান্নাকরা তরকারিও আমাদের দিয়ে
যেতেন।'
এই বাড়িতে থাকার সময় সে সময়ের অনেক সাহিত্যিক সাংবাদিকরা
আড্ডা দেওয়ার জন্য আসতেন। এছাড়া আড্ডা দেওয়ার জন্য নজরুলও '
বঙ্গীয়
মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র অফিসে যেতেন।
এই মাসে নজরুলের ২টি কবিতা ও ১টি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল।
- মোসলেম ভারত
। আশ্বিন ১৩২৭ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
-
কবিতা।
মোহরম।
১৩২৯ বঙ্গাব্দের ১৬ ভাদ্র মোহর্রম
সংখ্যায় ধূমকেতুতে কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। কবিতাটি পরে
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল।
-
গল্প।
দুরন্ত পথিক।
নবযুগ পত্রিকায়
প্রকাশিত এই গল্পটি পুনরায় ছাপা হয়েছিল। গল্পটি পরে
রিক্তের বেদন
গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
- বঙ্গনূর আশ্বিন ১৩২৭ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ)
- কবিতা:
গরিবের ব্যথা সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটি পরে
'নির্ঝর'
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল।
অক্টোবর
১৯২০ (১৫ আশ্বিন- ১৫ কার্তিক ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দুর্গাপূজা উপলক্ষে
নবযুগ পত্রিকার অফিস ছুটি হয়ে যায়।
এই ছুটি কাটানোর জন্য অক্টোবরের ১-২ তারিখে
(রবি-সোম, ১৫-১৬ আশ্বিন) নজরুল এবং
মুজাফ্ফর আহমদ বরিশালে শের-এ-বাংলা
আবুল কাশেম ফজলুল হকের ভাগ্নে ওয়াজির আলী ও ইউসুফ আলীর বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সময়
আবুল কাশেম ফজলুল হক
ও
বরিশালে ছিলেন। নজরুল এবং
মুজাফ্ফর আহমদ
বরিশালে দু'দিন কাটিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই সময় নজরুল ৪টি গান রচনা করেন। এই
৪টি গান হলো-
গান:
-
বন্ধু আমার! থেকে থেকে
কোন্ সুদূরের বিজন-পূরে
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- 'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'। পরে গানটি
মোসলেম ভারত
পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৭' (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯২০) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
নজরুলের
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণে [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২
সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২] অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শিরোনাম:
দূরের বন্ধু।
-
হয়তো তোমার পাব দেখা
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- 'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'। পরে গানটি
মোসলেম ভারত পত্রিকার 'পৌষ ১৩২৭' (ডিসেম্বর ১৯২০-জানুয়ারি
১৯২১)] সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুলের
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণে [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২
সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২] অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
শিরোনাম:
আশা
- পথিক ওগো চলতে পথে তোমায় আমায়
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- 'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'। এরপর
নারায়ণ
পত্রিকার [মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় বাণী অংশ মুদ্রিত হয়েছিল।
এরপর
নারায়ণ
পত্রিকায়
[চৈত্র ১৩২৭ (মার্চ-এপ্রিল ১৯২১) প্রকাশিত হয়েছিল। গানটির রচয়িতার নাম ছিল- হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম।
গানটির স্বরলিপিকার ছিলেন- মোহিনী
সেনগুপ্তা [পৃষ্ঠা: ৫৩৮-৫৩৯]। এরপর যে সকল পত্রিকা ও গ্রন্থে গানটি
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হলো-
সিন্ধু-হিন্দোল প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ],
শিরোনাম: 'পথের স্মৃতি'।
নজরুল গীতিকা
প্রথম সংস্করণ [১৬ ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০]
-
কোন মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদনা হানে
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- 'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'। পরে গানটি
মোসলেম ভারত
পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩২৭' (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১) সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর যে সকল পত্রিকা ও
গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হলো-
কল্লোল
পত্রিকা
[অগ্রহায়ণ ১৩৩০ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২৩),
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণ [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২
সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২] শিরোনাম:
মরমী।
নজরুল গীতিকা
প্রথম সংস্করণ [১৬ ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০]।
