ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম
মরমী
কোন মরমীর মরম-ব্যথা আমার বুকে বেদনা হানে
জানি গো, সেও জানেই জানে।
আমি কাঁদি তাইতে যে তার ডাগর চোখে অশ্রু আনে,
বুঝেছি তা প্রাণের টানে॥বাইরে বাঁধি মনকে যত
ততই বাড়ে মর্ম-ক্ষেত,
মোর সে ক্ষত ব্যথার মতো
বাজে গিয়ে তারও প্রাণে,
কে ক'য়ে যায় হিয়ার কানে॥
উদাস বায়ু ধানের ক্ষেতে ঘনায় যখন সাঁঝের মায়া,
দুই জনারই নয়ন-পাতায় অমনি নামে কাজল-ছায়া॥
দুইটি হিয়াই কেমন কেমন—
বদ্ধ ভ্রমর পদ্মে যেমন,
হায়, অসহায় মূকের বেদন
বাজলো শুধু সাঁঝের গানে
পুবের বায়ুর হুতাশ তানে॥
বরিশাল
আশ্বিন ১৩২৭
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নবযুগ পত্রিকার অফিস ছুটি হয়ে যায়। এই ছুটি কাটানোর জন্য অক্টোবরের ১-২ তারিখে (রবি-সোম, ১৫-১৬ আশ্বিন) নজরুল এবং মুজাফ্ফর আহমদ বরিশালে শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের ভাগ্নে ওয়াজির জালী ও ইউসুফ আলীর বাড়িতে যান। এই সময় এই কবিতটি রচনা করেছিলেন। কবিতাটিতে সুরারোপিত করে গানে পরিণত করা হয়েছিল।
পরে গানটি মোসলেম ভারত পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩২৭' (ফেব্রুয়ারি ১৯২১)। শিরোনাম: মরমী। এরপর যে সকল পত্রিকা ও গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল, সেগুলো হলো- কল্লোল পত্রিকা [অগ্রহায়ণ ১৩৩০ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২৩), ছায়ানট প্রথম সংস্করণ [বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ আশ্বিন ১৩৩২] ও নজরুল গীতিকা প্রথম সংস্করণ [১৬ ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০]।