ঘোড়ার ভুরু হয় না। (তাই বলে কই তাকে তো বিশ্রী দেখায় না।)
রোমন্থনকারী জন্তু মাত্রেই ক্ষুর বিভক্ত। (কিন্ত সাহিত্য-রোমন্থনকারী প্রাণিগুলির
আদতে ক্ষুর হয় না। এটা বুঝি ব্যতিক্রম।)
তিমি মৎস্যের দাঁত হয় না। তবে হাড়ের মতো একরকম পাতলা স্থিতিস্থাপক (যা
রবারের মতো টানলেই বাড়ে আবার আপনি সংকুচিত হয়) জিনিস তার ফোকলা মুখের
উপর-চোয়ালে সমান্তরাল হয়ে লেগে থাকে। তাই দিয়ে এ মহাপ্রভুর দাঁতের কাজ
চলে।
কচ্ছপ বা কাছিমের আবার দাঁত বিলকুল নদারদ (ছেলেবেলায় কিন্তু শুনেছি যে
কাছিমে আর ব্যাংএ একবার কামড়ে ধরলে মেঘ না ডাকলে ছাড়ে না।)
শশক বা খরগোশের চোখ কখনও বন্ধ হয় না, কেননা বেচারিদের চোখের পাতাই
নেই। মেমসাহেবদের মুখের বোরকার চেয়েও পাতলা একরকম চামড়ার পর্দা ঘুমাবার
সময় তাদের চোখের উপর ঘনিয়ে আসে। (মানুষের যদি ওরকম হত, তাহলে তো
লোকে তাকে 'চশমখোর' শা-র চোখের পর্দা নেই প্রভৃতি বলত। তাছাড়া, চোখের পাতা
না থাকলে প্রথমেই তো আমাদের চোখে ঘা হয়ে ফ্যাচকা-চোখো হয়ে যেতাম)।
নিশ্বাস প্রশ্বাসের জন্যে হরিণের নাকি নাকের ছ্যাঁদা ছাড়া আরও কতকগুলি এরকম
ছ্যাঁদা আছে। আশ্চর্য বটে!
প্যাচার চোখে কোনো গতি বা ভঙ্গি নেই, অর্থাৎ কিনা তাদের এ ভাটার মতো চোখ
দুটির তারা নড়েও না চড়েও না। সদা-সর্বদাই ডাইনি মাগির মতো কটমট করে তাকায়।
ভেড়ার আবার উপর-চোয়ালে দাঁত হয় না। (তাহলে দেখা যাচ্ছে যাঁর ওপর-চোয়ালের দাঁত ভেঙে যায় তিনিও এ ভ্যা-গোত্রের)। .
উট তো একেই একটা বিদঘুটে জানোয়ার, যাকে দূর থেকে আসতে দেখে অনেকে
সময় একটা সচল দোতলা বাড়ি বলেই মনে হয়। কিন্তু এর চেয়েও এ কুঁচবগলার হত্তম
সংস্করণ জীবটির একটা বিশেষ গুণ আছে। সে গুণ আবার পেছনকার পদদ্বয়ে। উষ্ট-ঠাকুর তাঁর পেছনের শ্রীচরণ দুটি দিয়ে তার বড় বপুর যে কোনো স্থান ছুঁতে পারেন।
একটি হাতির গর্দানে (স্কন্ধে) মাত্র চল্লিশ হাজার (বাপ্স!) মাংসপেশি থাকে।
সাধে কি আর এ-জন্তুর হাতি নাম রাখা হয়েছে।
কাঁকড়া এগিয়েও যেমন বেগে হাঁটতে পারে, পিছিয়েও তেমনি হাঁটতে পারে।
বাহ্যদুরি আছে এ মস্তকহীন প্রাণীটির।
আপনারা কোনো সর্বদর্শী জানোয়ার দেখেছেন কি? সে হচ্ছে জিরাফ। এই
জন্তুপ্রবর চতুর্মুখ না হয়েও আগেও যেমন দেখতে পান, পিছনেও তেমনি দেখতে পান।
ভাগ্য আর কাকে বলে!
আর একটি মজার বিষয় হয়তো আপনারা কেউ লক্ষ্যই করেননি বৃষ্টি হবার
আগে বিড়াল জানতে পারে যে বৃষ্টি আসবে, আর সে তখন হাঁচে। অতএব বিড়াল বৃষ্টির
দূত বললে কেউ আপত্তি করবেন না বোধ হয়।
উত্তর আমেরিকার ময়দানে একরকম লাল খেঁকশিয়ালি আছে। শুনছি, দুনিয়ার
কোনো প্রাণীই নাকি তাদের সঙ্গে দৌডুতে পারে না। কিন্ত আমাদের দেশি খেঁকিও বোধ কম যাবে
না। দিব নাকি এই লাল খেঁকির সঙ্গে আমাদের দেশি খেঁকির একদিন 'ঘোড়-দৌড় লাগয়ে?
বঙ্গীয় মুসলমান
সাহিত্য পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৭ সংখ্যায় তিনটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল এই
পত্রিকার জন্য 'ইংলিশম্যান; পত্রিকার ম্যাগাজিন সেকশান থেকে এই নিবন্ধটি অনুবাদ
করেছিলেন।