জাগরণী
কাজী নজরুল ইসলাম
আমাদের এই শাশ্বত বাঙালির সুষুপ্ত, ঘুমে-ভরা অলস-প্রাণ জাগিয়ে তোলো তোমার জাগরণের সোনার কাঠি দিয়ে! তাদের ফুলের প্রাণে দাগ বসিয়ে দিয়ো তোমার মদির বাসের উন্মাদনার ছুরি হেনে! জাগো বকুল, জাগো! ওই রাজবাগানের ফুলবালাদের সালাম করো, আর তোমার অশ্রু-ভরা অভিনন্দন জানাও। ছোট্ট তুমি, এই পল্লি-বাটের পায়ে-চলার-পথ থেকে তাগিদে তোমার বুকভরা ভক্তি-ভালোবাসা নিবেদন করো। তোমার ওই পরাগালক্ত নিবেদিত অর্ঘ্য নিয়ে সে গুলবাহার-ভরা সুন্দরীদের বলো, – “ওগো, আমি ছোট্ট বকুল – নেহাত ছোট্ট! আমি জেগেছি! তাও সে অনেক দূরে পল্লির অচিন পথে! তোমরা আমায় ঘৃণা কোরো না! আমি আনব শুধু আমার পল্লিদুলালদের বুকের বেদন, তাদের খাপছাড়া আকুল আবদার, আর যুগ যুগ ধরে – পিষ্ট ক্লিষ্ট প্রাণের ব্যথা বিজড়িত সহজ চিন্তার স্মৃতি। এ বাছাদেরও ঘৃণা কোরো না, অবহেলা এদের প্রাণে বড্ড বাজবে! শিশু এরা – কুঁড়ি এরা, এখনও ফোটেনি। এরা তোমাদের দেশের হাওযার উড়িয়ে দেওয়া রেণুকা।
দিয়ো গো দিয়ো, তোমাদের ওই রানির স্নেহের শুধু একটু
রেণু, উড়িয়ে দিয়ো দখিন বায়ে এদের পানে! আহা, অনাদৃত বিড়ম্বিত হতভাগা,
এরা, ঘৃণা কোরো না এদের।’’...জাগো বকুল, জাগো! ঝোড়ো হাওয়ায় আর জোলো
মেঘে তোমায় ডাক দিয়েছে। জাগো – জাগো, পল্লিবুকের বেদন নিয়ে, পল্লিশিশুর
ঝরণা-হাসি নিয়ে, আর তরুণদের সবুজ বুকের অরুণ খুনের উষ্ণগতি নিয়ে! জাগো,
বকুল জাগো!! জাগো যৌবনের জয়টিকা নিয়ে!!!
'বকুল' পত্রিকা
[আষাঢ় ১৩২৭ (জুন ১৯২০) সংখ্যা]। শিরোনাম: 'উদ্বোধন'। এই
প্রবন্ধটি পরে যুগবাণী [কার্তিক ১৩২৯ (অক্টোবর ১৯২২) নামক
প্রবন্ধ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল]