২৯ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স
নজরুল ইসলামের ২৯ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স শুরু হয়েছিল ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ (২৫ মে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। শেষ হয়েছিল ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ (২৪শে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ) ।
২৫-৩১ মে ১৯২৮ (১১-১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫)
নজরুলের ২৯ বৎসর অতিক্রান্ত বয়স শুরু হয়েছিল, কৃষ্ণনগরে।
এই বছরের শুরু হয়েছিল তাঁর মাতৃবিয়োগের মধ্য দিয়ে। ১৫ই জ্যৈষ্ঠ (মঙ্গলবার ২৯শে মে)
চুরুলিয়ায় তাঁর মা জাহেদা খাতুনের মৃত্যু হয়েছিল। নজরুল এই সংবাদ পাওয়ার পরও সম্ভবত
অভিমান বশে চুরুলিয়ায় তাঁর মাকে শেষবারের মতো দেখতে যান নি।
জুন ১৯২৮ (১৮ জ্যৈষ্ঠ-১৬ আষাঢ় ১৩৩৫)
জুন মাসের ২০ তারিখে (বুধবার ৬ আষাঢ় ১৩৩৫) কয়েকজন বন্ধুসহ নজরুল ঢাকায় আসেন।
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
তাঁর 'কল্লোল যুগ' গ্রন্থে এবারের উদ্দেশ্যবিহীন ঢাকা আগমনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে
লিখেছেন-
'কোন এক গোরা টিমকে ছ-ছটা গোল দিলে মোহনবাগান। রবি বোস
নামে নতুন এক খেলোয়াড় এসেছে ঢাকা থেকে এ তারই কারুকার্য। সেইবার কি! না, যেবার
মনা দত্ত পর পর তিনটি কর্ণার শর্ট থেকে হেড করে পর পর তিনটে গোল দিলে ডি-সি-এল
আইকে। মোট কথা, ঢাকার লোক যখন এমন একটা অসাধ্য সাধন করল তখন মাঠ থেকে সিধে
ঢাকায় চলে যাওয়ার মানে হয় না। সুতরাং খেলার মাঠ থেকে সোজা শেয়ালদা এসে ঢাকার
ট্রেন ধরল তিনজন। দীনেশরঞ্জন, নজরুল আর নৃপেন। সোজা বুদ্ধদেবের বাড়ি।
মোহনবাগানের জেতার পরে এঁরা যে ঢাকায় এসেছিলেন, এ বিষয়ে জানা
বুদ্ধদেব বসুর 'কালের পুতুল' গ্রন্থেও। তিনি
ওঠেছিলেন
কাজী মোতাহার হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাসায় ওঠেন। এবারের তিনি বেশ কিছুদিন
ঢাকাতে ছিলেন।
২১ জুন (বৃহস্পতিবার ৭ আষাঢ় ১৩৩৫) নজরুল বনগ্রামে (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা) যান রাণু সোমের (প্রতিভা বসু) সাথে
দেখা করতে যান। উল্লেখ্য, এর আগে দিলী্পকুমার রায় ঢাকা এসে রাণুকে বেশ কিছু নজরুলের
গজল আঙ্গিকের গান শিখেয়েছিলেন। কলকাতায় ফিরে নজরুলের কাছে এই সুকণ্ঠী শিল্পীর
প্রশংসা করেন। তাই এবারের ঢাকায় আসার পরের দিনই
পরম আগ্রহ নিয়ে নজরুল রাণু সোমের (প্রতিভা
বসু) সাথে পরিচিত হতে, তাঁদের বাসায় যান।
নজরুলও তাঁর সঙ্গীত-প্রতিভার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হন। মুগ্ধ কবি রাণুকে একটি উৎসরগ্
করেন।
-
শ্রীমতী রাণু সোম কল্যাণীয়াসু।
উৎসরগ-কৃত এই কবিতার নিচে নজরুল নিজের নাম না লিখে লিখেছিলেন 'কবিদা'। রচনার
স্থান ও তারিখ উল্লেখ ছিল- 'বনগ্রাম, ঢাকা ৭ আধাঢ় ১৩৩৫। এই কবিতাটি বুদ্ধদেব বসু
সম্পাদিত 'কবিতা' নামক পত্রিকার কার্তিক-পৌষ ১৩৫১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
নজরুল যতদিন ঢাকায় ছিলেন প্রায় ততদিনই তিনি গান শেখানোর জন্য তিনি বনগ্রামে যেতেন।
এ বিষয়ে চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়,
প্রতিভা বসুর রচিত 'জীবনের জলছবি' গ্রন্থে।
এই গ্রন্থে পাওয়া যায় নজরুলের রচিত একটি নতুন গানের কথা জানা।
- আমার কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী
[তথ্য]।
রচনার স্থান ও তারিখ।
ঢাকা আষাঢ় ১৩৩৫।
প্রতিভা বসুর 'জীবনের জলছবি' গ্রন্থের বর্ণনানুসারে জানা
যায়, নজরুল ঢাকাতে এই গানটি রচনা করেছিলেন কোনো এক রাতে। তার পরের দিন এই গানটি
প্রতিভা বসুকে শিখেয়েছিলেন, তাঁদের বনগ্রামের বাড়িতে। এ বিষয়ে তিনি তাঁর 'জীবনের
জলছবি' গ্রন্থের '৮' অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন-
'...রাত জেগে নতুন গান লিখেছেন তিনি, না শিখিয়ে থাকতে
পারছেন না। 'এসো এসো শিগ্গির এসো, হারমোনিয়াম নিয়ে বসো।' আমরা সবে চা
খাচ্ছি, আমার চেহারায় তখনো ঘুম ঘুম ভাব। বসে গেলেন সঙ্গে। ...রাত্তিরে একটা
গান লিখেছি সুরটা তুলে নাও তাড়াতাড়ি, আবার ভুল হয়ে যাবে।'
সকালটা ঝক্ ঝক্ করতে লাগলো। আবার হারমোনিয়াম আবার পানের বাটা
আবার ঘনঘন চা। গানটা হলো 'আমার কোনকূলে আজ ভিড়লো তরী, এ কোন সোনার গাঁয়/ভাঁটির
টানে আবার কেন উজান যেতে চায়।' দেখা গেল তখনো তার বয়ান সঠিক নায়, সুরেরও
হেরফের হচ্ছে। ঠিক করছেন গাইত গাইতে, শেখাতে শেখাতে।'
উল্লেখ্য, গানটি পরে
চোখের চাতক-এ অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।
এই সময় নজরুলের সাথে পরিচয় ঘটেছিল ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল সুরেন্দ্র মৈত্র এবং
তাঁর কন্যা উমা মৈত্রেয়ের (নোটান)এবং
ফজিলাতুন্নেসার সাথে। এই
বিষয়ে জানা যায়
কাজী মোতাহার হোসেনের রচিত 'আমার বন্ধু নজরুল: তাঁর গান' প্রবন্ধ থেকে।
এই প্রবন্ধে তিনি লেখেছেন-
'...তিনি (ফজিলাতুন্নেসা)
আমার বান্ধবী ছিলেন এবং আমার কাছ থেকে তিনি শুনেছিলেন যে কবি একজন সৌখিন
হস্তরেখাবিদ। আমাকে তিনি কবির কাছে তাঁর হাতের রেখা দেখাবার জন্যে অনুরোধ করেন।
যথারীতি একদিন কবিকে নিয়ে হাসিনা মঞ্জিলের কাছে দেওয়ান বাজার রাস্তার উল্টোদিকে
অবস্থিত ফজিলাতুন্নেসার
গৃহে আমি উপনীত হই। প্রায় আধঘণ্টা ধরে গভীর মনোযোগের সঙ্গে
কবি ফজিলাতুন্নেসার
হাতের মস্তিষ্ক রেখা, জীবনরেখা, হৃদয়রেখা, সংলগ্ন ক্ষুদ্র
রেখাসমূহ এবং সেই সঙ্গে ক্রস, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ সমন্বিত অন্যান্য মাউন্ট,
শুক্র, শনি, রবি, বুধ, মঙ্গল ও চন্দ্রের অবস্থানগুলো নিরীক্ষণ করলেন; কিন্তু
এগুলোর সম্বন্ধ-সূত্রের ফলাফল নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলেন। তিনি একজন একজন
জ্যোতিষীর মত সূর্য, চন্দ্রের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত তারকার অবস্থান টুকে নিলেন এবং
রাত্রিতে তিনি বিশদভাবে এটা নিয়ে পরীক্ষা করবেন বলে জানালেন।...'
