ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      পলাতকা

                কোন্‌ সুদূরের চেনা বাঁশীর ডাক শুনেছিস্‌ ওরে চখা?
                                       ওরে আমার পলাতকা!
তোর         পড়লো মনে কোন্‌ হারা-ঘর,
                                       স্বপন-পারের কোন অলকা?
                                       ওরে আমার পলাতকা!
                তোর         জল ভরেচে চপল চোখে,
                বল           কোন হারা-মা ডাকলো তোকে রে?
                ঐ             গগন-সীমায় সাঁঝের ছায়ায়
                                হাতছানি দেয় নিবিড় মায়ায়-
                উতল পাগল! চিনিস কি তুই চিনিস ওকে রে?
যেন          বুক-ভরা ও গভীর স্নেহে ডাক দিয়ে যায়, 'আয়,
                                ওরে আয় আয় আয়,
                কেবল     আয় যে আমার দুষ্টু খোকা!
                                        ওরে আমার পলাতকা!'
                             দখিন হাওয়ায় বনের কাঁপনে-
                দুলাল আমার! হাত-ইশারায় মা কি রে তোর
                                            ডাক দিয়েছে আজ?
                            এত দিনে চিনলি কি রে পর ও আপনে!
               নিশিভোরেই তাই কি আমার নামলো ঘরে সাঁঝ!

ধানের শীষে, শ্যামার শিসে-
জাদুমণি! বল সে কিসে রে,
তুই         শিউরে চেয়ে ছিঁড়লি বাঁধন!
              চোখ-ভরা তোর উছলে কাঁদন রে!
তোরে      কে পিয়ালো সবুজ স্নেহের কাঁচা বিষে রে!
যেন         আচম্‌কা কোন শশক-শিশু চমকে ডাকে হায়,
               '
ওরে আয় আয় আয়-
                আয় রে খোকন আয়,
বনে           আয় ফিরে আয় বনের সখা!
                            ওরে চপল পলাতকা।'

কলিকাতা
শ্রাবণ ১৩২৮

ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে গানটির রচনাকাল ও স্থানের উল্লেখ আছে -'কলিকাতা/শ্রাবণ, ১৩২৮। কিন্তু গানটি ভারতী পত্রিকার  'বৈশাখ ১৩২৮' সংখ্যার ৭০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হয়েছিল। ধারণা করা যায়, ছায়ানট কাব্যগ্রন্থে উল্লিখিত তারিখটি ভুলক্রমে লেখা হয়েছিল।