অগ্নি-বীণা
কাজীনজরুল ইসলাম

  কোরবানী
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
       দুর্বল! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন !
             ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর, -
             আজিকার এ খুন কোরবানীর !
             দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
      শহীদের শির সেরা আজি !- রহমান কি রুদ্র নন ?
            ব্যাস ! চুপ খামোশ রোদন !
আজ শোর ওঠে জোর “খুন দে, জান দে , শির দে বৎস”
                        শোন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
                   ঞ্জর মারো গদ্র্দানেই,
                   পঞ্জ
রে আজি দরদ নেই,
                   মর্দানী’ই পর্দা নেই,
         ডরতা নেই আজ খুন্-খারাবীতে রক্ত-লুব্ধ-মন !
                   খুনে খেলবো খুন-মাতন !
দুনো উনমাদনাতে সত্য মুক্তি আনতে যুঝবো রণ ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
                 চ’ড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার
                 মুসলিমে সারা দুনিয়াটার !
                 ‘জুলফেকার’ খুলবে তার
        দু’ধারী ধার শেরে-খোদার , রক্তে-পূত-বদন !

                 খুনে আজকে রুধবো মন
ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্ ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
                 আস্তানা সিধা রাস্তা নয়,
                 ‘আজাদী মেলে না পস্তানো’য় !
                 দস্তা নয় সে সস্তা নয় !
          হত্যা নয় কি মৃত্যুও ? তবে রক্তে লুব্ধ কোন্
                কাঁদে-শক্তি-দুস্থ শোন_
“এয়্ ইবরাহীম্ আজ কোরবানী কর শ্রেষ্ঠ পুত্র ধন !”

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন
           এ তো নহে লহু তরবারের
           ঘাতক জালিম জোরবারের
          কোরবানের জোরজানের
খুন এ যে, এতে গোদ্র্দ ঢের রে, এ ত্যাগে ‘বুদ্ধ’ মন !
এতে  মা রাখে পুত্র পণ !
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরা’লো বলির পূত বসন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
              এই দিনই ‘মিনা’-ময়দানে
              পুত্র-স্নেহের গর্দানে
              ছুড়ি হেনে ‘খুন ক্ষরিয়ে নে’
       রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ !
             ছি ছি ! কেঁপোনা ক্ষুদ্র মন !
আজ জল্লাদ নয় , প্রহ্লাদ-সম মোল্লা খুন-বদন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
দ্যাখ্      কেঁপেছে ‘আরশ’ আসমানে
             মন-খুনী কি রে রাশ মানে ?
            ত্রাস প্রাণে ? তবে রাস্তা নে !
       প্রলয় বিষাণ ‘কিয়ামতে’ তবে বাজবে কোন্ বোধন ?
          সে কি    সৃষ্টি-সংশোধন ?
ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্ !-
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
         মুসলিম-রণ-ডঙ্কা সে,
         খুন দেখে করে শঙ্কা কে ?
         টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে,
ওরে হুঙ্কারে , ভাঙি গড়া ভীম কারা, ল’ড়বো রণ-মরণ !
        ঢালে বাজবে ঝন্-ঝনন্ !
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
           জোর চাই, আর যাচনা নয়,
           কোরবানী-দিন আজ না ওই ?
           বাজনা কই? সাজনা কই?
    কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্র্ধরণ ?
          বল্ – “যুঝবো জান ভি পণ !”
ওই খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,
আজ আল্লার নামে জান্ কোরবানে ঈদের পূত বোধন ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !  

রচনা ও প্রকাশকাল:
মোসলেম ভারত পত্রিকায় ভাদ্র ১৩২৭ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, উদারপন্থী ম্যাজিস্ট্রেট আলিমুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল আলম ছদ্মনামে 'সবুজপত্র' পত্রিকার শ্রাবণ ১৩২৭ সংখ্যায়  [পৃষ্ঠা: ২৩৫-৪৪] 'আজ ঈদ' নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি এই প্রবন্ধে 'কোরবানী'-কে 'বর্বর যুগের চিহ্ন' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এরই প্রতিক্রিয়ায় এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন।