২৪ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
নজরুল ইসলামের ২৪
বৎসর অতিক্রান্ত বয়স শুরু হয়েছিল ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ (শুক্রবার ২৫ মে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে।
শেষ হয়েছিল ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১ (শনিবার ২৪ মে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ)। '... সেদিন সকালেও ট্রেতে
আমার চা এসেছে। সেই কয়েদী
ওভারসীয়ারটি আমায় বলল যে 'টি-পটের তলাটা একবার
দেখে নিবেন। টি-পট্টা তুলতেই দেখতে পেলাম যে একখানা পত্র চাপা আছে,-
নজরুলের পত্র। লিখেছে, আমার কথা সে সব শুনেছে। আমি বহরমপুর বদলী হতে
পারি না? তার পরে লিখেছে তার সময় ভালোই কাটছে। শ্রীপূর্ণ দাস (মাদারীপুরের) একখানা নাটক
লিখে দেওয়ার জন্যে তাকে অনুরোধ করেছেন। তাই লিখছে সে তখন। শ্রীপূর্ণ দাস
বাইরে গিয়ে একটি চারণ দল গঠন করবেন। সেই চারণ দলের অভিনয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন নাটকখানার।
নজরুলের এই নাটক লিখিত হয়েছিল, তার পাণ্ডুলিপি জেল হতে বাইরে নিরাপদে পৌঁছেও
গিয়েছিল, কিন্তু তার পরে নাকি পাণ্ডুলিপিখানা হারিয়ে যায়। নজরুল ইসলামের একটা
সৃষ্টি এইভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।'
জুলাই ১৯২৩ (১৬ আষাঢ়- ১৫ শ্রাবণ ১৩৩০) এই মাসে প্রকাশিত গান একমাত্র গান ছিল- ১. বিজলী। ৪ঠা শ্রাবণ ১৩৩০ (২০ জুলাই
১৯২৩) সংখ্যা। শিরোনাম 'জাত জালিয়াত'।
অক্টোবর ১৯২৩ (১৪ আশ্বিন- ১৪ কার্তিক ১৩৩০) এই মাসে (মতান্তরে নভেম্বর) বিপ্লবী
পূর্ণচন্দ্র দাস কারামুক্ত হন। এই ঘটনা
উপলক্ষে নজরুল রচনা করেছিলেন 'পূর্ণ-অভিনন্দন'
শীর্ষক একটি গান। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে (শ্রাবণ
১৩৩১) প্রকাশিত
ভাঙার গান গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। নভেম্বর ১৯২৩ (১৫ কার্তিক- ১৪ অগ্রহায়ণ ১৩৩০)
এই মাসে রচিত রচনা জানুয়ারি (১৬ পৌষ-১৭ মাঘ ১৩৩০) ২৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার, ১১ ফাল্গুন ১৩৩০)। বঙ্গীয়
সাহিত্য পরিষদের মেদেনীপুর শাখার একাদশতম বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য নজরুল
মেদিনীপুর যান। নজরুল মেদেনীপুরে চারদিন ছিলেন। এই সময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মেদেনীপুর শাখার পক্ষ থেকে এবং মেদনীপুরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নজরুলকে
সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
'সংবাদপত্র পাঠে জানিতে পারিলাম যে, বাঙ্গালার নবযুগের
তরুণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছাহেবের সহিত জনৈক বিদুষী সম্ভ্রান্ত হিন্দু মহিলার
শুভ-বিবাহ স্থির হইয়াছে।' এই সংবাদ থেকে অনুমান করা যায় যে, সংবাদটি কিছু
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
১৬ এপ্রিল (বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৩৩১) নজরুলের বন্ধু নলিনাক্ষ সান্যালের বিয়ে থেকে
একরকম বিতারিত হয়ে, কলকতায় ফিরে আসেন এবং বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমস্ত
আয়োজন শেষে নজরুল সমস্তিপুরে যান এবং গিরিবালা দেবী ও
আশালতা'কে
সাথে নিয়ে কলকাতার অদূরে বালীগ্রামে, ড, অবনী চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে থাকা ৬ নম্বর হাজী
লেনের একটি বাড়ি ভাড়া করা বাসায় ওঠেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে (বুধবার ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ) বিরজাসুন্দরী দেবী
হুগলী জেলে গিয়ে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন। কিন্তু
জেল থেকে মুক্তি পান নি।
২৫-৩১ মে ১৯২৩ (১১-১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০)
অনশন ভঙ্গের পর, ২৫শে মে-তে (শুক্রবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০) অসুস্থ নজরুলকে রোগী
হিসেবে এক মাসের জন্য হুগলি জেলের নির্জন সেলে পাঠানো হয়েছিল। অর্থাৎ নজরুলের ২৪
বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের প্রথম দিন (জন্মদিন) নির্জন কারাগার কক্ষে কেটেছিল। এই সময়
তাঁকে সাধারণ পোশাক পরবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সাথে তাঁকে উন্নতমানের খাবারের
ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জুন ১৯২৩ (১৮ জ্যৈষ্ঠ- ১৬ আষাঢ় ১৩৩০)
১৮ই জুন (সোমবার ৩ আষাঢ় ১৩৩০) বহরমপুর জেলে নজরুল ইসলামকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
সেখানকার দারোগা অতুল কর গোপনে সংবাদ প্রচার করেছিলেন যে,
নজরুলকে হলদিয়া রেলস্টেশন দিয়ে বহরমপুর জেলে পাঠানো হবে। এই সংবাদের ভিত্তিতে
যুগান্তর দলের স্থানীয় সদস্যরা রেলস্টেশনে উপস্থিত হন এবং গোয়েন্দা পুলিশের অনুমতি
নিয়ে তাঁরা নজরুলের গলায় মালা পরিয়ে দেন।
পুলিশ গভীররাতে অন্যান্য রাজবন্দীদের সাথে নজরুলকে বহরমপুর জেলে পৌঁছে দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, তাঁর অন্যান্য সহ-কারাভোগীরা ছিলেন- মাদারিপুর শান্তি সেনাধ্যক্ষ বিপ্লবী
পূর্ণচন্দ্র দাস, দেশের ডাক গ্রন্থ রচয়িতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জিতেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়, সুফি মনজুর আলম, অমরেশ কাঞ্জিলাল প্রমুখ। এই জেলের সুপার
বসন্ত ভৌমিক সঙ্গীতচর্চার জন্য একটি হারমোনিয়াম যোগাড় করে দিয়েছিলেন। এই সময়ে
তিনি আবার লেখালেখিতে মনোযোগ দেন। তবে এই মাসে তাঁর কোনো
রচনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নি। অনেকের মতে এই সময় তিনি
রাজবন্দীদের অনুরোধে একটি নাটক রচনা করেছিলেন। তবে এই নাটকের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়
নি।
এ বিষয়ে মুজাফ্ফর আহমদ
তাঁর 'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা'য় একটু বিস্তারিত
লিখেছেন। উল্লেখ্য,
সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই
মে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
তাঁকে রাখা হয়েছিল আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে। জুলাই মাসের শেষের দিকে অধ্যাপক
জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত কাজে কয়েকদিনের জন্য বহরমপুর জেল থেকে
আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে এসেছিলেন। সে সময় জিতেন্দ্রলাল তাঁকে লেখা নজরুলের একটি পত্র
কয়েদী ওভারসিয়ারের মাধ্যমে গোপনে পাঠিয়েছিলেন।
মুজাফ্ফর আহমদ
তাঁর 'কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা'য় লিখেছেন-
হারিয়ে যাওয়া নাটকের একটি গান শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছিল বিজলী পত্রিকায়
প্রকাশিত হওয়ার সুবাদে। গানটি হলো-
ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা গ্রন্থে' গানটির 'রচনার স্থান
ও কাল' হিসেবে উল্লেখ করেছেন-'বহরমপুর জেলে ১৯২৩ সালের ১৮ই জুন থেকে ২০
জুলাই-এর মধ্যে লেখা'।
এই মাসে নজরুল যথারীতি বহরমপুরে জেলে ছিলেন। জেলের উন্নততর খাবার ও পরিবেশে নজরুলের
স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছিল। এই সময় তাঁর রচিত ও প্রকাশিত ২টি কবিতার কথা জানা যায়। কবিতাটি হলো-
আগষ্ট ১৯২৩ (১৬ শ্রাবণ- ১৪ ভাদ্র ১৩৩০)
গানটি তিনটি পত্রিকায় প্রকাশতি হয়েছিল। পত্রিকাগুলো হলো-
২.
