সিন্ধু-হিন্দোল
কাজী নজরুল ইসলাম


                   অতল পথের যাত্রী

                            –দূর প্রান্তর গিরি
অজানার মাঝে জানারে খুঁজিয়া ফিরি।
                হৃদয়ে হৃদয়ে বেদনার শতদল
                ঘিরিয়া রেখেছে অজানার পদতল।

পথের পথে ফিরি, সাথে ফেরে দিবানিশা,
কোথা তাঁর পথ – খুঁজে নাহি মেলে দিশা।
                কাঁদিয়া বৃথাই আমার নয়ন-জল
                সাগর হইয়া – করিতেছে টলমল।
                সে সায়রে দুলে আমার অশ্রুমতী
                আমার গানের বেদনা-সরস্বতী।
                নিয়ত তাহারই মৌন কাঁদন ঝরে
                আমার প্রাণের হাসির পান্না পরে।

আমার অশ্রুমতীরে শুধাই মিছে,
বৃথাই ছুটিনু মোর অজানার পিছে।                
               
উঠিছে পড়িছে ভাঙিছে জানার ঢেউ,
                হেরিতেছে ঢেউ– সাগর হেরে না কেউ!
                কূলে কূলে ফিরি, ঢেউয়ে ঢেউয়ে কাঁদি আমি,
                অতল গভীরে টেনে লও মোরে স্বামি!
                দেখিবে না ঢেউ,  দেখিব সিন্ধুতল
                যথা নাই ঢেউ – শুধু সে অতল জল।

বঙ্গবাণী পত্রিকার কার্তিক ১৩৩৩ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল।