ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                    প্রতিবেশিনী
আমার ঘরের পাশ দিয়ে সে চলত নিতুই সকাল-সাঁঝে।
আর এ পথে চলবে না সে সেই ব্যথা হায় বক্ষে বাজে।

আমার দ্বারের কাছটিতে তার ফুটত লালী গালের টোলে,
টলত চরণ, চাউনি বিবশ কাঁপত নয়ন-পাতার কোলে –
                                কুঁড়ি যেমন প্রথম খোলো গো!
                কেউ কখনও কইনি কথা,
                কেবল নিবিড় নীরবতা
                সুর বাজাত অনাহতা
                                গোপন মরম-বীণার মাঝে।

মূক পথের আজ বুক ফেটে যায় স্মরি তারই পায়ের পরশ
                                        বুক-খসা তার আঁচর-চুমু,
রঙিন ধুলো পাংশু হল, ঘাস শুকাল যেচে বাচাল
                                        জোড়-পায়েলার রুমঝুমু!

আজও আমার কাটবে গো দিন রোজই যেমন কাটত বেলা,
একলা বসে শূন্য ঘরে – তেমনি ঘাটে ভাসবে ভেলা
                                        অবহেলা হেলাফেলায় গো!
                    শুধু সে আর তেমন করে
                    মন রবে না নেশায় ভরে
                    আসার আশায় সে কার তরে
                                        সজাগ হয়ে সকল কাজে।

ডুকরে কাঁদে মন-কপোতী –
                    ‘কোথায় সাথির কূজন বাজে?
                                    সে পা-র ভাষা কোথায় রাজে?’

দেওঘর
মাঘ ১৩২৭

সওগাত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭  সংখ্যায় 'বেদন-হারা' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।