কাজী মোতাহার হোসেনের
লেখা এই রচনা থেকে জানা যায়, রাত্রিবেলায় নজরুল
ফজিলাতুন্নেসার
বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যিত হন। এই প্রেমের সূত্রে
তিনি রচনা করেছিলেন-
বর্ষা বিদায়,
তোমারে
পড়ুছে মনে।
- সুরেন্দ্র মৈত্র: ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল। এঁর কন্যা
উমা মৈত্রেয় (নোটান) ছিলেন সেতার শিল্পী। নোটনের সাথে গানের জলসা বসানোর সূত্রে
সুরেন্দ্র মৈত্রেয়ের সাথে নজরুলের ঘনিষ্টতা জন্মে। পরে নজরুল তাঁর রচিত
চক্রবাক
গ্রন্থটি সুরেন্দ্র মৈত্রেয়কে উৎসর্গ করেছিলেন। [ উৎসর্গ]
- উমা মৈত্রেয় (নোটান): ঢাকা কলেজের
প্রিন্সিপাল সুরেন্দ্র মৈত্রেয়ের কন্যা উমা মৈত্রেয়
(নোটান)। নোটন ছিলেন সেতার শিল্পী। কাজী মোতাহার
হোসেনের রচিত 'স্মৃতিপটে নজরুল' প্রবন্ধে প্রসঙ্গক্রমে
লিখেছেন-
'...কণ্ঠসঙ্গীতে নোটনের তেমন অনুরাগ ছিল না। সে ছিল
চিত্রশিল্পী ও সেতারী; বিখ্যাত সেতারশিল্পী হায়দার আলীর কাছে তার সেতার
শিক্ষা বিকশিত হয়। তাই দিলীপ রায়ের বা নজরুলের গানের সঙ্গে নোটন সেতারের
সঙ্গত করতেন। এর বাপ-মা দুজনেই কিছুটা বিলিতী ধরনের ব্রাহ্ম ছিলেন।
সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত, চিত্র প্রভৃতির অনুরাগিণীরা এঁদের বন্ধু-শ্রেণীর
অন্তর্গত ছিলেন। তাছাড়া টেনিস ও দাবা খেলাতেও নোটনের অনুরাগ ছিল। নজরুল এই
পরিবারের একজন বিশিষ্ট বন্ধু ছিলেন।... নজরুল ইসলামের 'নিশি ভোর হলো জাগিয়া',
'আজি এ কুসুম হার সহি কেমনে', 'বসিয়া বিজনে কেন একা মনে' প্রভৃতি গানের
সঙ্গে নোটনের সেতার সঙ্গত করেছেন। সে-সময়ে সস্ত্রীক মৈত্র মশায়,
সত্যেন বাবু এবং আমিও বহুদিন এঁদের সঙ্গে সঙ্গীতালাপ উপভোগ করেছি।'
এই মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো নজরুল ঢাকাতেই কাটান। এই মাসে প্রকাশিত নতুন কবিতা ও
গানগুলো ছিল- 'নিশি ভোর হলো
- গান:
- আজি এ কুসুম-হার
[তথ্য]
কল্লোল পত্রিকার 'আষাঢ়
১৩৩৫' সংখ্যায় গানটি প্রথম
প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছিল।
- কবিতা:
-
সন্ধ্যা
। ছাত্র। পত্রিকার 'আষাঢ়
১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
সন্ধ্যা
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
-
নতুন পথিক।
রাজভোগ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৩৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
জুলাই ১৯২৮ (১৭ আষাঢ়- ১৫ শ্রাবণ ১৩৩৫)
ঢাকাতে নজরুলের প্রধান কাজই ছিল রাণুর গান শেখানো। এই সূত্রে
নজরুল এক রাত্রিতে রাণুদের প্রতিবেশী এক পরিবারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এই দুই
পরিবারের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল বেশ আগে, দিলীপকুমার রায়ের গান শেখানো নিয়ে। প্রতিভা বসু তাঁর 'জীবনের জলছবি' গ্রন্থের এই বিবাদের বিষয়ে
লিখেছেন-
'যখন দিলীপদা এসেছিলেন তখন ওঁরা একদিন দিলীপদাকে নিজেদের
মেয়েদের গান শোনাবার জন্য নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, দিলীপদা সেই
নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারপর থেকে ও বাড়ির সর্বময়ী কর্ত্রী বয়স্ক
সুন্দরী আত্মীয়টি আর আমাদের সাথে কথা বলতেন না। কর্তা ও কন্যাদেরও বলতে
দিতেন না।...'
এই ঘটনার পর নজরুল যখন রাণুদের বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করলেন
এবং সেই সাথে রাণুকে গান শেখানো শুরু করলেন, তখন এদের সকল রাগ এসে পড়েছিল নজরুলের
উপর। তাই ২৫শে জুলাই (বুধবার
৯ শ্রাবণ ১৩৩৫) রাত দশটার দিকে, রাণুদের বাসায় গান আর
আবৃত্তির আসর শেষে নজরুল যখন বের হন, তখন প্রতিবেশীদের লেলিয়ে দেওয়া দশ-বারো জন
যুবক লাটি নিয়ে নজরুলকে আক্রমণ করে। নজরুল এদের একাই প্রতিহত করে আহত হন।
এই অবস্থায় রাণুর পিতা এগিয়ে গিয়ে আহত নজরুলকে নিজের বাসায় এনে সেবাশুশ্রূষা করে
সুস্থ করে তোলেন।
প্রতিভাবসু জলছবি গ্রন্থে এই ঘটনার সময় প্রসঙ্গে লিখেছেন- ' সেবার ঢাকা গিয়ে
নজরুল ইসলাম যেদিন ঢাকা ছেড়ে ফিরে গেলেন, তার দুদিন আগে সন্ধ্যাবেলায় আমাদের বাড়িতে
তাঁর গান আর আবৃত্তির একটি আসর বসেছিল। এই বিচারে বলা যায়, এই ঘটনার দুই দিন পর
অর্থাৎ ২৭ শে জুলাই (শুক্রবার ১১ শ্রাবণ) নজরুল ঢাকা থেকে কৃষ্ণনগরে ফিরে এসেছিলেন। পরে
কলকাতায় সওগাত অফিস এসে ওঠেন।
এই মাসে প্রকাশিত নতুন রচনা
- কবিতা
-
তরুণের গান।
মোয়াজ্জিন পত্রিকার 'শ্রাবণ ১৩৩৫ সংখ্যায় প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পূর্বে রচিত এই মাসে প্রকাশিত রচনা
- গান
- কেন কাঁদে পরান কি বেদনায় কারে কহি
[তথ্য]
গানটি নওরোজ পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
ভারতবর্ষ পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৩৫ সংখ্যায় গানটি স্বরলিপিসহ প্রকাশিত হয়েছিল। স্বরলিপিকার
ছিলেন দিলীপকুমার রায়। পাদটীকায় স্বরলিপিকার সুরের রাগভিত্তিক বিশ্লেষণ করেছেন। পৃষ্ঠা: ৩০১-৩০৩।
[নমুনা]
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ
মাসের দিকে নজরুলের সাথে এইচএমভির একটি চুক্তি হয়েছিল। এই
চুক্তির মাধ্যমে তিনি এইচএমভির সঙ্গীত রচয়িতা এবং প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।
চুক্তির অন্যতম বিষয় ছিল, ওই সময় নজরুলের গানে অন্য কেউ সুর করতে পারবেন না। এর ফলে বেতারে নজরুলের গান প্রচারের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
এই চুক্তি অনুসারে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলের ৬টি গান এবং তাঁর স্বকণ্ঠে 'নারী'
কবিতার আবৃত্তি প্রকাশিত হয়েছিল। এই রেকর্ডকৃত গানগুলোর ভিতরে প্রথম কিস্তিতে
প্রকাশিত হয়েছিল দুটি রেকর্ড।
- তৃতীয় রেকর্ড: এইচএমভি [জুলাই ১৯২৮ (আষাঢ় ১৩৩৫)। পি ৯৯৭৪। শিল্পী:
আঙ্গুরবালা। সুর: নজরুল ইসলাম]
- ভুলি কেমনে আজো যে মনে [তথ্য]
- এত জল ও-কাজল চোখ [তথ্য]
- চতুর্থ রেকর্ড:
এইচএমভি [সেপ্টেম্বর ১৯২৮ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৪)। পি ১১৫১৮। শিল্পী:
কাসেম মল্লিক।
সুর নজরুল]
- বাগিচায় বুলবুলি তুই [তথ্য]
- আমারে চোখ ইশারায় [তথ্য]
আগষ্ট ১৯২৮ (১৬ শ্রাবণ- ১৫ ভাদ্র ১৩৩৫)
এই মাসে
সওগাত পত্রিকার কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া ছোটো-খাটো অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। এর
ভিতরে উল্লেখযোগ্য ছিল ২৯শে আগষ্ট (বুধবার ১৩ই ভাদ্র),
ফাতেহা-দোয়াজ-দহম উপলক্ষে নজরুল ইসলামিয়া কলেজ হোস্টেলে এবং ক্যাম্বেল স্কুল
হোস্টেলে গিয়েছিলেন। মিলাদের শেষে তিনি গান পরিবেশন করেছিলেন।
গান পরিবেশনের কারণে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ সেকালে বাঙালি
মুসলমান জনগোষ্ঠীর ভিতরে 'গান গাওয়া পাপ'- এই ধারণা দৃঢ়ভাবে ছিল। এই
