পূবের হওয়া
কাব্যগ্রন্থ
কাজী নজরুল ইসলাম


            বাদল-প্রাতের শরাব

বাদলা-কালো স্নিগ্ধা আমার কান্তা এল রিমঝিমিয়ে,
বৃষ্টিতে তার বাজ্‌লো নুপূর পায়জোরেরই শিঞ্জিনী যে।
ফুটিল ঊষার মুখটি অরুণ, ছাইল বাদল তাম্বু ধরায়,
জমল আসর বর্ষা-বাসর, লাও সাকি লাও ভর-পিয়ালায়।

ভিজল কুঁড়ির বক্ষ-পরাগ হিম-শিশিরের আমেজ পেয়ে,
হমদম! হরদম দাও মদ, মস্ত্ করো গজল গেয়ে!
ফেরদৌসের ঝরকা বেয়ে গুল-বাগিচায় চলছে হাওয়া,
এই তো রে ভাই ওক্ত খুশির, দ্রাক্ষারসে দিলকে নাওয়া।
কুঞ্জে জরিন ফারসি ফরাস বিছিয়েছে আজ ফুলবালারা,
আজ চাই-ই চাই লাল-শিরাজি স্বচ্ছ-সরস খোর্মা-পারা!
মুক্তকেশী ঘোর নয়না আজ হবে গো কান্তা সাকি,
চুম্বন এবং মিষ্টি হাতের মদ পেতে তাই ভরসা রাখি।
কান্তা সাথে বাচতে জনম চাও যদি কওসর অমিয়,
সুর বেধে বীণ সারেঙ্গিতে খুব্‌সে শিরিন্‌ শরাব পিয়ো !
সন্ধান তার মিলবে আশেক দিল্‌-পিয়ারার ওষ্ট-চুমায়!
খাম্‌খা তুমি মরছ কাজী শুষ্ক তোমার শাস্ত্র ঘেটে, -.
মুক্তি পাবে মদখোরের এই আল-কিমিয়ার পাত্র চেটে !

রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টাভাবে কিছু জানা যায় না। মোসলেম ভারত [আষাঢ় ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (জুন-জুলাই ১৯২০)] এই গানটি প্রকাশিত হয়েছিল গানটির নিচে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল- "হাফিজের-এর ছন্দ ও ভাব অবলম্বনে"। পরে এই গানটি পূবের হাওয়া প্রথম সংস্করণে আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (অক্টোবর ১৯২৫) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। শিরোনাম 'বাদল-প্রাতের শরাব'। এই কবিতাটি পাঠ করে মোহিতলাল মজুমদার মুগ্ধ হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের দিকে মোহিতলাল 'মোসলেম ভারত' পত্রিকার সম্পাদককে একটি দীর্ঘ পত্র লেখেন। চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছিল-'মোসলেম ভারত' পত্রিকার ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট ১৯২০) সংখ্যায়। প্রসঙ্গক্রমে এই চিঠিতে এই কবিতা সম্পর্কে লিখেছিলেন-

বাদল প্রাতের শরাব' শীর্ষক কবিতায় ইরানের পুষ্পসার ও দ্রাক্ষাসার ভরপুর হইয়া উঠিয়াছে। এই কবিতাটাতেও কবির 'মস্ত্' হইবার ও 'মস্ত্' করিবার ক্ষমতা প্রকাশ পাইয়াছে। বাঙ্গালী মাত্রেই ইহার উচ্ছল রসাবেশ অন্তরে অনুভব করিবে। কবির লেখনী জয়যুক্ত হউক।'

এই সময় নজরুলের সাথে  মোহিতলালের প্রথম সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সবুজপত্র পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। এই প্রথম সাক্ষাৎকারের সময় সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়। মুজাফ্ফর আহমদের 'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি ঘটেছিল নজরুল এবং  মুজাফ্ফর ৮/এ, টার্নার স্ট্রীটের বাসায় থাকার সময়। তবে ঘটনাটি ঘটেছিল সম্ভবত আগষ্ট বা জুলাই মাসে।

সূত্র: