অগ্নি-বীণা
কাজীনজরুল ইসলাম
উৎসর্গ
ভাঙা বাংলার রাঙা যুগের আদি পুরোহিত, সাগ্নিক বীর
শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ
শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু
অগ্নি-ঋষি! অগ্নি-বীণা তোমায় শুধু সাজে।
তাই তো তোমার বহ্নি-রাগেও বেদন-বেহাগ বাজে॥
দহন-বনের গহন-চারী–
হায় ঋষি– কোন্ বংশীধারী
নিঙ্ড়ে আগুন আন্লে বারি
অগ্নি-মরুর মাঝে।
সর্বনাশা কোন্ বাঁশি সে বুঝ্তে পারি না যে॥
দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হান্ছিলে বৈশাখে,
হঠাৎ সে কার শুন্লে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।
বজ্রে তোমার বাজ্ল বাঁশি,
বহ্নি হলো কান্না হাসি.
সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী–
মন সরে না কাজে।
তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্ত-শিখা বাজে॥
রচনাকাল:
উল্লেখ্য,
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে
ব্রিটিশ সরকার
রাজনৈতিক বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময়
আন্দামানে নির্বাসিত
বিপ্লবী
বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে
কলকাতায় এনে মুক্তি দেওয়া হয়। বারীন্দ্র
সে সময়ের নারায়ণ পত্রিকার পরিচালকমণ্ডলির অন্যতম সদস্য হিসেবে
যোগদান করেন।
বারীন্দ্রকুমারের প্রতি নজরুলের ছিল ছিল প্রগাঢ় ভক্তি। তাই তিনি বারীন্দ্রকুমারকে কবিতাকারে
একটি চিঠি লেখেন এবং বন্ধু পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে কবিতাটি পাঠিয়ে দেন।
এ কবিতাটির প্রথম দুটি চরণ ছিল-
অগ্নি-ঋষি অগ্নিবীণা তোমায় সাজে;
তাই তো তোমার বহ্নি-রাগে বেদন-বেহাগ বাজে।
পরে তিনি এই কবিতাটিতে সুরারোপ করে গানে রূপ দিয়েছিলেন।
গানটিতে আন্দামানে অবস্থানকালে বারীন্দ্রকুমার ঘোষের লেখা "দ্বীপান্তরের বাঁশী"
বইটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। পরে
নজরুল 'অগ্নি-বীণা' কাব্যের 'উৎসর্গ'-পত্রে গানটি যুক্ত
করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশের সময়- গানটির 'সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী' চরণের 'প্রাণ' স্থানে ছাপা হয়েছিল 'জান'।