দুই হোস্টেলে মিলাদ ও গান গাওয়ার বিষয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছিল সওগাত পত্রিকার '১৫ই
ভাদ্র ১৩৩৫, ৩১ আগষ্ট ১৯২৮' সংখ্যায়।
এই মাসে প্রকাশিত নজরুলের নতুন রচনা
- গান
- গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে [তথ্য]
- সওগাত পত্রিকার 'ভাদ্র, ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ'
সংখ্যা। শিরোনাম - গহীন রাত।
- ধূপছায়া পত্রিকার
'ভাদ্র, ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ'
সংখ্যা।
- কবিতা:
-
বর্ষা বিদায়।
সওগাত পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩৩৫'
সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
-
তোমারে
পড়ুছে মনে। ধূপচ্ছায়া পত্রিকার 'ভাদ্র ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এই মাসে রেকর্ডে প্রকাশিত গান
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের চুক্তি অনুসারে নজরুলের
১টি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। কালানুক্রমের বিচারে এটি ছিল পঞ্চম রেকর্ড। রেকর্ড নম্বর- পি ১১৫০৯। শিল্পী ছিলেন উমাপদ।
গান দুটি হলো-
পঞ্চম রেকর্ড
-
এইচএমভি। রেকর্ড নম্বর- পি ১১৫০৯।
শিল্পী ছিলেন উমাপদ।
- কেন দিলে এ কাঁটা যদি গো কুসুম দিলে [গান-৯২৮]
[তথ্য]
- সখি ব'লো বধুঁয়ারে নিরজনে (ব'লো বঁধুয়া রে)
[তথ্য]
সেপ্টেম্বর ১৯২৮ (১৬ ভাদ্র-১৪ আশ্বিন ১৩৩৫)
সেপ্টেম্বর মাসে নজরুল
বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এ সকল অনুষ্ঠানে তিনি অন্যের রচিত ও স্বরচিত
গান পরিবেশন করেছেন। এর ভিতরে একটি গান 'জাগিলে
পারুল কি গো'
গানটি ছিল নতুন। এই মাসের অনুষ্ঠানগুলো ছিল-
- ১৬ই সেপ্টেম্বর (রবিবার ৩১ ভাদ্র ১৩৩৫)
প্রমথ চৌধুরীর সভাপতিত্বে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে নিরূপমা দেবীর রচিত 'তুমি যে মধুকর কমল বনে'
গানটি পরিবশেন করেছিলেন- নজরুল ইসলাম, দিলীপকুমার রায়, নলিনীকান্ত সরকার ও
সাহানা দেবী। এছাড়া সাহানা দেবীর কণ্ঠে একটি
নজরুলের গান পরিবেশিত হয়েছিল।
- গান: কোন্ শরতে পূর্ণিমা চাঁদ আসিলে
[তথ্য]
- ২৪ সেপ্টেম্বর (সোমাবার ৮ আশ্বিন ১৩৩৫) পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'নিখিল বঙ্গ ছাত্র সম্মেলন'-এর তৃতীয় ও শেষ দিনে- নজরুল
তাঁর পূর্বে রচিত 'ওঠ্ রে চাষী জগদ্বাসী, ধর্ কষে লাঙল [গান-২৩০৪]
[
তথ্য] ' গানটি উদ্বোধনী সঙ্গীত
হিসেবে পরিবেশন করেন। সংবাদটি পরিবেশিত হয়েছিল সওগাত পত্রিকার '১২ আশ্বিন
১৩৩৫, ২৮ সেপ্টেম্বর' সংখ্যায়।
- সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে (আশ্বিন ১৩৩৫) উচ্চ শিক্ষার্থে
ফজিলাতুন্নেসার
ইংল্যান্ডে যান। তাঁর বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সওগাত
পত্রিকার অফিসে। নজরুল
ফজিলাতুন্নেসার বিদায় উপলক্ষে এই গানটি রচনা করেন এবং এই
অনুষ্ঠানে এই গানটি নিজেই পরিবেশন করেন।
গানটি হলো-
-
জাগিলে পারুল কি গো
[তথ্য]
এই মাসে প্রকাশিত নতুন কবিতা
ও গান
- কল্লোল। আশ্বিন
১৩৩৫ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯২৮) সংখ্যা।
- গান: কোন্ শরতে পূর্ণিমা চাঁদ আসিলে
[তথ্য]
- সওগাত পত্রিকার 'আশ্বিন ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
এই মাসে প্রকাশিত রেকর্ড
- ষষ্ঠ রেকর্ড:
এইচএমভি [সেপ্টেম্বর
১৯২৮ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৪)। পি ১১৫১৮। শিল্পী: কে. মল্লিক। সুর নজরুল]
-
বাগিচায় বুলবুলি তুই
[তথ্য]
- আমারে চোখ ইশারায়
[তথ্য]
অক্টোবর ১৯২৮ (১৫ আশ্বিন-১৪ কার্তিক ১৩৩৫)
১ অক্টোবর (সোমবার ১৫ আশ্বিন ১৩৩৫), নজরুল দিলীপকুমার রায়কে
তাঁর বুলবুল নামক সঙ্গীত সংকলনটি উৎসর্গ করেন। এর সাথে এর রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ
আছে 'কলিকাতা/১৫ আশ্বিন ১৩৩৫। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৩৫
বঙ্গাব্দের কার্তিক (নভেম্বর ১৯২৮) মাসে।
[দ্রষ্টব্য:
উৎসর্গ]
২ অক্টোবর (মঙ্গলবার ১৬
আশ্বিন ১৩৩৫), নজরুলের কবিতা ও গানের সংকলন 'সঞ্চিতা'র প্রথম
সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
- সঞ্চিতা। প্রথম সংকলন নজরুলের কবিতা ও গানের সংকলন।
- প্রকাশকাল ২রা
অক্টোবর। প্রকাশক: ব্রজবিহারী
বর্মণ রায়, বর্মণ পাবলিশিং হাউস, ১৯৩ কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট, কলকাতা। মুদ্রক
শশিভূষণ পাল, মেটকাফ প্রেস, ১৫ নয়ানচাঁদ দত্ত স্ট্রিট, কলকাতা। পৃষ্ঠা ২+১৩০।
মূল্য দেড় টাকা। এতে ছিল অগ্নিবীণা, ঝিঙেফুল, সর্বহারা, ফণি-মনসা, ছায়ানট, দোলন
চাঁপা, সিন্ধু-হিন্দোল ও চিত্তনামা থেকে গৃহীত কবিতাসমূহ।
৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার ২৩ আশ্বিন ১৩৩৫), কলকাতার ওয়েসলি স্কোয়ার
মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে সমগ্র বঙ্গদেশের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এই
অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন খান বাহাদুর আসাদুজ্জামান। এই সভায় অভ্যর্থনা ও
সম্বর্ধনা কমিটির সার্বিক পরিচলানার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ গঠন করা হয়। এই
পরিষদে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন
- সভাপতি: এস ওয়াজেদ আলী,
- সহ-সভাপতি: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জলধর সেন, একে
ফজলুল হক, খান বাহাদুর আসাদুজ্জামান, দিলীপকুমার রায়, আর আহমদ, সৈয়দ ইসমাইল
হোসেন সিরাজী।
- সম্পাদক: কল্লোল সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ ও সওগাত
সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
- সহ-সম্পাদক: সৈয়দ জালালুদ্দিন হাশেমী, প্রেমেন্দ্র
মিত্র, আবুল মনসুর আহমদ, মোয়ায়েদ বখত চৌধুরী, আয়নুল হক খাঁ।
- কোষাধ্যক্ষ: এস ওয়াজেদ আলী
- সদস্য: নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, আফজাল-উল হক, আবু
লোহানী, শাহাদাৎ হোসেন খান, নলিনীকান্ত সরকার, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়,
ঘবীবুল্লাহ বাহার, ফজলুর রহমান. উমাপদ ভট্টাচার্য, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, আবুল
কালাম শামসুদ্দীন প্রমুখ।
১৩ই অক্টোবর
(শনিবার ২৭ আশ্বিন ১৩৩৫), কলকাতার আলবর্ট হলে,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল 'নিখিল বঙ্গ মুসলিম যুবক সম্মেলন'।
নজরুল এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলন
উপলক্ষে তাঁর সদ্য রচিত একটি গান পরিবেশন করেছিলেন তিনি। গানটি হলো-
- বাজলো কি রে ভোরের
সানাই
[তথ্য]
মোয়াজ্জিন পত্রিকার 'কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল নিখিল বঙ্গ মুসলিম। যুবক সম্মিলনের উদ্বোধন সঙ্গীত।
