দোলন-চাঁপা
কাজীনজরুল ইসলাম
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে। আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার-ভাঙা কল্লোলে! আসল হাসি, আসল কাঁদন, মুক্তি এলো, আসল বাঁধন, মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে। ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে– আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ, সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস, ফুললো সাগর দুলল আকাশ ছুটলো বাতাস, গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে! ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে, চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে, আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন, মদন মারে খুন-মাখা তূণ পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে গো দিগ বালিকার পীতবাসে; আজ রঙন এল রক্ত-প্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে! আজ কপট কোপের তূণ ধরি, ঐ আসল যত সুন্দরী, কারুর পায়ে বুক-ডলা খুন, কেউ বা আগুন, কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে! তাদের প্রাণের 'বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না' বাণীর বীণা মোর পাশে, ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের আমার চোখে জল আসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে! আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর, আসল নিকট, আসল সুদূর আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে! ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল হাসল শিশির দুবঘাসে। আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আজ জাগল সাগর, হাসল মরু কাঁপল ভূধর, কানন তরু বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান ভৈরবীদের গান ভাসে, মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে। মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে। আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!! |
রচনা ও প্রকাশকাল:
কল্লোল পত্রিকার
জ্যৈষ্ঠ ১৩২৭ (১ম বর্ষ ২য় সংখ্যা)
সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল।