ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      দহন-মালা

হায় অভাগী! আমায় দেবে তোমার মোহন মালা?
বদল দিয়ে মালা, নেবে আমার দহন-জ্বালা?
                    কোন ঘরে আজ প্রদীপ জ্বেলে
                    ঘরছাড়াকে সাধতে এলে
                    গগনঘন শান্তি মেলে, হায়!
দু-হাত পুরে আনলে ও কি সোহাগ-ক্ষীরের থালা
                    আহা         দুখের বরণ ডালা?
                    পথহারা এই লক্ষ্মীছাড়ার
পথের ব্যথা পারবে নিতে? করবে বহন, বালা?

লক্ষ্মীমণি! তোমার দিকে চাইতে আমি নারি,
                    দু-চোখ আমার নয়ন জলে পুরে,
বুক ফেটে যায় তবু এ-হার ছিঁড়তে নাহি পারি,
ব্যথাও দিতে নারি, – নারী! তাই যেতে চাই দূরে।

                    ডাকতে তোমায় প্রিয়তমা
                    দু-হাত জুড়ে চাইছি ক্ষমা,
                    চাইছি ক্ষমা চাইছি ক্ষমা গো!
নয়ন-বাঁশির চাওয়ার সুরে
            বনের হরিণ বাঁধবে বৃথা লক্ষ্মী গহনবালা।
কল্যাণী! হায় কেমনে তোমায় দেব
            যে-বিষ পান করেছি নীলের নয়ন-গালা।

কলিকাতা
চৈত্র ১৩২৭   

কবিতাটি নারায়ণ পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিল দহন-মালা। পৃষ্ঠা: ৬৬২।