উল্লেখ্য ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের
১৩ই অক্টোবর (আশ্বিন) কলকাতার আলবার্ট হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল 'নিখিল বঙ্গ মুসলিম
যুবক সম্মেলন'।
১৪ অক্টোবর (শনিবার
২৮ আশ্বিন ১৩৩৫), নজরুলের কবিতা ও
গানের সংকলন 'সঞ্চিতা'র অপর একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটি উৎসর্গ করেছিলেন
রবীন্দ্রনাথকে।
- সঞ্চিতা। দ্বিতীয় সংকলন: ব্রজবিহারী
বর্মণ রায়, বর্মণ পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত 'সঞ্চিতা' মান সম্মত না হওয়ায়,
পুনরায় প্রকাশিত হলো ডিএম, লাইব্রেরি থেকে। পরবর্তী সময়ে ডিএম, লাইব্রেরি থেকে
প্রকাশিত 'সঞ্চিতা'-ই আদর্শ হয়ে উঠেছিল।
প্রকাশক: ১৪
অক্টোবর। প্রকাশক: গোপালদাস
মজুমদার, ডিএম, লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট, কলকাতা। মুদ্রক:
সজনীকান্ত দাস. প্রবাসী প্রেস, ৯১ আপার সারকুলার রোড, কলকাতা। পৃষ্ঠা
৪+২২৪। মূল্য আড়াই টাকা। এতে ছিল অগ্নিবীণা, দোলন চাঁপা, ছায়ানট,
সর্বহারা, ফণি-মনসা,সিন্ধু-হিন্দোল, চিত্তনামা, ঝিঙেফুল, বুলবুল ও জিঞ্জীর থেকে
গৃহীত কবিতা ও গানসমূহ। উল্লেখ্য, সঞ্চিতা প্রকাশের সময় 'জিঞ্জীর' কাব্যগ্রন্থটি
যন্ত্রস্থ ছিল। এই গ্রন্থটি ডিএম, লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল,
এই বছরের নভেম্বর মাসে। সঞ্চিতা প্রকাশের সময়, যন্ত্রস্থ জিঞ্জীরা থেকে
নির্বাচিত কবিতা ও গান গ্রহণ করা হয়েছিল।
১৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার, ১ কার্তিক ১৩৩৫) অনুষ্ঠিত হয়েছিল
সুরমা উপত্যাকায় মুসলমান ছাত্র সম্মেলনের অধিবেশন। এই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য
কলকাতা থেকে একে ফজলুল হক, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও নজরুল রেলপথে সিলেটে আসেন।
সিলেটে স্টেশনে এই তিনজনকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। নজরুল সিলেটে উঠেছিলেন
যুগবাণী পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ মকবুল হোসেনের বাসায়। এই সম্মেলন তিনব্যাপী
সিলেটের রাজা স্কুলের (গিরিশচন্দ্র বিদ্যালয়) মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের
প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল বেলা ১টায়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়েছিল, তাঁর
স্বকণ্ঠে গীত 'চল চল্ চল ঊর্ধে গগন বাজে মাদল' গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে
তিনি আরও দুটি গান পরিবেশন করেন। এ দুটো গান হলো- 'বাজলো কিরে ভোরের সানাই' এবং 'আমরা
শক্তি আমরা বল'। সন্ধ্যাবেলার অধিবেশন শেষে নজরুলের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়। এই
অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেছিলেন- 'বসিয়া বিজনে কেন একা মনে', 'কে বিদেশী মন উদাসী',
বাগিচায় বুলবুলি তই', 'আয় বেহেশতে কে যাবি আয়, যৌবন জলতরঙ্গ' ও 'দুর্গম গিরি
কান্তার মরু'।
|
ছাত্র সম্মেলনের অধিবেশনে
তোলা আলোকচিত্র। ছবিতে কবির সাথে আছেন বাদিক থেকে বসা মুহাম্মদ ওবায়দুল হক কোরেশী, রমেশ চন্দ্র দাস, মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কোরেশী, সামনে তার শিশুপুত্র আহমদ হোসেন কোরেশী, কবি কাজী নজরুল,সাংবাদিক মকবুল হোসেন চৌধুরী পাশে তার শিশুপুত্র ফারুক হোসেন চৌধুরী।
পেছনের সারিতে দাড়ানো মুহম্মদ ফজলুল হক কোরেশী, কবি আবদুর রাজ্জাক,পাখা হাতে কাজের ছেলে,কবি আবদুল গফফার দত্ত চৌধুরী ও কবি আবদুল বাকি চৌধুরী। |
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নজরুল বক্তৃতা দেন এবং কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। সে সময়ে
পর্দানশীন মুসলমান রমণীরা এই ধরণের জন-জলাসায় গান শুনতে আসতেন না। মহিলা
দর্শক-শ্রোতাদের সবই ছিল হিন্সু-পরিবারের। নজরুলের গান ও বক্তৃতা শোনার জন্য
স্থানীয় বেশকিছু মুসলমান মহিলা শ্রোতার আসরে যোগ দেন। এঁদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য
ছিলেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী সিরাজুন্নেসা চৌধুরী এবং অধ্যাপক আব্দুল মুমিনের স্ত্রী
বেগম মুনিম। পরের দিন সিলেটের খানাদনি রীতি ভঙ্গের প্রতিবাদে, কৌড়িপুরের মাওলানা
সাহেবের সভপতিত্বে এক সভা আহ্বান করা হব। কিন্তু দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ও অন্যান্য
স্থানীয় যুবকদের বাধার মুখে এই প্রতিবাদ সভা সম্পন্ন হতে পারে নি।
এই সম্মেলন শেষ হয়েছিল ২০ অক্টোবরে (শনিবার, ৩ কার্তিক ১৩৩৫)। এরপর নজরুল সিলেটে
কয়েকদিন কাটান। সেখানে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে গান ও আবৃত্তি শোনান। এই
সময় তাঁর একান্ত সহচর হিসেবে ছিলেন- ফণীন্দ্রচন্দ্র দাস। এখানে তাঁর সাথে বিশেষ
সখ্য গড়ে উঠেছিল সিলেটের কবি আব্দুর রাজ্জাক এবং সনেট-রচয়িতা আব্দুল গাফফারের সাথে।
উভয়কে কাব্য রচনায় বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন।
সিলেটের সুরেন্দ্র সিংহ মজুমদারের ভ্রাতুষ্পুত্রী লীলবতী সিংহ মজুমদারের কণ্ঠে গান
শুনে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি ২৪ অক্টোবর (বুধবার ৭ কার্তিক ১৩৩৫) লীলাবতীর উদ্দৈশ্যে
একটি ক্ষুদ্র কবিতা রচনা করে উপহার দেন। কবিতাটি হলো-
-
সুররাখী।
কবিতাটির সাথে রচনার স্থান ও তারিখ পাওয়া যায়- শ্রীহট্ট, ৭ কার্তিক ১৩৩৫।
শ্রীহটে তিনি বিভিন্ন অভিজাত পরিবারে নিমন্ত্রণ রক্ষা করেন।
উল্লেখযোগ্য নিমন্ত্রণকারী পরিবারের কর্তা ছিলেন- এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ খান
বাহাদুর আব্দুল্লাহ আবু সাইদ, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল মজিদ, খান বাহাদুর
মুহাম্মদ বখত মজুমদার, ইলু মিয়া পালোয়ান প্রমুখ। এই সময় আলী আশরাফের বাড়িতে নজরুলকে
বিশেষভাবে সংবরধনা দেওয়া হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে ড, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ উপস্থিত
ছিলেন।
এই মাসে প্রকাশিত গ্রন্থাদি।
বুলবুল
: বুলবুল' প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের
কার্তিক (নভেম্বর ১৯২৮) মাসে।
গ্রন্থটিতে মোট ৪২টি গান সংকলিত হয়েছিল। প্রকাশক গোপালদাস মজুমদার, ডি,এম
লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা ৪+৭০। মূল্য এক টাকা।
রাজসংস্করণ পাঁচ সিকা। গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল মোট ৪২টি গান। এর ভিতরে
৩৬টি গান পূর্বেই পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল। বাকি ৬টি ছিল নতুন গান।
বুলবুল প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত নতুন ৬টি গান