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা
শ্রাবণ ১৩৩০ (আগষ্ট ১৯২৩)
৩.
উপাসনা শ্রাবণ ১৩৩০
(আগষ্ট ১৯২৩)।
এই মাসে নজরুল যথারীতি বহরমপুরে জেলে ছিলেন। এই মাসে পূর্ব প্রকাশিত 'জাতের
নামে বজ্জাতি সব'
গানটি
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য
ও
উপাসনা
পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই মাসে নজরুলের রচিত বা প্রকাশিত নতুন গানের সন্ধান পাওয়া যায় নি।
সেপ্টেম্বর ১৯২৩ (১৫ ভাদ্র- ১৩ আশ্বিন ১৩৩০)
এই মাসে নজরুল যথারীতি বহরমপুরে জেলে ছিলেন। এই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা'র দ্বিতীয় সংস্করণ। গ্রন্থটির প্রকাশক: শ্রীশরচ্চন্দ্র গুহ, বিএ,
আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রিট মার্কেট, কলিকাতা। মুদ্রক: শ্রীকমলাকান্ত দালাল, ক্রান্তিক প্রেস, ২২ সুকিয়া স্ট্রিট, কলিকাতা। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ শিল্পী ছিলেন-
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এই মাসে নজরুল যথারীতি বহরমপুরে জেলে ছিলেন। এই সময় দুর্গা পূজা উপলক্ষে নজরুল একটি
নাটক রচনা করেছিলেন। এই নাটকটি জেলের কয়েদদের নিয়ে অভিনীত হয়েছিল। নজরুল নিজেও নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন।
এই নাটকটির সন্ধান পাওয়া যায় নি।
দোলন চাঁপা
১৩৩০ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে (অক্টোবর ১৯২৩)
মাসে 'দোলন-চাঁপা' কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রকাশক ছিলেন শ্রী
শরচ্চন্দ্র গুহ, বি, এ, আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রিট মার্কেট, কলকাতা।
মুদ্রক রজনীকান্ত রাণা, চেরী প্রেস লিমিটেড, ৯৩/১এ বহুবাজার স্ট্রিট, কলকাতা। পৃষ্ঠা
৬৫৪। মূল্য এক টাকা চার আনা।
দোলন চাঁপা'র প্রথম সংস্করণে মোট ২১টি কবিতা ও গান স্থান পেয়েছিল। নিচে রচনাগুলোর প্রথম প্রকাশের সময়-সহ বর্ণানুক্রমিক
তালিকা দেওয়া হলো-
এই ২১টি কবিতার ভিতরে নজরুল দুটি ৪টি কবিতায় সুরারোপ
করেছিলেন। কিম্বা গান হিসেবেই রচনা করেছিলেন। এই গানগুলো
দোলনচাঁপাতেই প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
গানগুলো হলো-
দোলন চাঁপা'র শিরোনাম
শেষ প্রার্থনা।
দোলন চাঁপা'র শিরোনাম
আশা।
দোলন চাঁপা'র শিরোনাম
কবি-রানি।
দোলন চাঁপা'র
শিরোনাম
সাধের ভিখারিনী।
এই মাসে বেশ নজরুল বহরমপুর জেলে বেশ হইহুল্লোড় করে অন্যান্য রাজবন্দীদের নিয়ে মেতে ছিলেন।
এই সময় নজরুলের রচিত একটি কবিতার কথা জানা যায়। কবিতটি হলো-
এই মাসে প্রকাশিত পূর্বে রচিত রচনা
ডিসেম্বর ১৯২৩ (১৫ অগ্রহায়ণ- ১৫ পৌষ ১৩৩০)
নজরুল সহসা জেল থেকে মুক্তি পাক, তা চাইছিল না। তাই কারা
কর্তৃপক্ষ ১০ই ডিসেম্বর (সোমবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩৩০) নজরুলের বিরুদ্ধে কারা-বিধি
লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি বহরমপুর সাব-ডিভিশনাল
ম্যাজিস্ট্রেট এন কে সেনের আদালতে উত্থাপিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলে আইনি সহায়তা
দেওয়ার জন্য, ব্রজভূষণ গুপ্তের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী এই মামলা চালানোর দায়িত্ব নেন।
১৩ই নভেম্বর (বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৩৩০), নজরুলকে বহরমপুর সদর বিচারকের আদালতে
হাজির করা হয় এবং মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয় ১৪ই ডিসেম্বর।
১৪ই নভেম্বর (শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৩৩০) মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর মামলার