নজরুল এবং
মুজাফ্ফর আহমদ
বরিশাল থেকে কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন অক্টোবর মাসে ৩ তারিখে (মঙ্গল, ১৭ আশ্বিন ১৩২৭)। বাকি সময় তিনি 'নবযুগ' পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান।
এই মাসে নতুন ১টি গান এবং ২টি কবিতা প্রকাশিত
হয়েছিল। এ ছাড়া পূর্বে রচিত ১টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো-
- গান:
- ঘোমটা-পরা কাদের ঘরের [তথ্য]
গানটির সাথে রচনাকাল পাওয়া যায়- 'কলিকাতা, কার্তিক ১৩২৭'। গানটি
মোহিনী সেনগুপ্তা-কৃত স্বরলিপি-সহ
প্রকাশিত হয়েছিল
স্বরমূর্ছনা পত্রিকার [কার্তিক ১৩২৭ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯২০) সংখ্যায়।
গানটি পরে
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণ [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫
আশ্বিন ১৩৩২] অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
শিরোনাম:
সন্ধ্যাতারা।
- বন্ধু আমার! থেকে থেকে
কোন্ সুদূরের বিজন-পূরে
[তথ্য]
পূর্বে প্রকাশিত।
দূরের বন্ধু
শিরোনামে
মোসলেম ভারত
পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৭' (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯২০) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
- কবিতা
-
বাঁশির ব্যথা। বঙ্গানূর পত্রিকায় 'কার্তিক ১৩২৭' (অক্টোবর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। এটি হলো- জালালউদ্দীন রুমির রচিত একটি কবিতার ভাবানুবাদ।
পরে
নির্ঝর'
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
-
অতল পথের যাত্রী
বঙ্গবাণী পত্রিকায় 'কার্তিক ১৩২৭' (অক্টোবর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
সিন্ধু-হিন্দোল
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল।-
অবেলায়।
সাধনা পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৭' সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
কবিতাটি কবির জীবদ্দশায় কোনো গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
নভেম্বর ১৯২০ (১৬ কার্তিক-১৫ অগ্রহায়ণ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
নজরুল বরিশাল থেকে কলকাতায় ফিরে আসার পর তিনি ৩টি গান ও ৩টি কবিতা রচনা করেন।
এগুলো হলো-
- গান
- আজ যুগের পরে ঘরকে ফিরে [তথ্য]
নারায়ণ
[অগ্রহায়ণ ১৩২৭ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২০)। শিরোনাম 'গান' (হাবিলদার কাজী নজরুল
ইসলাম)। পৃষ্ঠা: ৮১]
[নমুনা]
-
অগ্নি ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে
[তথ্য]
এই গানটি রচনার সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী দলের
অন্যতম সদস্য
বারীন্দ্রকুমার
ঘোষ। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল, রাত সাড়ে বারটায় বিহারের মুজাফ্ফরপুর ইউরোপীয়ান
ক্লাবের সামনে ক্ষুদিরাম বসু
ও প্রফুল্ল
চাকী বোমা নিক্ষেপ করেন। এই বোমা হামলার পর পুলিশ অনুসন্ধানের সূত্রে ২রা মে, ৩২ নম্বর মুরারিপুকুরের বাগান বাড়িতে বোমা তৈরির কারখানা আবিষ্কার করে এবং বোমা তৈরি
মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ এই বোমা
হামলার তদন্তের সূত্রে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মে একটি মামলা দায়ের করে। ঐতিহাসিকভাবে
এই মামলা 'আলীপুর বোমা মামলা' নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই মামলার রায় প্রকাশিত হয় ৬ই
মে। এই রায় অনুসারে বারীন ঘোষকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পরে আপিলে
তাঁর মৃত্যুদণ্ড রহিত করা হয় এবং ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আন্দামানে পাঠানো হয়।
প্রায় এক দশক পর ব্রিটিশ-ভারতীয় সরকার রাজনৈতিক বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিলে, ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে আশ্বিন
(১৩২৭ বঙ্গাব্দ) দিকে বারীন
ঘোষকে কলকাতায় এনে মুক্তি দেওয়া হয়।
বারীন্দ্রকুমার
ঘোষ কলকাতায় এসে সেকালের প্রখ্যাত মাসিক পত্রিকা '
নারায়ণ
'-এ যোগদান করেন। উল্লেখ্য, এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২১
বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে। সম্পাদক ছিলেন শ্রীচিত্তরঞ্জন দাশ। উল্লেখ্য,
তাঁর কলকাতায় আসার আগে থেকেই তাঁর রচিত 'দ্বীপান্তরের কথা'
ধারাবাহিকভাবে '
নারায়ণ'-এ
প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল
বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার
ঘোষ-কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। সেই সাথে তাঁর
লেখা পাঠ করে,
নজরুল তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন।
'
নারায়ণ'-এর
'অগ্রহায়ণ ১৩২৭' সংখ্যায়, মোসলেম ভারত পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩২৭' সংখ্যায়
প্রকাশিত নজরুলের রচিত বাঁধন-হারা গল্পের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই
সাথে এই গল্পের প্রশংসা করা হয়েছিল। এই সূত্রে
তাই নজরুল
বারীন্দ্রকুমারকে কবিতাকারে একটি চিঠি লেখেন এবং বন্ধু পবিত্র
গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে তা
কবিতাটি পাঠিয়েছিলেন। এ
কবিতাটির প্রথম দুটি চরণ ছিল-
অগ্নি-ঋষি অগ্নিবীণা তোমায় সাজে;
তাই তো তোমার বহ্নি-রাগে বেদন-বেহাগ বাজে।
এই কবিতাটিকে পরে নজরুল গানে
পরিণত করেছিলেন এবং তা
উপাসনা পত্রিকা
পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল। এর শিরোনাম ছিল
অগ্নি-ঋষি '।
শিরোনামের নিচে লেখা ছিল- 'তিলক-কামোদ-ঝাঁপতাল'।
এই গানটি
অগ্নি-বীণা
প্রথম সংস্করণের [কার্তিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দ। ২৫শে অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ]
উৎসর্গ
-পত্রে যুক্ত করেছিলেন।
ডিসেম্বর ১৯২০ (১৬ অগ্রহায়ণ-১৬ পৌষ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
তৎকালীন রাজনৈতিক ভাবনা এবং সমসাময়িক নানাবিধ কারণে নজরুল বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
সম্ভবত পত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক
ফজলুল হকের
সাথে তাঁর কিছুটা মতানৈক্য ঘটেছিল।
এই অবস্থা থেকে নজরুলকে কিছুদিন কলকাতার বাইরে থাকার
পরমার্শ দেন '
মোসলেম ভারত' পত্রিকার পরিচালক
আফজাল-উল হক। তাঁদের পরামর্শে নজরুল অগ্রহায়ণ
(ডিসেম্বর) মাসের দিকে কলকাতা ত্যাগ করে দেওঘর যান। উল্লেখ্য, দেওঘর বর্তমানে
ভারতের ঝাড়খণ্ড প্রদেশের দেওঘর জেলার
জেলাসদর। সে সময়ে দেওঘর ছিল সাঁওতাল পরগণার অংশ। দেওঘরে থাকার ব্যবস্থা হিসেবে
'মোসলেম ভারত' পত্রিকার পরিচালক আফ্জালুল হক,
নজরুলের সাথে একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুসারে নজরুল দেওঘরে যা কিছু রচনা
করবেন, তার সবই '
মোসলেম ভারত'-এ প্রকাশিত হবে এবং এর জন্য নজরুলকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা দেওয়া
হবে। অবশ্য দেওঘরে থাকাকালীন রচিত গানগুলো 'মোসলেম ভারত' ছাড়াও সওগাত পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছিল।
দেওঘরে যাওয়া উপলক্ষে এঁরা নজরুলের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে
আশ্বিন মাসে বরিশালে রচিত 'বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন্ সুদূরের নিজন-পূর'
গানটি নজরুল পরিবেশন করেছিলেন। রেলপথে দেওঘর যাওয়ার সময়, কিছু হিন্দু-পাণ্ডা তাঁকে
একরকম জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। পরে নজরুল নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে
রক্ষা পান। এরপর পাণ্ডারা তাঁকে দেওঘরের রাজনারায়ণ বসুর বাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখানে
একদিন কাটিয়ে, নজরুল ডা. কার্তিক বসুর স্যানেটেরিয়ামে একটি কটেজ ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু
করেন।
এই সময় স্যানেটেরিয়ামের তত্ত্ববধায়ক
ছিলেন 'ব্যবসা বাণিজ্য' পত্রিকার সম্পাদক শচীন্দ্র বসুর বড় ভাই। তবে শচীন্দ্র বসুর
স্ত্রী কুমুদিনী বসু দেওঘরে ছিলেন। উল্লেখ্য কুমুদিনী
বসু ছিলেন 'সঞ্জীবনী' পত্রিকার সম্পাদক কৃষ্ণকুমার মিত্রের কন্যা এবং রাজনারায়ণ
বসুর দৌহিত্রী। এঁরা সবাই সাহিত্যচর্চা করতেন বলে, সকলের সাথে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছিল।
এই সময় নজরুলের জন্য রান্নার কাজে হিরণা গ্রামের আব্দুল্লাহ নামক একটি ছেলে এঁরাই
ঠিক করে দিয়েছিলেন।
একটি ঘটনার সূত্রে দেওঘরের বসু পরিবারের সাথে নজরুলের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল।
ঘটনাটির সঠিক সময় জানা যায় না। ঘটনাটি হলো- একদিন রাত্রে রাজশাহী থেকে আগত একটি
যুবক তাঁর যুবতী সঙ্গিনীকে সাথে নজরুলে বাসায় আসেন এবং তাঁরা নিজেদেরকে দম্পতি
হিসেবে পরিচয় দেন। রাত্রে তাঁদের থাকার জায়গা নেই বিবেচনা করে, নজরুল এই বাসায়
তাঁদের রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা করে দেন। পরদিন ঘটনক্রমে জানা যায় যে এঁরা
স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। এই নিয়ে দেওঘরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই বিষয়ে কুমুদিনী
বসু নজরুলকে দোষারোপ করে প্রচার করেন যে, নজরুল জেনেশুনে এই যুবক-যুবতীকে আশ্রয়
দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি চরম আকার ধারণ করলে, কুমুদিনী বসু'র সাথে নজরুলের কথাবার্তা
বন্ধ হয়ে যায়। পরে কুমুদিনী বসু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। দেওঘর থেকে নজরুল ফিরে
আসার সময় কুমুদিনী বসু নজরুলের সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে, নজরুল দেখা করেন
নি। আরও পরে কুমুদিনী বসু,
তাঁর মেয়ের জন্মদিনে নজরুলে বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
দেওঘরের গিয়ে তিনি ভীষণ অর্থকষ্টে পড়েন। তাই ১৯ ডিসেম্বর (রবিবার,
৪ পৌষ ১৩২৭), সেখান থেকে (ডা. কার্তিক বসুর
স্যানেটোরিয়াম) নজরুল সবুজপত্র পত্রিকার পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লেখেন।
চিঠিতে জরুরি-ভিত্তিতে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে তিনি টাকা পাঠানোর
অনুরোধ করেছিলেন।
[পত্র-নমুনা]
দেওঘরে থাকাকালে নজরুলের রচিত ৩টি গান ও দুটি কবিতার কথা জানা
যায়। এগুলো হলো-
- গান
- ওরে এ কোন্ স্নেহ-সুরধুনী নামল
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনাকাল উল্লেখ আছে দেওঘর/পৌষ ১৩২৭'। গানটি মোহিনী সেনগুপ্তা-কৃত স্বরলিপি-সহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
'
মোসলেম ভারত'
পত্রিকার ফাল্গুন ১৩২৭ (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১) সংখ্যায়। পরে
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণে (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, আশ্বিন ১৩৩২)
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর শিরোনাম:
স্নেহ-ভীতু। এবং
পূবের হাওয়াৱ
প্রথম সংস্করণে (১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
- ঐ ঘাসের ফুল
[তথ্য]
গানটির সাথে রচনাকাল
উল্লেখ আছে- দেওঘর/ পৌষ ১৩২৭'। পরে
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণে
(১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ,
আশ্বিন ১৩৩২)। এর শিরোনাম:
অ-কেজোর গান। এবং
নজরুল গীতিকা
প্রথম সংস্করণে
(১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
- মহান তুমি প্রিয়
[তথ্য]
গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
সওগাত
পত্রিকার 'পৌষ ১৩২৭
(ডিসেম্বর ১৯২০-জানুয়ার ১৯২১) সংখ্যায় শিরোনাম
ছিল কলঙ্কী প্রিয় (বাউলের সুর)। পরে
পূবের
হাওয়া'র প্রথম সংস্করণ (জানুয়ারি ১৯২৬, ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) অন্তর্ভুক্ত
হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
শিরোনাম '
আশা
'।
- কবিতা
-
মুক্তি-বার:
গানটির সাথে রচনাকাল
উল্লেখ আছে- দেওঘর/ পৌষ ১৩২৭'। পরে
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণে (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, আশ্বিন ১৩৩২)
-
ছল-কুমারী:
গানটির সাথে রচনাকাল
উল্লেখ আছে- দেওঘর/ পৌষ ১৩২৭'। পরে
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণে (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, আশ্বিন ১৩৩২)
এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় এই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল হাফিজের
অনূদিত ২টি গজল। মোসলেম ভারত পত্রিকার পৌষ ১৩২৭ (ডিসেম্বর ১৯২০-জানুয়ার ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল দুটি
গজল। পরে গজল দুটি নির্ঝর কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গজল
দুটি হলো-
- হ্যাঁ,
এয় সাকিই শরাব ভর লাও [গজল-৩]
[কাব্যগ্রন্থ:
নির্ঝর]
এই গজলের ছন্দসূত্র:
'আলাইয়্যা আইয়োহাস্ সাকি আদির্ কা-সা ওয়ানা বিল্হা!'
হাঁ, এয়্ সাকি শরাব ভর্ লাও বোলাও পেয়ালী চালাও হরদম্।'
হে মোর সুন্দর! চাঁদের মতো মুখ
[গজল-৪]
[কাব্যগ্রন্থ:
নির্ঝর]
এই গজলের ছন্দসূত্র:
এয়্ ফরোগে মাহে হোসন আজ রূয়ে রোখ্শা নে শুমা
আবরূয়ে খূবি আজ চা- হো জনখদা নে শুমা।
জানুয়ারি ১৯২১
(১৭ পৌষ- ১৭ মাঘ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
দেওঘরে থাকার সময় নজরুলের কাছ থেকে উল্লিখিত ৩টি গানের ২টি এবং ২টি কবিতা পেয়ে
'মোসলেম ভারত' পত্রিকার পরিচালক
আফজাল-উল হক বিরক্ত হন। তিনি আশা করেছিলেন, অখণ্ড
অবসরের থাকায়, নজরুল প্রচুর কবিতা ও গান রচনা করবেন। এই সময়
আফজাল-উল হক তাঁকে
নিয়মিত টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন। ফলে দেওঘরে নজরুল আথিক সঙ্কটে পড়েন। এছাড়া
কলকাতার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের ছেড়ে বাস করতে গিয়ে নজরুল হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। এই
অবস্থায় মুজফ্ফর আহমেদ এবং তাঁর বন্ধু ইমদাদুল্লাহ দেওঘরে নজরুলের সাথে দেখা করার
জন্য যান। সেখানে নজরুলের আর্থিক দুরবস্থা দেখে, মুজফ্ফর আহমেদ তাঁর বন্ধু
ইমদাদুল্লাহর কাছ থেকে টাকা ধার করে, নজরুল এবং তাঁর রান্না ছেলে আব্দুল্লাহকে
কলকাতায় নিয়ে আসেন এবং মুজফ্ফর আহমেদের
১৪/২ চেতলা হাট রোডে বাসায় উঠেন।
উল্লেখ্য, নজরুল যখন দেওঘর গিয়েছিলেন, তখন নজরুল এবং মুজফ্ফর আহমেদ থাকতেন
৮/এ টার্নার স্ট্রিটের বাসায়। নবযুগ ত্যাগ করে নজরুল দেওঘরে চলে
যাওয়ার পর, নবযুগ পত্রিকার শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। ইতিমধ্যে
মুজাফ্ফর আহমদ নবযুগ পত্রিকার কাজ থেকে বিদায়
নিয়েছিলেন। এই সময় তিনি ৮/এ টার্নার স্ট্রিটের বাসা ছেড়ে দেন। এই সময় ফজলুর রহমানের
অানুকুল্যে ১৪/২ চেতলা হাট রোডে একটি বাসা পেয়ে যান এবং সেখানে গিয়েই উঠেন।
উল্লেখ্য,
ফজলুর রহমান ছিলেন
মুজাফ্ফর আহমদ সন্দীপ কার্গিল হাইস্কুলের সহপাঠী।
তিনি তখন ২৪ পরগণা জেলা-বির্ডের অফিসে চাকরি করতেন।
দেওঘর থেকে নজরুলের ফিরে আসার সংবাদ পেয়ে
আফজাল-উল হক, ১৪/২ চেতলা হাট রোডের বাসায় এসে নজরুলের সাথে দেখা করেন। তিনি নজরুলের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবেন এই আশ্বাস দিয়ে
৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের বঙ্গীয় সাহিত্য সমিতির অফিসে
নিয়ে যান। জানুয়ারি মাসের শেষের কয়েকদিন নজরুল এই অফিসেই কাটান।
এই সময় ছোটদের পাঠ্য বইয়ের প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে নজরুলের
পরিচয়। উল্লেখ্য, এই আলী আকবরের সূত্রেই নজরুলের জীবনে প্রথম বিবাহের বিড়ম্বনা
সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিষয়ে যথাসময়ে আলোচনা করা হবে।
এতসব ঝঞ্ঝাটের ভিতরে এই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল নজরুলের অনুদিত হাফিজের ২টি গজল, ১টি
কবিতা. ৩টি গল্প। এছাড়া পূর্বে প্রকাশিত ১টি গানও এই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল
নারায়ণ পত্রিকায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণের সূত্রে
ফার্সি ও উর্দু গজলের সাথে তাঁর পরিচয়
ঘটেছিল। কিছু কিছু ফার্সি গজলের অনুবাদও করেছিলেন। তখন হয়তো গান হিসেবে বাংলায়
গজলের ভাবনা ছিল না। তিনি মৌলিক গজল-গান রচনা করেছিলেন
আরও পরে।
- গজল: এই : এই দুটি গজল প্রকাশিত হয়েছিল মোসলেম ভারত
পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি ১৯২১)সংখ্যায়। এগুলো হলো-
- হাত হতে মোর হৃদয় যায়
[গজল-৫] [কাব্যগ্রন্থ:
নির্ঝর]
ছন্দ সূত্র:
"দিল্ মি রওদ যে দস্তম সাহিব দিলাঁ খোদারা'
হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান্ !
-
মোর পাত্র মদ্য
[গজল-৬]
[কাব্যগ্রন্থ:
নির্ঝর]
ছন্দসূত্র :
সা কী ব-নুরে বা-দা বর্-অফ্ রোজে জা-ম্
এমা
মোর পাত্র মদ্য-রোশনা
এয় সা- কী !
- কবিতা:
-
বিরহ-বিধূরা।
কবিতাটি মোসলেম ভারত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭
(জানুয়ার ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল- 'কাবুলী কবি 'খোশহাল'-এর হিন্দুস্থানে
নির্বাসনকালীন তাঁহার সহধর্মিণীর লিখিত একটি কবিতার ভাব অবলম্বনে। কবিতাটি
পুবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল।
- গল্প:
-
সাঁঝের তারা
: গল্পটি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য
পত্রিকার মাঘ ১৩২৭
(জানুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
রিক্তের
বেদন গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
-
মেহের নিগার:
গল্পটি 'নূর' পত্রিকার মাঘ ১৩২৭
(জানুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
রিক্তের
বেদন গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
-
রাক্ষুসী:
সওগাত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭
(জানুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
রিক্তের
বেদন গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল।
- গান
- আমার ঘরের পাশ দিয়ে [তথ্য]
রচনাকাল ও স্থান: দেওঘর/ মাঘ ১৩২৭'। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
সওগাত
পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায়। শিরোনাম:
বেদন-হারা।
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণ (১৯২৫ বঙ্গাব্দ)গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
প্রতিবেশিনী
শিরোনামে।
- পথিক ওগো চলতে পথে তোমায় আমায়
[তথ্য]
রচনাকাল ও স্থান: 'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'।
নারায়ণ
পত্রিকার [মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায় বাণী অংশ মুদ্রিত হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি ১৯২১ (১৭ পৌষ-১৮ মাঘ ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
আগেই উল্লেখ করেছি. ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের
জানুয়ারি মাসেই 'নবযুগ' পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নজরুলের এই পত্রিকার ছেড়ে যাওয়ার
কিছুদিন পর
মুজাফ্ফর আহমদও পদত্যাগ করেছিলেন।
ফজলুল হক এই পত্রিকাটিকে পুনরায় চালু
করার উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে বর্ধমানের আবুল কাসেমের উপর তিনি এই পত্রিকা পরিচালনার
দায়িত্ব অর্পণ করেন। এই সময় প্রধান লেখক হিসেবে আনা হয়েছিল
প্রিয়নাথ গুহ। দেওঘর থেকে ফিরে আসার পর,
ফজলুল হক পত্রিকার প্রচার বৃদ্ধির
জন্য নজরুলকে আবার আহ্বান করেন। নজরু্লও রাজি হয়ে গেলেন। নজরুল এই পত্রিকার সাথে যুক্ত হওয়ার পর,
পত্রিকার প্রচার বাড়ে নি। বরং তাঁর লেখার
জন্য সরকার পত্রিকার পরিচালককে তিন বার সতর্ক বার্তা পাঠায়। ফলে মন খুলে লেখার
উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছিলেন। লেখালেখির বিতৃষ্ণার মধ্যেও নজরুল ৩টি গান
এবং ২টি কবিতা রচনা করেন।
- গান
- এই নীরব নিশীথ রাতে [তথ্য]
রচনাকাল: কলিকাতা। ফাল্গুন ১৩২৭' সংখ্যা। গানটি পরে
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণে (১৯২৫ বঙ্গাব্দ)
'ব্যথা-নিশীথ'
শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
- যাস্ কোথা সই এক্লা
[তথ্য]
রচনাকাল: 'কলকাতা ফাল্গুন ১৩২৭।
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণ(১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)
অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম:
দুপুর অভিসার।
- কবিতা
-
ব্যথা-নিশীথ। রচনাকাল ও স্থান: কলিকাতা ফাল্গুন ১৩২৭।
ছায়ানট। কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
চিরশিশু
। রচনাকাল ও স্থান: কলিকাতা ফাল্গুন ১৩২৭।
ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
মুজফ্ফর আহমদ 'কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা'-তে
এই কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখেছেন-
১৯২২ সালে নজরুল যখন 'ধূমকেতু'
চালাচ্ছিল তখন একদিন শ্রীমতী বসু এসে নিজের মেয়ের জন্মদিবস উপলক্ষে তাকে
নিমন্ত্রণ করে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যান। নজরুল এই উপলক্ষে নীচের গানটি লিখেছিল।
এই গানটিই ছিল শ্রীমতী বসুর মেয়েকে নজরুলের জন্মদিনের উপহার-
নাম-হারা তুই পথিক শিশু এলি অচিন দেশ
পারায়ে...।'
উল্লেখ্য ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে নজরুল যখন দেওঘরে বাস করছিলেন। সে
সময়
একটি ঘটনার সূত্রে দেওঘরের বসু পরিবারের সাথে নজরুলের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল।
ঘটনাটি পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। এ ঘটনার সূত্রে কুমুদিনী
বসু'র সাথে সুসম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে
কুমুদিনী
বসু নিজের ভুল বুঝতে পেরে নজরুলের সাথে দেখা চেষ্টা করেছিলেন,
কিন্তু নজরুল তাঁর সাথে দেখা করেন নি। পরে কুমুদিনী বসু
তাঁর মেয়ের জন্মদিনে নজরুলকে নিমন্ত্রণ
করেন। নজরুল এই নিমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন এবং
কুমুদিনী বসু'র কন্যা অঞ্জলি বসুর জন্মদিন উপলক্ষে এই
কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
মুজাফ্ফর আহমদের কথা অনুসারে এই কবিতাটি রচনার প্রক্ষাপট যদি
অঞ্জলি বসুর জন্মদিন উপলক্ষে হয়, তাহলে তা হবে ১৯২১
খ্রিষ্টাব্দ। কারণ কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও রচনাকাল উল্লেখ আছে- 'কলিকাতা
ফাল্গুন ১৩২৭'। খ্রিষ্টাব্দের বিচারে দাঁড়ায় (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১)।
পূর্বে রচিত বা প্রকাশিত রচনা
-
স্নেহ-ভীতু।
গান: ওরে এ কোন্ স্নেহ-সুরধুনী নামল
[তথ্য]
রচনাকাল ও স্থান: দেওঘর। পৌষ ১৩২৭'। মোহিনী সেনগুপ্তা-কৃত স্বরলিপি-সহ
প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
'মোসলেম ভারতী
পত্রিকার ফাল্গুন ১৩২৭ (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১) সংখ্যায়।
-
মরমী।
বরিশাল।
আশ্বিন ১৩২৭। মোসলেম ভারত
পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩২৭' (ফেব্রুয়ারি
১৯২১) সংখ্যায় গানটি প্রকাশিত হয়েছিল।
মার্চ ১৯২১ (১৭ ফাল্গুন- ১৮ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে নজরুলের কোনো ধরাবাঁধা উপার্জন ছিল না। ফলে তিনি অত্যন্ত
আর্থিক সংকটে ছিলেন। তা ছাড়া ভারতের তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থায় তিনি মন খুলে লিখতেও
পারছিলেন না। সব মিলিয়ে নজরুল অনেকটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন।
এর ভিতরে তাঁর রচিত ১টি গান ও ১টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া পূর্বে রচিত দুটি
গান প্রকাশিত হয়েছিল এই মাসে।
এ মাসে প্রকাশিত নতুন গান ও কবিতা
- গান:
- নিরুদ্দেশের পথে যেদিন প্রথম আমার যাত্রা
[তথ্য]
ছায়ানট
-এর প্রথম সংস্করণ
গানটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ উল্লেখ আছে- কলিকাতা/চৈত্র
১৩২৭';। নারায়ণ
পত্রিকার চৈত্র ১৩২৭ (মার্চ-এপ্রিল ১৩২১)
সংখ্যায়। শিরোনাম:
নিরুদ্দেশের যাত্রী।
(বাউল-কাশ্মিরী খেমটা)। রচয়িতার নাম: হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম। পৃষ্ঠা:
৪৭৮-৪৭৯]। [নমুনা]
- কবিতা:
-
দহন-মালা।
ছায়ানট
- কাব্যে অন্তর্ভুক্ত এই কবিতার সাথে তারিখ উল্লেখ আছে- 'কলিকাতা/চৈত্র। এই
কবিতাটি নারায়ণ পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল:
দহন-মালা। পৃষ্ঠা: ৬৬২।
-
কার বাঁশি বাজিল।
ছায়ানট
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে
রচনার তারিখ উল্লেখ আছে-
কলিকাতা/চৈত্র ১৩২৮। এতে স্থান বা তারিখে ভুল আছে। মূলত ১৩২৮ বঙ্গাব্দের চৈত্র
মাসে নজরুল কুমিল্লায় ছিলেন। সম্ভবত গানটি রচিত হয়েছিল ১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে রচিত হয়েছিল।
-
দোদুল দুল্
পূর্বে রচিত যে সকল রচনা এই মাসে যে প্রকাশিত
হয়েছিল-
- আমার ঘরের পাশ দিয়ে
[তথ্য]
মোসলেম ভারত
[চৈত্র ১৩২৭ (মার্চ-এপ্রিল ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
গানটির রচনাকাল ও স্থান দেওঘর/ মাঘ ১৩২৭'। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
সওগাত
পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায়। শিরোনাম:
বেদন-হারা। পরে
ছায়ানট
কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে (সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২)
গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
প্রতিবেশিনী শিরোনামে
।
- পথিক ওগো চলতে পথে তোমায় আমায়
[তথ্য]
নারায়ণ
পত্রিকায় [চৈত্র ১৩২৭ (মার্চ-এপ্রিল ১৯২১) প্রকাশিত হয়েছিল। গানটির রচয়িতার
নাম ছিল- হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম। গানটির স্বরলিপিকার ছিলেন- মোহিনী
সেনগুপ্তা [পৃষ্ঠা: ৫৩৮-৫৩৯]।
গানটির
রচনাকাল ও স্থান:
'বরিশাল আশ্বিন ১৩২৭'। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
নারায়ণ পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯২১) সংখ্যায়। এরপর
সিন্ধু-হিন্দোল
(প্রথম সংস্করণ। শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ।
শিরোনাম: পথের স্মৃতি) এবং
নজরুল গীতিকা
(প্রথম সংস্করণ ১৬ ভাদ্র ১৩৩৭
বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। ছায়ানট-সাদ্রা) অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
এপ্রিল ১৩২১ (১৯ চৈত্র ১৩২৭-১৭ বৈশাখ ১৩২৮)
গত মাসের অস্থিরতা এই মাসে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছিল। এই
অবস্থায় পাঠ্য-পুস্তক ব্যবসায়ী
আলী আকবর খান তাঁকে নানাভাবে পাঠ্যবই লেখার জন্য উৎসাহিত
করতে থাকেন। কিন্তু নজরুল এ ব্যাপারে ততটা উৎসাহ দেখান নি। নজরুলের এই মানসিক
অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য, আলী আকবর খান তাঁকে তাঁর
দেশের বাড়ি কুমিল্লায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে
আফজাল-উল হকও নজরুলকে উৎসাহিত করেছিলেন। শেষ
পর্যন্ত নজরুল
আলী আকবরের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের শেষে (এপ্রিল ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ)
নজরুল
আলী আকবরের
সাথে চট্টগ্রাম মেল-ট্রেনে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা
দেন। রেলপথে যাওয়ার সময় তিনি একটি গান রচনা করেন। গানটি হলো-
ঐ
সর্ষে ফুলে লুটালো কার [ [তথ্য]
রচনাকাল: 'ট্রেনে কুমিল্লার
পথে/চৈত্র ১৩২৭।' গানটি
ছায়ানট
প্রথম সংস্করণে [বর্মণ পাবলিশিং
হাউস, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২। অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
শিরোনাম ছিল-নীল-পরী। পৃষ্ঠা ৪৪]
সম্ভবত এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে (সোমবার, ২২ চৈত্র ১৩২৭)
আলী আকবর কবিকে
সাথে নিয়ে, কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে ওঠেন।
ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের স্ত্রী ছিলেন- বিরজাসুন্দরী নজরুলকে
পুত্রস্নেহে কাছে টেনে নেন। নজরুলও তাঁকে মায়ে স্থানে বসিয়েছিলেন। এই সময়
ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বৌদি (প্রয়াত বসন্তকুমার সেনগুপ্তের
স্ত্রী) গিরিবালা
সেনগুপ্তা তাঁর কন্যা
আশালতা সেনগুপ্তাকে (দোলন বা দুলী) নিয়ে
ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের আশ্রয়ে ছিলেন। কান্দিরপাড়ে
অবস্থানকালে বিরজাসুন্দরীকে নজরুল মা সম্বোধন করার পাশাপাশি
গিরিবালাকে মাসিমা
সম্বোধন করেছিলেন। এই সময় আশালতার বয়স ছিল ১৩ বৎসর। পরে আশালতার সাথে নজরুলের
বিবাহ হয়েছিল। কবি তাঁর নাম দিয়েছিলেন
প্রমীলা।
|
দৌলতপুরের এই
বাড়িতে নজরুল উঠেছিলেন |
৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার, ২৩ চৈত্র ১৩২৭)
আলী আকবর
নজরুলকে সাথে নিয়ে, তাঁর গ্রামের বাড়ি দৌলতপুরে যান।
আলী আকবরের পরিবারের কর্ত্রী ছিলেন, তাঁর
বিধবা মেজ বোন একতারুন্নেসা। এই বোনের কন্যা সৈয়দা খাতুনকে দেখে নজরুল মুগ্ধ হন। আলী আকবর বিষয়টি বুঝতে পরে
তাঁর এই ভাগ্নীর সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেন। মুগ্ধ কবি সৈয়দা খাতুনের নাম দিলেন
'নার্গিস'।
তিনি এই প্রিয়ার জন্য লিখলেন, বেশ কিছু কবিতা ও গান। বৈশাখ মাসে তিনি সম্ভবত
'নার্গিস'কে নিয়ে রচনা করেছিলেন একাধিক কবিতা গান।
- গান
- রেশমি চুড়ির শিঞ্জিনীতে
[তথ্য]
ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে
রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
ছায়ানট প্রথম সংস্করণ।
শিরোনাম:
পাপড়ি খোলা।
ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার
তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশত
নজরুল-গীতিকা'র প্রথম সংস্করণে
গজল শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই গ্রন্থে এই গানটি-সহ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
২৬টি গজল। এই বিচারে নজরুলের রচিত প্রথম গজল ছিল এই গানটি।
- কোন্ সুদূরের চেনা বাঁশি
[তথ্য]
ভারতী পত্রিকার 'বৈশাখ ১৩২৮
সংখ্যার ৭০ পৃষ্ঠায় গানটি মুদ্রিত হয়েছিল। ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে গানটির রচনাকাল ও স্থানের উল্লেখ আছে-'কলিকাতা/শ্রাবণ, ১৩২৮।
শিরোনাম:
পলাতকা।
ধারণা করা যায়, ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে উল্লিখিত তারিখটি ভুলক্রমে লেখা হয়েছিল।
কবিতা
-
অনাদৃতা।