- কেন উচাটন মন পরান এমন করে [গান-১২২৮] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ১২৮ সংখ্যক গান।
- পরান-প্রিয়! কেন এলে অবেলায় [গান-৪৫০] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ১২৯ সংখ্যক গান।
- সখি জাগো রজনী পোহায় (ওগো) [গান-৯২৫] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের
১৩০ সংখ্যক গান।
- কি হবে জানিয়া বল [গান-১৮৪৩] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ১৩১ সংখ্যক গান।
- রুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্ কে এলে নূপুর পায়[গান-৬৪৭] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ১৩২ সংখ্যক গান।
- কে শিব সুন্দর [গান-১৮৬৫] [তথ্য]
কালানুক্রমিকের বিচারে এটি নজরুলের সঙ্গীতজীবনের দ্বিতীয় পর্বের ১৩৩ সংখ্যক গান।
এই মাসে
পত্রিকায়
প্রকাশিত অন্যান্য নতুন রচনা
- আমি গাই তারই গান। ছাত্র
পত্রিকার 'আশ্বিন-কর্তিক ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
-
যৌবন জলতরঙ্গ
। সওগাত পত্রিকার 'কার্তিক ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
-
বাজলো কিরে ভোরের সানাই
[তথ্য]
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
রেকর্ডে প্রকাশিত গান
-
এইচএমভি। অক্টোবর
১৯২৮। পি- ১১৬৩৮। শিল্পী: কে মল্লিক। সুরকার: নজরুল ইসলাম
-
পরদেশী বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
[তথ্য]
নভেম্বর ১৯২৮ (১৫ কার্তিক- ১৫ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫)
নভেম্বর মাসের প্রথম থেকেই নজরুল কলকাতাতেই ছিলেন।
২৬ নভেম্বর (সোমবার ১১ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫) রংপুর জেলার হরগাছা তরুণ সংঘের বার্ষিক
অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগদান করার জন্য রংপুর আসেন। এই সময় রংপুর
রেলস্টেশনে তাঁকে বিপুলভাবে সংব্র্ধনা দেওয়া হয়। রংপুর থেকে হরগাছা পৌঁছালে সেখানে
সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর হরগাছা তরুণ সংঘের সম্মেলনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে
সংবর্ধিত করা হয়। নজরুলকে অভিনন্দন জানান সংঘের সভাপতি মোবারক আলী। এই অনুষ্ঠানে
নজরুল কবিতা আবৃত্তি করেন কয়েকটি গজল পরিবেশন করেন। এরপর নজরুল দুই দিন হরগাছায়
আনন্দমুখর পরিবেশে সময় কাটান। এই সময় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হন।
২৮ শে নভেম্বর (বৃহস্পতিবার ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫), হরগাছায় ভোরের পাখী কবিতাটি রচনা
করেন।
-
ভোরের পাখি।
হরগাছা। ২৮শে নভেম্বর (বুধবার ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫)। সওগাত পত্রিকার 'পৌষ ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই মাসে প্রকাশিত গ্রন্থ
-
জিঞ্জীর: ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে। প্রকাশক:
শ্রীগোপালদাস মজুমদার, ডি,এম, লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিওশ স্ট্রিট, কলকাতা। মুদ্রক:
অমূল্যচন্দ্র ভট্টাচার্য, ভট্টাচার্য প্রিন্টিং ওয়ার্কস, ২নং নিবেদিতা লেন, কলকাতা।
পৃষ্ঠা ২+৮০। মূল্য দেড় টাকা।
কালানুক্রমিক সূচি
-
অগ্রহায়ণ সওগাত
[কলিকাতা ১০ কার্তিক ১৩৩৩]
-
খালেদ
[কৃষ্ণনগর,২১ অগ্রহায়ণ, ’৩৩]
-
নকীব
[হুগলি, ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৩২]
-
সুবেহ-উম্মেদ
[হুগলি অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ ]
-
বার্ষিক সওগাত
[কৃষ্ণনগর, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৩৩৩]
-
মিসেস এম. রহমান
[কৃষ্ণনগর, ১৫ পৌষ, ১৩৩৩]
-
আয় বেহেশতে কে যাবি আয়
[কলিকাতা ১ পৌষ, ১৩৩৩, ১৬ ডিসেম্বর]
-
খোশ্ আমদেদ
[পদ্মা ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ (১৫ ফাল্গুন ১৩৩৩) ]
-
ঈদ মোবারক
[কলিকাতা ১৯ চৈত্র, ১৩৩৩]
-
নওরোজ [কৃষ্ণনগর,
১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪]
-
ভীরু [ কৃষ্ণনগর
৩২ শ্রাবণ, ১৩৩৪]
-
চিরঞ্জীব জগলুল
[কৃষ্ণনগর
১৬ ভাদ্র ১৩৩৪]
-
অগ্রপথিক
[সওগাত
'অগ্রহায়ণ ১৩৩৪' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল]
-
আমানুল্লাহ [সওগাত
পত্রিকার মাঘ ১৩৩৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল]
-
ওমর ফারুক
[কলিকাতা ১৬ই পৌষ ১৩৩৪]
-
এ মোর অহংকার [চৈত্র
২৬ চৈত্র ১৩৩৪]
ডিসেম্বর ১৯২৮ (১৬ অগ্রহায়ণ-১৬ পৌষ ১৩৩৫)
৪ ডিসেম্বর ১৯২৮ (মঙ্গলবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫), কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নজরুল মুর্শিদাবাদের নিমতিতায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটি গান রচনা করেন।
গানটি হলো-
-
কেন আন ফুলডোর আজি বিদায় বেলা [গান-৭০৮]
[তথ্য]
রাজশাহী ভ্রমণ
- ১৬ই ডিসেম্বর (রবিবার ১ পৌষ ১৩৩৫) নজরুল রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা দিবস উপলক্ষে নজরুল আমন্ত্রিত হয়ে রাজশাহী আসেন।
তিনি দার্জিলিং মেল ধরে কলকাতা থেকে নাটোর রেলস্টেশনে নামেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে মোটর শোভাযাত্রা করে কবিকে রাজশাহী ভবনে আনা হয়।
এই সফরে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন কবি শাহাদৎ হোসেন এবং কবি বন্দে আলী মিয়া। বিকেল ৫টায় ক্লাবের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাব-সভাপতি জেলা জজ নূরন্ননবী চৌধুরী। এই অনুষ্ঠানে নজরুলকে অভিন্ন্দন জানানো হয়। এরপর তিনি বক্তৃতা দেন এবং
কয়েকটি গান পরিবেশন করেন।
- ১৭ ডিসেম্বর (সোমবার ২ পৌষ ১৩৩৫), সকালে নজরুল রাজশাহী মুসলমান ছাত্র সমাজের উদ্যোগে রাজশাহী কলেজের
নিকটবর্তী ফুলার হোস্টেলে নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এই সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ টি টি উইলিয়ামস। এই সভায়
নজরুলকে একটি মানপত্র দেওয়া হয়। এরপর তিনি বক্তৃতা দেন এবং
কয়েকটি গান পরিবেশন করেন।
বিকেলে কাদিরগঞ্জ বেলতলা হাউসে গানের আসরে যোগদান করেন। এই আসরে তিনি কয়েকটি ইসলামী
গান পরিবেশন করেন। সন্ধ্যার পরে রাজশাহী মুসলিম ক্লাবের সেক্রেটারি আলী আকবরের
বাড়িতে একটি গানের জলসার আয়োজন করা হয়। উক্ত জলসায় নজরুল শত শত দর্শকের সামনে প্রায়
দুই ঘণ্টা ধরে তিনি গজল পরিবেশন করেন। এরপরে রাজা প্রমথনাথ টাউন হলের ভিক্টোরিয়া
রঙ্গমঞ্চে নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
- ১৮ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার ৩ পৌষ ১৩৩৫), রাজশাহীতে কবি
রজনীকান্ত সেনের বাড়ি 'রাণী কল্যাণী-তে যান। এখানে নজরুল সাহিত্য ও সঙ্গীত
বিষয়ক আলোচনা করেন এবং কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। এখানে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে
ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রয়ের সাথে। বিকেলে রাজশাহী টাউন হলে- কংগ্রেস সভাপতি
মহেন্দ্রকুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক বিরাট সভায় নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সভায় নজরুল বক্তৃতা দেন এবং গান পরিবেশন করেন।
১৯ ডিসেম্বর (বুধবার ৪ পৌষ ১৩৩৫) নজরুল কলকাতার উদ্দেশ্যে সড়কপথে রওনা হয়ে নাটোর আসেন। সেখান রেলযোগে ২০ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ৫ পৌষ ১৩৩৫) কলকাতায় পৌঁছান।
২১-২২ ডিসেম্বর (শুক্র-শনি ৬-৭ পৌষ ১৩৩৫) ভারতের প্রায় সব কয়টি প্রদেশের কৃষক-শ্রমিক সংগঠন সম্মিলিত হয়ে কলকাতায়
দুই দিন ব্যাপী
একটি সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে নজরুল উপস্থিত হয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
- ২১শে ডিসেম্বর (শুক্রবার, ৬ পৌষ ১৩৩৫) কলকাতার আলবার্ট হলে, সকল দলের প্রতিনিধিরা মিলিতি হন এবং সর্বসম্মতিতে সর্বভারতীয়
শ্রমিক-কৃষক দল
(All India Workers and Peasants Party)
গঠন করে। প্রথম দিনে
নজরুল উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
- ২২শে ডিসেম্বর
(শনিবার, ৭ পৌষ ১৩৩৫)
এই সম্মলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে, দলটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
প্রথম দিনে নজরুল কয়েকটি সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার ১০ পৌষ ১৩৩৫) এই দিন কুষ্টিয়ায়। এটি ছিল নজরুলের
কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় সফর। এবারে তিনি এসেছিলেন বঙ্গীয় কৃষক-শ্রমিক দলের
আঞ্চলিক সম্মেলন। এই সম্মেলনটি মুজফ্ফর আহমেদ-এর সভাপতিত্বে
যতীন্দ্রমোহন হলের পরিমল রঙ্গমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল যোগদান করেন এবং
পূর্ব রচিত 'কৃষাণের গান' এবং 'অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত' পরিবেশন করেন।
২৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার ১৩ পৌষ ১৩৩৫) এই দিন রামমোহন লাইব্রেরিতে আয়োজিত নিখিল
ভারত সোশালিস্ট যুব কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল এই অনুষ্ঠানে নজরুল
উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
২৯-৩১ ডিসেম্বর (শনি-সোম ১৪-১৬ পৌষ) এই তিন দিন পার্ক সার্কাস ময়দানে ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনের শেষের দিন (৩১
ডিসেম্বর), নজরুল পূর্বে রচিত 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু' গানটি পরিবেশন
করেন।
ডিসেম্বর মাসের এই কর্মব্যস্তার ভিতরে নজরুল কৃষ্ণনগরের বাস ছেড়ে কলকাতার নলিনীকান্ত
সরকারের জেলিয়াটোলায় বাসায় সপরিবারে চলে আসেন। এখানে নানা রকম অসুবিধার
কারণে তিনি সওগাত পত্রিকার ১১ ওয়েলসলি স্ট্রিটে অফিসের নিচ তলায় উঠে
আসেন। পরে তিনি এই বাসা ছেড়ে ৮/১ পানবাগান লেনে উঠে আসেন।
এই মাসে প্রকাশিত নতুন কবিতা
-
গানের আড়াল। ধূপচ্ছায়া পত্রিকার 'অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৫' সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
চক্রবাক
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এই মাসে প্রকাশিত পূর্বে রচিত কবিতা
-
ভোরের পাখি। সওগাত
পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩৩৫। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল-"নিখিল-বঙ্গ
মুসলিম-যুবক সম্মিলনের উদ্বোধনী সঙ্গীত"।
সন্ধ্যা
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জানুয়ারি ১৯২৯ (১৭ পৌষ-১৮ মাঘ ১৩৩৫)
গত মাসে নজরুল ৮/১ পানবাগান লেনে নতুন বাসা নিয়েছিলেন। ২ জানুয়ারি (বুধবার ১৮ পৌষ
১৩৩৫) আব্দুল কাদিরকে একটি চিঠি লেখেন। [আব্দুল কাদের-কে লেখা
পত্র]
৬ তারিখে (রবিবার
২২ পৌষ ১৩৩৫) নজরুল চট্টগ্রামে যান। নজরুলের এটি ছিল চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বারের ভ্রমণ। এখানে
তিনি হবীবুল্লাহ বাহার ও শামসুন নাহার-এর তামাকুমণ্ডির বাসায় আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।
৭ জানুয়ারি (সোমবার ২৩ পৌষ ১৩৩৫), নজরুল চট্টগ্রাম ভিক্টোরিয়া ইসলামি হোস্টেলে
মুসলমান শিক্ষা সমিতির (মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি), ত্রিশতম প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী
উৎসবের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং উক্ত সভার সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির ভাষণে তিনি
হিন্দু-মুসলামনের ঐক্যের কথা বলেন। বুলবুল পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩৪৩' সংখ্যায় এই
বক্তৃতা প্রকাশিত হয়েছিল 'মুসলিম সংস্কৃতি চর্চা' শিরোনামে।
এবারে নজরুলের চট্টগ্রামের আশপাশের অঞ্চল জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি ঘোড়া চড়ে পাহাড়ি পথে ঘুরে
বন-সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। সীতাকুণ্ডু পাহাড়ে গিয়েছেন। স্থানীয়
তরুণদের সাথে আড্ডা দিয়েছেন। এবারের
চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম ভ্রমণের সময় চট্টগ্রামের বুলবুল সোসাইটি থেকে তাঁকে তিনি সংবর্ধনা
দেওয়া হয়। কোনো কোনো দিন ঘরের
বাইরে না বেরিয়ে, ঘরোয়া পরিবেশে আড্ডা ও গানের জলসা বসিয়েছেন। এই আসরে আসতেন
স্থানীয় বিশিষ্ট্য সাহিত্য ও সঙ্গীত পিপাসুরা। এরই মাঝে খান বাহাদুর আব্দুল আজিজের সমাধিতে শ্রদ্ধা
জানিয়েছেন এবং কবি নবীনচন্দ্র সেনের স্মৃতিবার্ষিকীতে যোগদান করেছেন। নবীনচন্দ্র
সেনের স্মরণে তিনি রচনা করেন একটি কবিতা। এটি হলো-'
১১ জানুয়ারি (শুক্রবার, ২৭ পৌষ ১৩৩৫), চট্টগ্রামের কাট্টলী ইউনিয়ন ক্লাবের
উদ্যোগে নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সভায় স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রী
সঙ্গীতের মাধ্যমে নজরুলকে বরণ করেন এবং তাঁকে মাল্যদান করেন। সভার সভাপতিত্ব করেন
দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রাক্তন সুপারেন্টেন্ডেন্ট ও চট্টগ্রামের প্রথম মুসলিম
প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা এসলামাবাদ প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আজিজুর রহমান। এই সভায়
নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া তিনি ইন্দু-মুসলমানের সম্রীতি নিয়ে তিনি প্রায়
দুই ঘণ্টা বক্তৃতা দেন। এই সভায় নজরুলের বিরুদ্ধে অমূলক কুৎসার নিন্দা করা হয়। একই
সাথে কলকাতায় নজরুলের সংবর্ধনার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
২৫ জানুয়ারি (শুক্রবার, ১২ মাঘ ১৩৩৫), চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদে সাহিত্যানুরাগী আলম
ভাইদের (মাহবুব-উল আলম, দিদারুল আলম, ওহীদুল আলম প্রমুখ) বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
২৬ জানুয়ারি (শনিবার, ১৩ মাঘ ১৩৩৫), এই পরিবারের পক্ষ থেকে নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া
হয়। এই দিনই নজরুল চট্টগ্রাম থেকে সন্দীপ সফরে যান।
চট্টগ্রামে থাকাকালে নজরুল
চক্রবাক ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের বেশ কিছু কবিতা
ও গান রচনা করেছিলেন।
- কবিতা।
-
স্তব্ধরাতে।
ধূপচ্ছায়া পত্রিকার 'মাঘ ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
কুহেলিকা
মোয়াজ্জিন পত্রিকার 'মাঘ ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি। রচনার স্থান ও কাল:
চট্টগ্রাম, ২৪-১-২৯ (বৃহস্পতিবার ১১ মাঘ ১৩৩৫)। কালিকলম পত্রিকার 'চৈত্র ১৩৩৫'
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
ওগো ও চক্রবাক
[চট্টগ্রাম ৬-২৬ জানুয়ার ১৯২৯]।পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
কর্ণফুলী।
চট্টগ্রাম ৬-২৬ জানুয়ার ১৯২৯। সাপ্তাহিক আত্মশক্তি]। পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
-
শীতের সিন্ধু [চট্টগ্রাম ৬-২৬ জানুয়ার ১৯২৯] । পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
- গান
- ওরে মাঝি ভাই ও তুই কি দুখ্ পেয়ে কূল হারালি
[তথ্য]
নাটকটির রচনার স্থান ও কাল চট্টগ্রাম '২৪.১.১৯২৯',
(বৃহস্পতিবার, ১১ মাঘ ১৩৩৫), [সূত্র: ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর নজরুল সঙ্গীত নিরদেশিকা]।
চোখের চাতক প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ।
ভাটিয়ালি-কার্ফা]
- কি হবে লাল পাল তুলে
[তথ্য]
গানটির রচনার স্থান ও কাল চট্টগ্রাম '২৪.১.১৯২৯',
(বৃহস্পতিবার, ১১ মাঘ ১৩৩৫), [সূত্র: ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর নজরুল সঙ্গীত নিরদেশিকা]।
চোখের চাতক প্রথম সংস্করণ [কার্তিক ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ।
- তোমায় কূলে তুলে বন্ধু [তথ্য]
সওগাত পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
২৬ জানুয়ারি (শনিবার, ১৩ মাঘ ১৩৩৫), নজরুল চট্টগ্রাম থেকে তাঁর বন্ধু মুজফ্ফর আহমদের জন্মস্থান
সন্দ্বীপ সফরে যান।
এই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন মুজফ্ফর আহমদ ভাইপো এবং চ্ট্টগ্রামের কলেজের উচ্চ
মাধ্যমিকের ছাত্র আব্দুল মুকতাদির এবং সলিমুল্লাহ চৌধুরী নামক জনৈক যুবক।
চট্টগ্রাম থেকে এঁরা একটি জাহাজে সন্দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছান। পরে জাহাজ থেকে
একটি ছোট নৌকায় করে সন্দীপে পৌঁছান। তাঁকে
সন্দ্বীপ ডাক বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করা
হয়েছিল।
২৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার, ১৬ মাঘ ১৩৩৫), সন্দ্বীপ কার্গিল মাধ্যমিক স্কুলের মাঠে
নজরুলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রী প্রসন্নকুমার মোক্তার।
সন্দীপবাসীর পক্ষ থেকে নজরুলকে মানপত্র দেওয়া হয়। মানপত্রটি পাঠ করেছিলেন মোহাম্মদ
ওয়ালীউল্লাহ। এই সভয় নজরুল সন্দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থানীয় মানুষের সাহসিকতা,
আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। বক্তৃতা শেষে তিনি তাঁর স্বরচিত, চল্ চল্ চল্, দুর্গম গিরি
কান্তার মরু, চাষি ধর কষে লাঙল, ও ভাই জেলে ওঠ রে এবার ঠেলে প্রভৃতি গান পরিবেশন করে
শোনান। এই সফরে তিনি মুজফ্ফর আহমদের গ্রামের বাড়ি মুসাগ্রামে যান।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তাঁর 'নজরুল-জীবনী' গ্রন্থের চতুর্দশ অধ্যায়ে (জাতীয় সংবর্ধনা)
লিখেছেন-
'...সন্দ্বীপে তিনি মোট চারদিন ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি সন্দীপ নিয়ে পূর্ব
বাংলার লোক কাহিনী অবলম্বনে গীতিনাট্য 'মধুমালা'
রচনা করেছিলেন। এই নাটকের কয়েকটি চরিত্র, মধুমালা (সন্দ্বীপের রাজকুমারী),
তিলোত্তমা (সন্দ্বীপের রাণী), তাম্বুল রাজা (সন্দ্বীপের রাজা) ইত্যাদি।
৩০শে জানুয়ারি (বুধবার, ১৭ মাঘ ১৩৩৫), নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন।
৩১শে জানুয়ারি (বৃ্হস্পতিবার, ১৮ মাঘ ১৩৩৫), নজরুল কলকাতা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা
স্কুলের বার্ষিক মিলাদ মাহফিলে যোগদানের জন্য ঠাকুরগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এই মাসে রেকর্ডে প্রকাশিত গান
এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত গান
-
সওগাত। মাঘ ১৩৩৫।
- কেন আন ফুলডোর আজি বিদায় বেলা
[তথ্য]
ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ (১৯ মাঘ-১৬ ফাল্গুন ১৩৩৫)
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে (শুক্রবার ১৯ মাঘ ১৩৩৫), নজরুল রেলযোগে
ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছান। স্টেশনে পৌঁছানোর পর মিলাদ মাহফিলের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা
দেওয়া হয়। কলকাতা কর্পোরেশনের সদস্য জালাল উদ্দিন হাশেমী নজরুলের সঙ্গে আসেন। সকাল
৯টায় অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে নজরুল প্রধান অশতিথির ভাষণ দেন। এরপর তিনি 'বিদ্রোহী'
কবিতা আবৃত্তি করেন। রাতে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। নজরুল ঐ নাটক উপভোগ করেন।
২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার ২০ মাঘ ১৩৩৫), ঠাকুর টাউন হলে নজরুলের সম্মানে একটি
অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে নজরুল বক্তৃতা দেন এবং গান পরিবেশন করেন। এই
অনুষ্ঠানের আথিয়েতার দায়িত্বে ছিলেন রায়সাহেব গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও কেরামত আলী মোক্তার।
৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার ২১ মাঘ ১৩৩৫), নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন।
৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার ২২ মাঘ ১৩৩৫), কলকাতা থেকে নজরুল শামসুন নাহারকে চিঠি লেখেন।
[শামসুন নাহার-কে লেখা
পত্র]
৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার ২৬ মাঘ ১৯৩৫) ১১ ওয়েলেসলি স্ট্রিটের সওগাত কার্যালয় থেকে
থেকে নজরুল হবীবুল্লাহ বাহার-কে চিঠি লেখেন। [হবীবুল্লাহ বাহার-কে লেখা
পত্র]
২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ১৬ ফাল্গুন ১৩৩৫), নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদ একটি কৃষক
সম্মেলনে যোগ দিতে কুষ্টিয়ায় যান। এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা হেমন্তকুমার সরকার
সপরিবারের কুষ্টিয়াতে থাকতেন। হেমন্তকুমারের বিশেষ আমন্ত্রণে স্ত্রী প্রমীলা, শাশুড়ি
গিরিবালা দেবী ও পুত্র বুলবুলও কুষ্টিয়া যান। এই অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে আব্দুল
হালিম, গ্রেট ব্রিটেনের কমুনিষ্ট পার্টির সদস্য ফিলিপ স্প্র্যাট ও ত্রিপুরা থেকে
ওয়াসিম উদ্দিন যোগদান করেছিলেন। সম্মেলনে কমিউনিষ্ট ইন্টারন্যাশালের পরামর্শক্রমে
করষক গণসংঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্মেলনে নজরুল কয়েকটি গান পরিবেশন করেন।
সম্মেলন শেষে নজরুল মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে পরিবারের সকলকে পাঠিয়ে দেন। এরপর নজরুল
কয়েকদিনের জন্য কুষ্টিয়ায় থেকে যান।
এই মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত গান
- সওগাত পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ ' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
- ওরে মাঝি ভাই
[তথ্য]
- কেমনে রাখি আঁখি-বারি চাপিয়া
[তথ্য]
-
তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে
[তথ্য]
মার্চ ১৯২৯ (১৭ ফাল্গুন-১৭ চৈত্র ১৩৩৫)
এই মাসের প্রথম সপ্তাহে কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি চেয়ারম্যান
তারাপদ মজুমদারের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় যতীন্দ্রমোহন হলে নজরুলকে সংবর্ধনা দেন।
এরপর তিনি কয়েকদিন কার্পাসডাঙা এবং নিশ্চিন্তপুরে কাটানোর পর কবিভক্তদের আমন্ত্রণে
কুমারখালিতে যান। সেখানে কবিকে যোগেন্দ্রনাথ এন ই স্কুল মাঠে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কবি
সেখানে জাতের নামে বজ্জাতি সব
[তথ্য]
গানটি পরিবেশন করেন। এছাড়া বিদ্রোহী কবিতাটিও আবৃত্তি করেন। সংবর্ধনা শেষে তিনি
কুমারখালিতে কাঙাল হরিনাথের বাড়িতে যান এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর
তিনি হেমন্ত সরকার ও নিশিকান্ত তলাপাত্রের সঙ্গে গড়াই নদীর অন্য পারে হাটাশ হরিপুর
গ্রামে কংগ্রেস ও 'খেলাফত নেতা রেজোয়ান আলীর চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি নদীর
চরে হরিয়াল ও ঘুঘু শিকারে যান।
১৬ই মার্চ (শনিবার, ২ চৈত্র ১৩৩৫), কুষ্টিয়া থেকে বগুড়ার আক্কেলপুরস্থ ইয়ংমেনস
মুসলিম এ্যাসোসিয়েশনের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে যোগদানের
জন্য নজরুল আক্কালপুর রেলস্টেশনে পৌঁছান। স্টেশন থেকে নজরুলকে শোভাযাত্রা-সহ
অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই দিনই তাঁকে নদীতীরবরতী হাটের দক্ষিণের মাঠে বেলা ১টার সময়
সভা শুরু হয়। সভায় তিনি গান পরিবেশন করেন এবং মুসলমান সমাজের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
সম্বন্ধে বক্তৃতা দেন। সন্ধ্যায় সেক্রেটারি আকবর আলীর বাড়িতে গজল গানের জলসায় গান
পরিবেশন করেন।
'বুলবুল'-এর দ্বিতীয় সংস্করণ
১৩৩৫
বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (মার্চ ১৯২৯) এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণে
নূতন ৭টি গান সংযোজিত হয়েছিল। এই সংস্করণের প্রকাশক ছিলেন গোপালদাস মজুমদার, ডি,এম
লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা ৮+১৬+৮০। মূল্য এক টাকা চার
আনা। রাজসংস্করণ দেড় টাকা। এই সংস্করণে 'নতুন গান' বিভাগে নতুন ৭টি গান
সংযোজিত হয়েছিল। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (মার্চ ১৯২৯)
বুলবুল দ্বিতীয় সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত ৪টি নতুন গান
- এ নহে বিলাস বন্ধু
[তথ্য]
- কেন আসিলে যদি যাবে চলি
[তথ্য]
- মুসাফির, মোছ্ রে আঁখি -জল
[তথ্য]
- সাজিয়াছ যোগী বল কার লাগ
[তথ্য]
পূর্বে রচিত ৩টি গান
- কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে
[তথ্য]
সওগাত পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ
১৩৩৪ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
- কেন আন ফুলডোর আজি বিদায় বেলা
[তথ্য]
১৩৩৫ বঙ্গাব্দের ১৯শে অগ্রহায়ণ, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা'য় গানটি রচিত হয়েছিল।
- কেমনে রাখি আঁখি-বারি চাপিয়া
[তথ্য]
সওগাত
পত্রিকার 'ফাল্গুন ১৩৩৫' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই মাসে প্রকাশিত পূর্বের রচিত কবিতা
-
বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি। রচনার স্থান ও কাল:
চট্টগ্রাম, ২৪-১-২৯ (শুক্রবার ১২ মাঘ ১৩৩৫)। কালিকলম পত্রিকার 'চৈত্র ১৩৩৫'
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
এপ্রিল ১৯২৯ (১৮ চৈত্র ১৩৩৫- ১৭
বৈশাখ ১৩৩৬)
এই মাসে নজরুল একরকম কলকাতাতেই কাটান। এই মাসে কোনো রচনার
সন্ধান পাওয়া যায় নি।
১-২৪ মে ১৯২৯ (১৮ বৈশাখ-১০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬)
-
পথচারী। উপাসনা
পত্রিকার 'জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬' সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
চক্রবাক
কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল-মে মাসে আর কোনো
নতুন রচনা প্রকাশের কথা জানা যায় না। ২৯ বৎসর অতিক্রান্ত বয়সের শেষ কয়েকদিন
কলকাতাতেই সপরিবারে ছিলেন।
সূত্র
- কল্লোল যুগ। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। এম.সি সরকার অ্যান্ড সন্স
প্রাইভেট লিমিটেড। আশ্বিন ১৩৫৭
- কাজী নজরুল। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সী
প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-১২। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ
- কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা। মুজফ্ফর আহমদ। ন্যাশনাল
বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলিকাতা-১২।
প্রথম সংস্করণ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫।
- জীবনের জলছবি। প্রতিভা বসু। আনন্দ পাবলিশার্স। পৌষ ১৪১৫।
- নজরুল-জীবনী। রফিকুল ইসলাম। নজরুল ইন্সটিটউট, ঢাকা।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল তারিখ অভিধান। মাহবুবুল হক। বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
জুন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল যখন বেতারে। আসাদুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী।
মার্চ ১৯৯৯।
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। প্রথম-দ্বাদশ খণ্ড [বাংলা
একাডেমী, ঢাকা]
- নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর [কবি নজরুল
ইনস্টিটিউট। আষাঢ় ১৪২৫/জুন ২০১৮]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট,
ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
- বিদ্রোহী-রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী। গোলাম মুরশিদ। প্রথমা,
ঢাকা। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।