পরবর্তি দিন ধার্য করা হয় ৯ই জানুয়ারি (বুধবার, ২৪ পৌষ ১৩৩০)।
১৫ই ডিসেম্বর (শনিবার ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ), কারাবিধি
অনুসারে নজরুল এক মাসের রেয়াত লাভ করেছিলেন। ফলে কারা-করতৃপক্ষ
তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
নজরুলের কারামুক্তি হবে এ নিয়ে সংশয় ছিল। আকস্মিকভাবে ১৫ই ডিসেম্বর নজরুল মুক্তি
পাওয়া বড় কোনো আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। তবে স্থানীয়লোকের কাছে তাঁর মুক্তির খবর
পৌঁছালে, তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে নজরুলকে সংবর্ধিত করার আয়োজন করেন। সে সময়ের সমাজসেবক
ও রাজনীতিবিদ নলিনাক্ষ সান্যাল বিষয়টা জানতে পেরে জেল গেটে সংবর্ধনার আয়োজন করেন।
ধীরে ধীরে নজরুলের মুক্তির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, জেলগেটে বেশ বড়সড় জনসমাগম ঘটে।
নলিনাক্ষ সান্যাল উপস্থিত মানুষদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা করে, নজরুলে তাঁর নিজের
বাসায় নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, এই সময় নলিনাক্ষ সান্যালের বাসা ছিল
বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায়।
নিতাই ঘটকের 'জাতের নামে বজ্জাতি' নামক স্মৃতিচারণমূলক লেখা থেকে
এই এ সময়ের একটি মজার ঘটনা জানা যায়। নজরুল যখন বহরমপুর জেলে ছিলেন, তখন জেলের আশু
দারোগা রাজবন্দীদেরকে নানাভাবে নাজেহাল করতেন। নজরুল তাঁকে ব্যাঙ্গাত্মক 'মামা'
সম্বোধন করতেন। নজরুলের দেখাদেখি অন্যান্য কয়েদিরাও নজরুলের দেখাদেখি তাঁকে মামা
বলতেন। বলাই বহুল্য এই সম্বোধনে আশু দারোগা অত্যন্ত রেগে যেতেন। নজরুল যখন জেল থেকে
ছাড়া পেয়ে নলিনাক্ষ সান্যালের বাসায় আসেন, তখন দেখতে পান
যে, এই আশু দারোগার বাসা নলিনাক্ষ সান্যালের বাসার কাছেই।
যখন স্থানীয় নজরুল ভক্তরা আশু দারোগার 'মামা' সম্বোধনের বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন
স্থানীয় সবাই তাঁকে এই নামের ডাকা শুরু করেন। এতে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে
নলিনাক্ষ সান্যালের বাসার সামনে দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ঘুর
পথে তাঁর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন।
১৬ই ডিসেম্বর (রবিবার ৩০ অগ্রহায়ণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ), বহরমপুর
সায়েন্স কলেজ হোস্টেলের ১
নম্বর ব্লকে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রথম
জগৎ ঘটক এবং
নিতাই ঘটকের সাথে নজরুলের
পরিচয় ঘটে। উল্লেখ্য নজরুলের সঙ্গীত রচনায় পরবরতী জীবনে এই ভাই অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
সম্ভবত বহরমপুরে দুদিন তিনি কাটান নলিনাক্ষ সান্যালের বাড়িতে।
নজরুল তাঁর প্রেয়সী
আশালতার
দীর্ঘ-অদর্শনে ব্যাকুল হয়ে উঠেন। এই সময়
আশালতার
এবং তাঁর মা গিরিবালা কুমিল্লায়
ছিলেন। তাই তিনি ১৮ই ডিসেম্বর (মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৩৩০) বহরমপুর থেকে
কুমিল্লায় আসেন।
আশালতার সাথে
নজরুলের প্রণয়ের বিষয়টি তখন কুমিল্লায় আবার সরব হয়ে উঠে। ফলে
নজরুল এবং
আশালতা,
গিরিবালা এবং পরিবারের অন্যান্যরা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান।
এছাড়া কারাবিধি ভঙ্গের মামলায় ৯ জানুয়ারি (বুধবার, ২৪
পৌষ ১৩৩০) পুনরায় আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। তাই তিনি সত্বর
কলকতায় ফিরে এসেছিলেন। এর
কিছু পরে
আশালতা
ও গিরিবালা সমস্তিপুরে ফিরে
গিয়েছিলেন।
কুমিল্লা থেকে ফিরে আসার পর, নজরুলকে কারাবিধি ভঙ্গের মামলায় ৯
জানুয়ারি (বুধবার, ২৪ পৌষ ১৩৩০) পুনরায় আদালতে হাজির হতে হয়।
মামলা পরবর্তী তারিখ দেওয়া হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। কারামুক্তি এবং
কারাবিধির মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও কুমিল্লার ঘটনার কারণে নজরুল মানসিক ভাবে
স্বস্তিতে ছিলেন না। কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার কোনো সংবাদও পাওয়া যায় না।
এই মাসে নজরুলের রচিত বা প্রকাশিত কোনো রচনার সন্ধান পাওয়া যায় না।
ফেব্রুয়ারি ১৯২৪ (১৮ মাঘ- ১৭ ফাল্গুন ১৩৩০)
৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার, ২৪ মাঘ ১৩৩০), আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হলে, নজরুল এই মামলা থেকে মুক্তি পান।
এই সময় কুড়িগ্রামের মাহফুজুর রহমান তাঁকে কুড়িগ্রাম যাওয়ার আমন্ত্রণ করেন।
মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য কুড়িগ্রাম যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন।
কুড়িগ্রামে নজরুল
কুড়িগ্রামের হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রদায়গত ঐক্যের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। মাহফুজুর
রহমানের রচিত 'কুড়িগ্রামে কবি নজরুল ও নজরুলের সন্নিধান' প্রবন্ধ [সূত্র:
নজরুল-স্মৃতিচারণ। রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত। পৃ: ১৬৩-২১০] থেকে জানা যায়, প্রায় একই
সে সময় কুড়িগ্রামে প্রতিবৎসর হিন্দু ছাত্রদের সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হতো স্কুল
প্রাঙ্গণে আর মুসলমান ছাত্রদের বাৎসরিক মিলাদ মহফিল হতো বোর্ডিং হাউসের নিকটবর্তী
কাচারী সংলগ্ন কাচারি সংলগ্ন জুমা মসজিদে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দুভূষণ
রায়ের তত্ত্ববধানে উভয় আয়োজন হতো। এর জন পূজা ও মিলাদ মহফিলের জন্য দুটি পৃথক কমিটি
হতো। সাধারণত সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানের পরের দিন মিলাদ মাহফিল হতো। বাৎসরিক
অনুষ্ঠানে সে সময়ের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত হতেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে আগে
মিলাদ মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন- ড, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, স্যার
আজিজুল হক, গারাডোবের পাদ্রী, জমিরউদ্দীন বিদ্যাবিনোদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন 'বিদ্রোহী' কবিতার স্রষ্টা হিসেবে কাজী নজরুল
ইসলাম।
কথা ছিল এই মিলাদ মাহফিলের পর
নজরুল কলকাতায় ফিরে যাবেন। কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণের অনুরোধে পরের দিন অপর একটি
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে রাজি হয়ে কুড়িগ্রামে থেকে যান।
এরপর নজরুল কলকাতায় চলে আসেন। ফেব্রুয়ারি
মাসের শেষার্ধে বা মার্চ মাসের প্রথমার্ধের ভিতরে নজরুল খুব স্বল্ব সময়ের জন্য
সমস্তিপরে
আশালতা,
গিরিবালার সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন। পথে রেল গাড়িতে তিনি
রচনা করেন একটি কবিতা। এটি হলো-
মার্চ ১৯২৪ (১৮ ফাল্গুন- ১৮ চৈত্র ১৩৩০))
এই মাসের পুরো সময় নজরুল কলকাতায় ছিলেন।
২২শে মার্চ (শনিবার, ৯ চৈত্র ১৩৩০) মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত 'বসন্তলীলা' নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকের পরিচালক ছিলেন
শিশিরকুমার ভাদুরী। এই নাটকের
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নজরুল আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি অনুষ্ঠানে তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতা আবৃত্তি করেন।
