মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বি.এ
(১৮৮৩-১৯৭৬)
বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের চিফ হুইপ, কবি, সাংবাদিক।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর ভোলা জেলার সদর উপজেলার বাপ্তা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর আইএ পাস করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে (১৬ আশ্বিন ১৩১৬ বঙ্গাব্দ) তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'জাতীয় মঙ্গল প্রকাশিত হয়।  এ গ্রন্থটি তাঁকে সুধীমহলে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। উল্লেখ্য, সে সময়ে শান্তিপুর নিবাসী মোজাম্মেল হক নামে আরেকজন খ্যাতনামা কবি ছিলেন। ফলে তিনি 'জাতীয় মঙ্গল'-কাব্যের কবি মোজাম্মেল হক নামে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা ‘ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি এবং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। মোজাম্মেল হক এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিরবাচিত হন।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রচেষ্টায় কলকাতা শহরে ‘মুসলমান ছাত্র সমিতি’ গঠিত হয়। এই বছরেই তিনি  ২৯ নম্বর আপার সার্কুলার রোডের সাপ্তাহিক 'মোহাম্মদী' পত্রিকার অফিসে তৎকালীন সাহিত্যানুরাগীদের এক সভা আহবান করেন। উক্ত সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন খান বাহাদুর আহাসানউল্লাহ। ওই সভার উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিক্রমে 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র সভাপতি হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল ইন্সপেক্টর মৌলভী আব্দুল করিম এবং সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হন 
মোজাম্মেল হক
এছাড়া তাঁর উদ্যোগে ময়মনসিংহে বঙ্গীয় কৃষক প্রজা পার্টি গঠিত হয়েছিল।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে মোজাম্মেল হক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হোস্টেলের সুপারন্টেন্ড হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। এই হোস্টেলটি ছিল কলকাতার ৫১ নম্বর বৈঠকখানা সড়কে। এই সময় সমিতির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক, ৪৭/১ নম্বর মীর্জাপুর সড়কস্থ একটি বাড়ির নিচ তলায় মাসিক ২ টাকা ভাড়ায় সমিতির পাঠাগার স্থাপন করেন। অল্পদিনের মধ্যেই এই পাঠাগারটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই বছরের
২৪শে ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র  কার্যকরী সভায় একটি সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়ছিল। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা ' নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয় ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ ১৩২৫) তারিখ থেকে পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন ড মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মোজাম্মেল হক।  

৪৭/১ নম্বর মীর্জাপুর সড়কস্থ একটি বাড়িটিতে স্থান সঙ্কুলন না হওয়ায়, ‘ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র অফিস রিয়ে আনা হয় ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের ২/৩ কে শীল, এল. এম. এস-এর দোতলা বাড়িতে। এই অফিসে সে সময় থাকতেন
মুজাফ্ফর আহমদ ও আফজালুল হক। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে কাজী নজরুল ইসলাম, করাচিস্থ বাঙালী পল্টনের সেনানিবাস থেকে কলকাতায় এসে এই অফিসে আস্তানা গেড়েছিলেন।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতায় তিনি খাদেমুল ইসলাম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং বরিশাল মুসলিম ছাত্র সমিতিও তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের একক সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। এই বছরে তিনি 'ওরিয়েন্টাল প্রিন্টারস এন্ড পাবলিশার্স লিমিটেড নামক পুস্তক প্রকাশ ও প্রচারের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

মোজাম্মেল হক দীর্ঘ ২৭ বছর বরিশাল জেলা শিক্ষা বোর্ডের সদস্য, ১২ বছর কলকাতা হজ কমিটি ও কলকাতা টেক্স্ট বুক কমিটির সদস্য এবং তিন বছর বেঙ্গল প্রাইমারি এডুকেশন কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আইন পরিষদে ইংরেজীর পরিবর্তে বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কৃষক প্রজা পার্টির মনোনয়নে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন এবং চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। এই বছরে তিনি মুসলিম লীগের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট রেফারেন্ডামে অংশ গ্রহণ করেন।

১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর স্ত্রীর নাম হালিমা থাতুন।


সূত্র: