ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম
নিরুদ্দেশের যাত্রীনিরুদ্দেশের পথে যেদিন প্রথম আমার যাত্রা হ'ল শুরু। নিবিড় সে-কোন্ বেদনাতে ভয়-আতুর এ বুক কাঁপল দুরুদুরু॥ মিট্লো না ভাই চেনার দেনা, অমনি মু্হুর্মুহু ঘর-ছাড়া ডাক কর্লে শুরু অথির বিদায়-কুহু 'উহু উহু উহু'! হাতছানি দেয় রাতের শাঙন, অমনি বাঁধে ধরল ভাঙন – ফেলিয়ে বিয়ের হাতের কাঙন – আমি খুঁজি কোন্ আঙনে কাঁকন বাজে গো! বেরিয়ে দেখি ছুটছে কেঁদে বাদ্লি হাওয়া হু হু, মাথার ওপর দৌড়ে টাঙন, ঝড়ের মাতন, দেয়ার গুরু গুরু॥ পথ হারিয়ে কেঁদে ফিরি, ‘আর বাঁচিনে! কোথায় প্রিয়, কোথায় নিরুদ্দেশ?’ কেউ আসে না, মুখে শুধু ঝাপটা মারে নিশীথ-মেঘের আকুল চাঁচর কেশ। ‘তালবনে’তে ঝঞ্ঝা তাথই হাততালি দেয় বজ্রে বাজে তূরী, মেখ্লা ছিঁড়ি পাগলি মেয়ে বিজলি-বালা নাচায় হিরের চুড়ি ঘুরি ঘুরি ঘুরি (ও সে সকল আকাশ জুড়ি! থামল বাদল-রাতে কাঁদা, ভোরের তারা কনক গাঁদা, ফুটলো, ও মোর টুট্লো ধাঁধা— হঠাৎ ও কার নূপুর শুনি গো! থামল নূপুর, ভোরের তারাও বিদায় নিল ঝুরি'। এখন চলি সাঁঝের বধূ সন্ধ্যাতারার চলার পথে গো! আজ অস্তপারের শীতের বায়ু কানের কাছে বইছে ঝুরু-ঝুরু॥
কলিকাতা
চৈত্র ১৩২৭।