এপ্রিল ১৯২৪ (১৯ চৈত্র ১৩৩০- ১৭ বৈশাখ ১৩৩১)
৯ এপ্রিল (বুধবার, ২৭ চৈত্র ১৩৩০) কলকাতার আলফ্রেড রঙ্গমঞ্চে
শিশিরকুমার ভাদুরী
এবং তাঁর নাট্যগোষ্ঠীর সদস্যরা নজরুলকে সংবর্ধনা দেন। এই অনুষ্ঠানে নজরুলের
প্রশংসাসূচক বক্তৃতা রেখেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, নির্মলচন্দ্র চন্দ, মৃণালকান্তি
রায়, প্রফুল্লকুমার সরকার, কুমার শিবশেখর রায়, গিরিজাকুমার বসু, দেবকুমার রায়
চৌধুরী, নলিনীরঞ্জন পণ্ডিত, মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, ঋষিকেশ মিত্র প্রমুখ। তৎকালীন
ফরোয়ার্ড পত্রিকার '১১ এপ্রিল ১৯২৪' সংখ্যায় এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
সমাচার পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, এই অনুষ্ঠান থেকে ১৯০০ টাকার সংগৃহীত হয়েছিল। এই
টাকা
শিশিরকুমার ভাদুরী
নজরুলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
১৬ এপ্রিল (বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৩৩১) নজরুলের বন্ধু নলিনাক্ষ সান্যালের বিয়েতে বহরমপুর যান। কোনো পণ ছাড়া
এবং প্রথাগত ধর্মীয় আচার অগ্রাহ্য করে বিবাহ করার জন্য, সে সময়ে এই বিবাহটি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। বিশেষ করে
এই বিয়েতে প্রথাগত হিন্দু রীতি অনুসারে শালগ্রাম শিলাকে বিবাহের আসরে স্থান দেওয়া হয় নি। এই বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে
নজরুল উপস্থিত হলে, কন্যাপক্ষ এর তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে নজরুল কিছুক্ষণের জন্য উমাপদ ভট্টাচার্যের বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে
কলকাতায় ফিরে আসেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, এই বিয়ের আসরে নজরুল তাঁর 'জাতের
নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া' কবিতায় সুরারোপ করে তা
পরিবেশন করেছিলেন। উল্লেখ্য কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের
সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ৪৪ সংখ্যক গান। বহররমপুর জেলে বসে লিখিত এই গানটি
প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বিজলী পত্রিকার ' ৪ শ্রাবণ ১৩৩০ (২০ জুলাই ১৯২৩)সংখ্যায়। এর
শিরোনাম ছিল 'জাত জালিয়াত'। পাদটীকায় লেখা ছিল- 'মাদারীপুর শান্তি-সেনা চারণ দল'-এর
জন্য লিখিত অপ্রকাশিত নাটক থেকে'। নাটকের গান হিসেবেই এটা লেখা
হয়েছিল। তাই বিয়ের আসরেই সুরারোপ করে গানটি গেয়েছিলেন-
তা মনে হয় না। তবে পূর্বে রচিত এই গানটি হয়তো তিনি গেয়েছিলেন।
নজরুলের দ্বিতীয় বিবাহ
গিরিবালা দেবীর কন্যা
আশালতা'র
সাথে নজরুলের প্রণয় নানা ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল, এ বিষয়ে আমরা কালানুক্রমে
অনুসরণ করেছি। এই প্রণয়কে বিবাহে পরিণত করার ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর আগ্রহ তো ছিলই,
সেই সাথে সহমত প্রকাশ করেছিলন
আশালতা'র
মা গিরিবালা দেবী। গিরিবালা দেবী তাঁর কন্যা
আশালতা'কে
নিয়ে এই মাসে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি সমস্তিপুরে ছিলেন। এই বিয়ের কথা একটু জানাজানিও হয়ে
গিয়েছিল। কারণ ছোলতান পত্রিকার '১১ই এপ্রিল ১৯২৪' সংখ্যায় এ বিষয়ে একটি সংবাদ
প্রকাশিত হয়েছিল। জনৈক কমরুজ্জামান এই সংবাদটি যেভাবে লিখেছিলেন, তা হল-
এই সময় এই বিবাহে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মিসেস মাসুদা রহমান। তিনি এই বিবাহের সকল
আর্থিক সমস্যা মিটিয়েছিলেন। এছাড়া এই বিবাহে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সে কারণে তিনি
