জিঞ্জির
		কাজী নজরুল ইসলাম
		
			
				
			
			                   
			আয় বেহেশতে কে যাবি আয় 
	
			
আয় বেহেশতে কে যাবি, আয় 
প্রাণের বুলন্দ দরওয়াজায়,
			‘তাজা-ব-তাজা’-র গাহিয়া গান 
           
    চির-তরুণের চির-মেলায়!
    
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  
			
			যুবা-যুবতির সে দেশে ভিড়,
			সেথা যেতে নারে বুঢ্ঢা পীর,
			শাস্ত্র-শকুন জ্ঞান-মজুর 
যেতে নারে সেই হুরি-পরীর 
           
    শারাব সাকির গুলিস্তাঁয়। 
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  
			
			সেথা হরদম খুশির মৌজ,
			তির হানে কালো-আঁখির ফৌজ,
			পায়ে পায়ে সেথা আর্জি পেশ,
			দিল চাহে সদা দিল-আফরোজ, 
            পিরানে পরান বাঁধা সেথায়।
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  
			
			
			করিল না যারা জীবনে ভুল,
			দলিল না কাঁটা, ছেঁড়েনি ফুল,
			দারোয়ান হয়ে সারা জীবন 
আগুলিল বেড়া, ছুঁল না গুল, –
    
            যেতে নারে তারা এ-জলসায়।
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			বুড়ো নীতিবিদ – নুড়ির প্রায় 
পেল নাকো এক বিন্দু রস 
চিরকাল জলে রহিয়া, হায়! –
			কাঁটা বিঁধে যার ক্ষত আঙুল 
           
    দোলে ফুলমালা তারই গলায়।
    
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			তিলে তিলে যারা পিষে মারে
			অপরের সাথে আপনারে,
			ধরণীর ঈদ-উৎসবে
			রোজা রেখে পড়ে থাকে দ্বারে,
    
            কাফের তাহারা এ-ঈদগায়!–
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			বুলবুল গেয়ে ফেরে বলি
			যাহারা শাসায়ে ফুলবনে
			ফুটিতে দিল না ফুলকলি;
			ফুটিলে কুসুম পায়ে দলি
			মারিয়াছে, পাছে বাস বিলায়!
    
            হারাম তারা এ-মুশায়েরায়!
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			হেথা কোলে নিয়ে দিলরুবা
			শারাবি গজল গাহে যুবা।
			প্রিয়ার বে-দাগ কপোলে গো
			এঁকে দেয় তিল মনোলোভা,
    
            প্রেমের-পাপীর এ-মোজরায়।
			
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
			
			
			আসিতে পারে না হেথা বে-দ্বীন 
মৃত প্রাণ-হীন জরা-মলিন 
নৌ-জোয়ানীর এ-মহফিল
খুন 
			ও শারাব হেথা অ-ভিন,
    
            হেথা ধনু বাঁধা ফুলমালায়!
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			পেয়ালার হেথা শহিদি খুন 
তলোয়ার-চোঁয়া তাজা তরুণ 
আঙ্গুর-হৃদি চুয়ানো গো
			গেলাসে শারাব রাঙা অরুণ।
    
            শহীদে প্রেমিকে ভিড় হেথায়।
    		
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			প্রিয়া-মুখে হেথা দেখি গো চাঁদ,
			চাঁদে হেরি প্রিয়-মুখের ছাঁদ।
			সাধ করে হেথা করি গো পাপ,
			সাধ করে বাঁধি বলির বাঁধ 
           
    এ রস-সাগরে বালু-বেলায়!
            আয় বেহেশতে কে যাবি আয়॥
  			
			
			কলিকাতা
			১ পৌষ, ১৩৩৩