দোলন-চাঁপা
কাজীনজরুল ইসলাম

পুবের চাতক

     সকাল-সাঁঝে চেয়ে থাকি পুব-গগনের পানে
     কেন-যে তা তার আঁখি আর আমার আঁখিই জানে

নদীপারের দেশে থাকি         এমনি তারও আঁখি-পাখি
     দি
গ্‌‌বালিকার পুব-কপোলে চাওয়ার পাখা হানে।
     চাওয়ায় চাওয়ায় চুমোচুমি রোজ মোদের ঐখানো


    মোদের চোখের চুমুর মিলন ভোরের তারার পুবে,
    সেই মিলনের ভরাট পুলক অস্তঘাটে ডুবে।
হারা সে চোখ নতুন করে      ভোরের আলোয় উঠে ভরে
    নিশি-জাগা আঁখির লালী লাগে ঊষার প্রাণে।
    দূরের দেখা দুইটি চাওয়ায় করুণ রেখা টানো

    উদয়ঘাটে হাসে যখন পোড়ারমুখী শশী
    শশীর মুখে চেয়ে ভাবি শশী তো নয় দোষী।
তার চোখের ঐ কাজল-রাগই     রুচির চাঁদে করলে দাগী
    কলঙ্কী চাঁদ কাজল-আঁখির সজল চাওয়ার বানে।
    দোষী শশীর কলঙ্ক তার আঁখির স্মৃতি আনো

    পুবের দেশের চাতক আমি চাই নাকো আন পানে,
    তাই তো সেও তার চাহনি পুব গগনেই হানে।
সে থাকে মোর উদয়-দেশে   তাই সে দেশে ভালোবেসে
    তাকাই না গো পিছন পানের অস্তমরূদ্যানে,
    পাছে তাহার বাজে ব্যথা কোমল অভিমানো

    যেদিন আমি বিদায় নেব শেষের খেয়া বেয়ে
    জানি না তার আঁখি সেদিন থাকবে কোথায় চেয়ে।
তাই তো এমন মিটিয়ে ক্ষুধা        চোখ ভরে পিই চোখের সুধা
    দূরের বেদন ভুলায় মোর ঐ চাউনি-তরঙ গানে।
    এবার এ চোখ হারিয়ে গেলাম পুবের পরিস্থানো


রচনা ও প্রকাশকাল:
কবিতাটি প্রথম দোলন-চাঁপা গ্রন্থে স্থান পেয়েছিল।