তাঁর প্রভাব কাটিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, শ্রীরামপুরের সাবরেজিস্ট্রার কাজী
মাহমুদ-উর-রহমানের স্ত্রী, সরকারি উকিল খান বাহাদুর মাজাহারুল আনোয়ারের কন্যা। এছাড়া
লেখিকা হিসেবে তাঁর খ্যাতিও পেয়েছিলেন।
এই বিবাহের প্রধান সমস্যাগুলো ছিলো-
এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল ২৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার, ১১
বৈশাখ ১৩৩১) বিবাহের পর তিনি কয়েকদিন বিজলী পত্রিকার অফিসে ছিলেন। এই সময় কলকাতা
স্ত্রী ও শাশড়িকে নেয় একটি ভদ্রোচিত বাসার সন্ধান করা শুরু করেন। বিবাহের পর
প্রবাসী, ছোলতানের মতো পত্রিকা এই বিবাহের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এর প্রভাব পড়েছিল
নজরুলের বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে যদিও কবি হিসেবে নজরুলের জনপ্রিয়তা হিন্দু-মুসলমান সমাজে ছিল। সে সময় অধিকাংশ বাড়ির
মালিক ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ফলে এই বিবাহের পর হিন্দু বাড়িওয়ালারা তাঁর কাছে
বাসাভাড়া দিতে রাজি হন নি। শেষ পর্যন্ত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নজরুল কলকাতা ছেড়ে
হুগলীতে কংগ্রেসে-কর্মী খগেন ঘোষের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন।
এই মাসে নজরুলের রচিত দুটি নতুন গান প্রকাশিত
হয়েছিল। গান দুটি হলো-
২. অরুণকুমার বসু তাঁর 'নজরুল জীবনী' গ্রন্থে লিখেছেন- '১৯২৪ -এর মাঝামাঝি
মোহনদাস গান্ধজি সময়ে কি কারণে যেন হুগলিতে এসেছিলেন। চাঁদনী ঘাটের সভায় তাঁকে
বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হলো। সে সভায় নজরুলের সদ্যরচিত গান স্বয়ং কবিকণ্ঠে
পরিবেশিত হয়েছিল: আজ না-চাওয়ার পথ দিয়ে কে এলে...।'
[পশ্চিম বাংলা আকাদেমি, জানুয়ারি ২০০০। পৃষ্ঠা ১৩৩]
সম্ভবত এই সূত্র ধরেই-
ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা গ্রন্থে' গানটির উপলক্ষ হিসেবে
লিখেছেন- 'মহাত্মা গান্ধীর হুগলী আগমন'।
'হুগলি/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১' -এর খ্রিষ্টাব্দ দাঁড়ায় মে-জুন ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ।
গান্ধীজির কালানুক্রমিক জীবনী থেকে জানা যায়, এই বছরের মে-জুন মাস পর্যন্ত তিনি
বোম্বে এবং আহমেদাবাদ অঞ্চলে ছিলেন। মূলত গান্ধীজি কলকাতায় এসেছিলেন ১৯২৫
খ্রিষ্টাব্দে মে মাসের ১ তারিখে। এরপর ২ তারিখে তিনি চলে যান ফরিদপুরে। সেখান
থেকে ৫ তারিখে আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চল
পরিদর্শনের জন্য ৮ তারিখে কলকাতা ত্যাগ করে মালিকান্দা যান। দীর্ঘ পরিভ্রমণ
শেষে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন ২৪ তারিখে।
[সূত্র:
Gandhi 1915-1948/A Detailed of Choronlogy/compiled by C.B.Dalal. First
Edition 1971]
মুজফ্ফর আহমেদ এবং অরুণকুমার বসুর উল্লেখ করা
এ গানটির রচনাকাল, ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ গ্রহণ করা যায়
না। এই বিচারে এ গানটির রচনাকাল গ্রহণ করা হলো- জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ (মে
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ )।
'...হুগলীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নজরুলকে বাড়ি ভাড়া দিতে অসম্মত হয়। তখন একজন বিপ্লবী দেশসেবক নজরুল পরিবারকে হামুদুন্নবী নামক এক মোক্তারের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।...'নজরুল তাঁর ২৪ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষের কয়েকদিন সপরিবারে কংগ্রেসে-কর্মী খগেন ঘোষের বাড়িতেই বাস করেছেন। এই সময় তাঁর শাশুড়ি গিরিবালা ছিলেন।