বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম:
বাজ্ল কি রে ভোরের
সানাই নিদ্-মহলার আঁধার-পুরে
বাজ্ল কি
রে ভোরের সানাই নিদ্-মহলার আঁধার-পুরে
শুন্ছি আজান গগন-তলে আঁধার-রাতের মিনার-চূড়ে॥
সরাই-খানার্ যাত্রীরা কি
'বন্ধু জাগো' উঠ্ল
হাঁকি'?
নীড় ছেড়ে ঐ প্রভাত-পাখি
গুলিস্তানে চল্ল
উড়ে'॥
তীর্থ-পথিক্ দেশ-বিদেশের
আর্ফাতে আজ জুট্ল কি ফের,
'লা শরীক আল্লাহু' মন্ত্রের
নাম্ল
কি বান পাহাড় 'তূরে'
॥
আজকে আবার কা'বার পথে
ভিড় জমেছে প্রভাত হ'তে,
নামল কি ফের্ হাজার স্রোতে
'হেরার'
জ্যোতি জগৎ জুড়ে॥
আবার 'খালেদ'
'তারেক'
'মুসা'
আনল কি খুন-রঙিন ভূষা,
আস্ল ছুটে' হাসীন ঊষা
নও-বেলালের শিরিন সুরে॥
-
ভাবসন্ধান: গানটি মূলত আজানের প্রশস্তি।এই গানের শুরু হয়েছে প্রহর ঘোষিত সানাইয়ের ধ্বনির উপমায়।
ভারতীয় ঐতিহ্যে রাজবাড়িতে প্রহর ঘোষণায় সানাইয়ের সুরের
ভূমিকা ছিল। মুসলমানদের কাছে ভোরের আজান যেন রাত্রির শেষ প্রহরের ঘুম-ভাঙানিয়া
সেই সানাইয়ের সুর। রাত্রির শেষ প্রহরে যখন নিদ্-মহলে সবাই ঘুমন্ত, আজানের ধ্বনি যেন ভোরের সানাইয়ের মতো জাগিয়ে তোলে মুসলমানদেরকে তথা ইসলামী-দুনিয়াকে।
যাত্রাপথের ক্ষণিক বিশ্রামের স্থান সরাইখানা। সুফি দর্শনে মানুষের পার্থিব
জীবন-যাপনও এমনি একটি সরাইখানা। নিদ্-মহলার ঘুমন্ত মানুষকে কিম্বা অজ্ঞানে
নিমজ্জিত যাপিত জীবন থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য ভোরে আজান, ভোরের সানাই হয়ে সচকিত
করে তোলে। আজানের আহ্বানে সরাইখানর সহযাত্রীরা হাঁকে 'বন্ধু জাগো'। সে আহ্বানে
জেগে ওঠে জগৎ সংসার, যেন জাগরিত প্রাণ-পাখি তার অজ্ঞানতার নীড় ছেড়ে উড়ে যায়
আধ্যত্মিক গোলাপ-বনের দিকে।
আজানের ভিতরে রয়েছে ইসলামী ধর্মদর্শনের প্রতি ভক্তি, আনুগত্য, জ্ঞান, গৌরব এবং ইতিহাস। কবি এই গানের আজানের ধ্বনির ভিতর এর সবেরই সন্ধান করেছেন। তিনি আজানের ধ্বনিতে দেখতে পান- কাবা-রূপী মসজিদের পানে ছুটে যাওয়ার আধ্যাত্মিক আহ্বান, হেরা পর্বতের নির্জন গুহায় দ্বীনের নবীর জ্যোতির্ময় জ্ঞানের নিদর্শন, ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে শ্রেষ্ঠ সেনাপতি খালিদ, তারিক, মুসার রক্তরঞ্জিত বিষয় নিশান, ইসলাম ধর্মের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলালের আজানের সুন্দর সকালের ছবি, দেশ-বিদেশের হাজিদের আরাফাত ময়দানের জমায়েতের তৃপ্তি, তুর পর্বতে মুসা নবীর কাছে অবতীর্ণ হওয়া 'লা শরীক্ আল্লাহ' (আল্লাহ ভিন্ন উপাস্য নাই) বাণী, কারবালার যুদ্ধের অগণিত শহীদের জ্যোতির্ময় রক্তধারা। এ সবের অনুভব রয়েছে আজানের ধ্বনিতে, যা আসমান-জমিনকে সুসমন্বিত এবং সমুজ্জ্বল করে।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
মোয়াজ্জিন পত্রিকার 'কার্তিক ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ' সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল নিখিল বঙ্গ মুসলিম। যুবক সম্মিলনের উদ্বোধন সঙ্গীত।
উল্লেখ্য ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের
১৩ই অক্টোবর (আশ্বিন) কলকাতার আলবার্ট হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল 'নিখিল বঙ্গ মুসলিম
যুবক সম্মেলন'। এই অনুষ্ঠানে নজরুল গানটি পরিবেশন করেছিলেন। ধারণা করা
হয়, এই গানটি তিনি এই অনুষ্ঠানের জন্য রচনা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের
বয়স ছিল- ২৯ বৎসর ৫ মাস।
-
পত্রিকা:
- মোয়াজ্জিন। কার্তিক ১৩৩৫ (অক্টোবর-নভেম্বর ১৯২৮)।
- সওগাত। অগ্রহায়ণ ১৩৩৫ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২৮)
- গ্রন্থ:
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। ২
সেপ্টেম্বর ১৯৩০। জাতীয় সঙ্গীত ৬। মাঢ়-কাওয়ালী। পৃষ্ঠা: ২৬-২৭ ]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা
ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭] নজরুল গীতিকা। জাতীয় সংগীত। ২২। মান্দ-কাওয়ালী। পৃষ্ঠা: ১৮৫-১৮৬]
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮] গান ৭।
রাগ মান্দ। পৃষ্ঠা ২-৩]
- নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। স্বরলিপিকার:
সুধীন দাশ। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ [নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫] ৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা ৪৯-৫৩
- সন্ধ্যা
(কাব্যগ্রন্থ)।
- প্রথম সংস্করণ। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ (১৯২৯)। শিরোনাম: ভোরের সানাই
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। চতুর্থ খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা মে ২০১১।
ভোরের সানাই।। পৃষ্ঠা: ৬৭]
- রেকর্ড:
এইচএমভি। জুন ১৯৩২
(জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৩৯)। এন ৭০০৫। শিল্পী: মোহাম্মদ কাসেম। [নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি (প্রথম খণ্ড)। প্রথম প্রকাশ, তৃতীয় মুদ্রণ
[কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। অগ্রহায়ণ ১৪০২। নভেম্বর ১৯৯৫। সপ্তম গান] [নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ইসলামী গান [আজান-বন্দনা]
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গান (মান্দ রাগের সুরাবলম্বনে)।
- রাগ: মান্দ (মাণ্ড)। [নজরুল-সংগীত সংগ্রহ,
নজরুল গীতিকা]
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: ধর্সা।