ছায়ানট
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
-
অবেলায়।
ছায়ানট
কাব্যগ্রন্থে কবিতার সাথে
রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
-
বিদায়-বেলায়।ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে
রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
-
হার-মানা-হার। ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার
সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
- আজান।
সাধনা।
[বৈশাখ ১৩২৮ (এপ্রিলে ১৯২১)] কবিতাটি কবির জীবদ্দশায় কোনো গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
-
দহন-মালা।
নারায়ণ।
[বৈশাখ ১৩২৮ (এপ্রিল ১৯২১)। পৃষ্ঠা: ৬৬২]
ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, বৈশাখ ১৩২৮।
১-২৪ মে ১৩২১ (১৮ বৈশাখ-১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮ পর্যন্ত) পর্যন্ত)
১০ই জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত তিনি কুমিল্লার দৌলতপুরেই কাটান। এই ১০ দিনে নজরুল একাধিক প্রেমের কবিতা রচনা করেছিলেন ।
এগুলো হলো-
-
বিধুরা পথিক-প্রিয়া।
ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮।
-
বেদনা-অভিমান।
ছায়ানটে
অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮।
-
মানস-বধূ।
ছায়ানটে
অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮।
-
হারা-মণি।
ছায়ানটে
অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- দৌলতপুর, কুমিল্লা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮।
মুজফ্ফর আহমদ 'কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা'-তে
এই কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখেছেন-
'[নজরুলকে নিয়েই বিরজাসুন্দরীর দেবীর কথাগুলি। সে যে তাঁকে মা ডেকেছিল সে-কথা
আগেই আমি বলেছি।]'
-
শায়ক-বেঁধা পাখী।
ছায়ানটে অন্তর্ভুক্ত কবিতার সাথে রচনার তারিখ উল্লেখ আছে- কুমিল্লা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮।
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৭ সংখ্যায় তিনটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল এই পত্রিকার জন্য 'ইংলিশম্যান; পত্রিকার ম্যাগাজিন
সেকশান থেকে অনুবাদ করেছিলেন। এই অনূদিত নিবন্ধগুলো হলো-
বৈশাখ থেকে ১০ই জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত তিনি কুমিল্লার দৌলতপুরেই কাটান। তাঁর ২১ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের
শেষ-প্রান্ত পার হয়েছিল 'নার্গিস'-এর সাথে প্রণয়ের মধ্য দিয়ে।
সূত্র:
- কাজী নজরুল। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সী
প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-১২। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ
- কাজী নজরুল ইসলাম। বসুধা চক্রবর্তী। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইন্ডিয়া। নয়
দিল্লী। জানুয়ারি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ।
- কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা। মুজফ্ফর আহমদ। ন্যাশনাল
বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা-১২।
প্রথম সংস্করণ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫।
- কেউ ভোলে না কেউ ভোলে। শৈলাজানন্দ মুখোপাধ্যায়। নিউ এজ
পানলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। আগষ্ট ১৯৬০।
-
নজরুল ইসলাম ও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন।
নজরুল-স্মৃতিচারণ। রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত। নজরুল একাডেমী, ঢাকা। ২৫ মে, ১৯৯৫।
- নজরুল-জীবনী। রফিকুল ইসলাম। নজরুল ইন্সটিটউট, ঢাকা।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল তারিখ অভিধান। মাহবুবুল হক। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
জুন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল রচনা সম্ভার। আব্দুল কাদির সম্পাদিত। ইউনিভার্সল
বুক ডিপো। কলিকাতা। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। প্রথম-দ্বাদশ খণ্ড [বাংলা
একাডেমী, ঢাকা]
- নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর [কবি নজরুল
ইনস্টিটিউট। আষাঢ় ১৪২৫/জুন ২০১৮]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট,
ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
- বিদ্রোহী-রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী। গোলাম মুরশিদ। প্রথমা,
ঢাকা। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
- বিষের বাঁশী : প্রথম সংস্করণ [১৬ই
শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ (শুক্রবার ১ আগষ্ট ১৯২৪
খ্রিষ্টাব্দ)]
-
প্রবাসী পত্রিকা [পৌষ ১৩২৬ সংখ্যা।
-
ভারতবর্ষ
পত্রিকা।
৭ম বর্ষ ১ম খণ্ডের ৩য়্
সংখ্যা (ভাদ্র ১৩২৬)।
- 'সওগাত' ও নজরুল। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। নজরুল-স্মৃতিচারণ। রফিকুল ইসলাম
সম্পাদিত। নজরুল একাডেমী, ঢাকা। ২৫ মে, ১৯৯৫।